সরকার চট্টগ্রামের ৫০ হাজার কৃষক থেকে ধান কিনবেন এবার

সরকার চট্টগ্রামের ৫০ হাজার কৃষক থেকে ধান কিনবেন এবার

সরকার চট্টগ্রামের ৫০ হাজার কৃষক থেকে ধান কিনবেন । আমন ধান সংগ্রহে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ১৮ হাজার ৪৯৮ মে. টন। প্রতি কেজি ধান ২৬ টাকা দরে প্রথমবার ইউনিয়ন ভিত্তিক লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচিত করা হবে । কৃষকদের টাকা ব্যাংক একাউন্টে জমা হবে  দালাল-ফড়িয়াদের কৃষিকার্ড না দেওয়ার পরামর্শ ।

কৃষি অধিদপ্তর আমন ধান ক্রয়ের জন্য ৫০ হাজার কৃষকের তালিকা তৈরি করেছে । মাঠ পর্যায়ে জরিপ চালিয়ে প্রান্তিক কৃষকের এই তালিকা উপজেলা ধান ক্রয় কমিটির কাছে প্রেরণ করা হয়েছে।

আমন মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সরকার। চট্টগ্রাম থেকে ১৮ হাজার ৪৯৮ মে. টন ধান কিনবে সরকার। কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি কেজি ধান ২৬ টাকা দরে কিনবে সরকার। মিল মালিকদের কাছ থেকে আতপ চাল ৩৫ ও সিদ্ধ চাল ৩৬ টাকায় কেনা হবে। আমন ও বোরো মৌসুমে ধান বিক্রি নিয়ে হয়রানির অভিযোগ কৃষকদের। খাদ্য বিভাগ নানা অজুহাতে কৃষকদের ধান ফেরত পাঠানো এবং উৎকোচ দাবি দীর্ঘদিনের। তাই প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার পরামর্শ দিয়ে আসছে সরকার। মাঠ পর্যায়ে জরিপ চালিয়ে প্রকৃত কৃষক ও প্রান্তিক চাষীদের তালিকা তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কৃষি অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, ইউনিয়নভিত্তিক প্রান্তিক চাষীদের তালিকা প্রস্তুত করে উপজেলা ধান ক্রয় কমিটির কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী লটারির মাধ্যমে প্রান্তিক চাষীদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হবে। তিনি বলেন, ধান ক্রয় নিয়ে কেউ যাতে আপত্তি বা অসন্তোষ প্রকাশ করতে না পারে, সেই নির্দেশনা মেনেই কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কর্মকর্তারা তালিকা প্রণয়ন করেছে।
গত বোরো মৌসুমে ধান কেনায় চট্টগ্রামের মধ্যে মডেল উপজেলা মনোনীত হয়েছে আনোয়ারা উপজেলা। কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান কিনেছিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জোবায়ের আহমদ। ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। এবার আমন মৌসুমেও ধান ক্রয়ের কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও সভা করে কৃষকদের সচেতন করার কার্যক্রম শুরু করেছেন তিনি।
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোবায়ের আহমদ বলেন ৭০৬ মে টন ধান ক্রয় করা হবে। কৃষি বিভাগ থেকে ৫ হাজার ২শ কৃষকের তালিকা পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচিত করে ধান কেনা হবে ।

ইউএনও জোবায়ের আহমদ বলেন ধান ক্রয়ের টাকা কার্ডধারী কৃষকদের ব্যাংক একাউন্টে পৌঁছে যাবে। এ ক্ষেত্রে ক্যাশ (নগদ) টাকা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

আমন ও বোরো সংগ্রহ মৌসুমে ধান সংগ্রহে হয়রানিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে কৃষকদের। হয়রানির কারণে বাধ্য হয়ে কম দামে দালাল-ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের কাছে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হয় কৃষকেরা। গত বোরো মৌসুমে খাদ্য বিভাগ ও গুদাম কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ধান-চাল সংগ্রহে অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছিল। এবার যাতে প্রকৃত চাষীদের কাছ থেকে ধান কেনা হয় সেজন্য লটারি ও কৃষি বিভাগের তালিকা ধরে ধান কেনার জন্য সরকারের নির্দেশনা রয়েছে।

জানা যায়, দালাল ও মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে খাদ্য বিভাগে বেশি দামে বিক্রি করে। কৃষকদের কাছ ধরে কার্ড নিয়ে খাদ্য বিভাগে ধান বিক্রি করে দালালেরা। দীর্ঘদিন ধরে এই অভিযোগ চলে আসছে। দালাল ও মধ্যস্বত্বভোগীদের কৃষি কার্ড না দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি বিভাগ।

জেলা খাদ্য বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, চট্টগ্রামে এবার ১৮ হাজার ৪৯৮ মে. টন ধান ক্রয় করা হবে। সন্দ্বীপ উপজেলা থেকে দুই হাজার ৪৩৭ মে. টন। মিরসরাই উপজেলা থেকে দুই হাজার ৮৯ মে. টন। সীতাকুন্ড উপজেলা থেকে ৬১১ মে. টন। ফটিকছড়ি উপজেলা থেকে দুই হাজার ২২৭ মে. টন। হাটহাজারী উপজেলা থেকে ৯৫৮ মে. টন। রাউজান উপজেলা থেকে এক হাজার ১৭০ মে. টন। রাঙ্গুনীয়া উপজেলা থেকে এক হাজার ৫৪৫ মে. টন। বোয়ালখালী উপজেলা থেকে ৪৫৭ মে. টন। পটিয়া উপজেলা থেকে এক হাজার মে. টন। চন্দনাইশ উপজেলা থেকে ৮৩৪ মে. টন। লোহাগাড়া উপজেলা থেকে এক হাজার ১০৩ মে. টন। আনোয়ারা উপজেলা থেকে ৭০৬ মে. টন। বাঁশখালী উপজেলা থেকে এক হাজার ৫১৯ মে. টন। কর্ণফুলী উপজেলা থেকে ৩৬১ মে. টন। নগরীর পাঁচলাইশ থানা ১১২ মে. টন। ডবলমুরিং থানা ৪২ মে. টন। পতেঙ্গা থানা থেকে ৭৩ মে. টন।

চট্টগ্রামের সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক (কারিগরি) দোলন দেব বলেন, প্রান্তিক কৃষক ও কৃষি বিভাগের পাঠানো তালিকা ধরে ধান কিনবে উপজেলা ক্রয় কমিটি। প্রথমবারের মতো চলতি মৌসুমে লটারির মাধ্যমে আমন ধান ক্রয় করবে কমিটি। একই সঙ্গে সমতা আনার লক্ষে ইউনিয়নভিত্তিক তালিকা ধরে ধান কেনা হবে।

খাদ্য নিয়ন্ত্রক দোলন দেব বলেন, সরকারের সংগ্রহ করা ধান দীর্ঘদিন গুদামে রাখতে হয়। তাই চিটামুক্ত শুকনো ধান ক্রয় করতে হয়। যাতে গুণগতমান বজায় থাকে। কারণ পররতীতে এসব ধান মিলিং করে চাল করা হবে।