চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সেনাবাহিনী সর্বদা প্রস্তুত - বিএমএতে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধান

চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সেনাবাহিনী সর্বদা প্রস্তুত - বিএমএতে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধান
চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সেনাবাহিনী সর্বদা প্রস্তুত - বিএমএতে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধান

পোস্টকার্ড ডেস্ক।।    

'মুক্তিযোদ্ধার চেতনায় গড়ে ওঠা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বর্তমানে অনেক আধুনিক ও চৌকস একটি বাহিনী। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য আমাদের সেনাবাহিনী এখন সুপশিক্ষিত, দক্ষ ও সর্বদা প্রস্তুত। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের উন্নয়নের জন্য জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলা, পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা বজায় রাখাসহ বিশ্ব পরিমণ্ডলে শান্তি রক্ষা করে বিশ্বব্যাপী সুখ্যাতি ও ভূষিত সুনাম অর্জন করেছে।'

সোমবার (৪ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে অবস্থিত বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির (বিএমএ) ৮৫তম দীর্ঘ মেয়াদী কোর্সের অফিসার ক্যাডেটদের কমিশনপ্রাপ্তি উপলক্ষে আয়োজিত রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন। 

সেনাপ্রধান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও প্যারেডের অভিবাদন গ্রহণ করেন। এরপর তিনি কৃতি ক্যাডেটদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। আয়োজনের শেষভাগে বাবা-মা বা অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের রেংক ব্যাজ পরিয়ে দেন। কমিশন প্রাপ্তির পরপরই নতুন অফিসারদের মধ্যে ব্যাপক আনন্দ উচ্ছ্বাস দেখা যায়। 

আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে সেনাপ্রধান বলেন, সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিজেদের সর্বোচ্চ আন্তরিকতায় কর্তব্য, নিষ্ঠা ও নিরপেক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই অগ্রযাত্রা অখ্যাত থাকবে। এই সেনাবাহিনী একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে দেশের মানুষের সেবায় সর্বদা নিয়োজিত থাকবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ও সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ একটি আধুনিক ও সমৃদ্ধ সেনাবাহিনীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এই স্বাধীন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব অক্ষত রাখার জন্য একটি দক্ষ ও আধুনিক সেনাবাহিনী তৈরি করা ছিল অপরিহার্য। এই প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে কুমিল্লা সেনানিবাসে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই বঙ্গবন্ধু মিলিটারি একাডেমি আজ বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশে ও বিদেশে সুনাম অর্জন করেছে। এই একাডেমি থেকে প্রশিক্ষিত অফিসারদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ দেশের সীমানা পেরিয়ে বহির্বিশ্বে ও ভূয়সি প্রশংসা অর্জন করেছে। 

নতুন অফিসারদের উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা সকলের জন্য অত্যন্ত গর্বের ও সৌভাগ্যের বিষয়। বিশ্বমানের এই একাডেমিতে দীর্ঘ তিন বছর কঠোর প্রশিক্ষণ শেষে আজ তোমরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কাঙ্খিত কমিশনের দ্বারপ্রান্তে। আমি নিশ্চিত আজকের এই দিনটি তোমাদের জন্য অনন্য স্মরণীয় দিন। তোমাদের জীবনের বিরল এই অর্জনের জন্য তোমাদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। 

নবীনদের দিকনির্দেশনা দিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, একজন সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে সবসময় তোমাদের কার্যকর নেতৃত্বের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সততা, কর্তব্য, নিষ্ঠা ও আনুগত্যতাসহ সকল দায়িত্ব আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করবে। এজন্য তোমাদের অধীনস্থ সৈনিকদের সঙ্গে সুদীর্ঘ বন্ধন তৈরি করতে হবে। সহমর্মিতা দিয়ে যেকোনো পরিস্থিতিতে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। দলগত চেতনা চর্চার মাধ্যমে অধীনস্থদের সুখ দুঃখের সঙ্গে তাদের পরিচালনা করার নিরন্তন চেষ্টা তোমাদের মধ্যে থাকতে হবে। যেকোনো সিদ্ধান্ত উপস্থাপনার ক্ষেত্রে দেশপ্রেমকে সর্বত্র গুরুত্ব দিবে। ব্যক্তিগত স্বার্থ সবার পরে। মনে রাখবে, তোমাদের উপর অর্পিত হবে ভবিষ্যৎ সেনাবাহিনীর গুরুদায়িত্ব। তোমাদের সেই নেতৃত্বের জন্য জানাই অভিনন্দন। 

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আজকের যে অর্জন রয়েছে তাকে ধরে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া তোমাদের দায়িত্ব। তোমাদের নবীন নেতৃত্বে এই সেনাবাহিনীকে আরো আধুনিক ও যোগ্য গড়ে তুলতে হবে। আমার বিশ্বাস তোমরা যে ধরনের উন্নত ও যুগপৎ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছো যা তোমাদের ভবিষ্যতে সেনাবাহিনীর কল্যাণে সঠিক ও দূরদর্শিতা সিদ্ধান্ত গ্রহণে আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলবে। আশা করি তোমরা গত দিনের চেয়ে আজ ও পরবর্তীতে ভালো করার প্রয়াস নিয়ে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। নিজেদের জ্ঞান ক্রমান্বয়ে সমৃদ্ধ করতে থাকবে। আমি দীঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তোমাদের নবীর নেতৃত্বে এবং সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় জাতির গর্বের প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রত্যাশা পূরণের সফল হবে।

আন্ত: বাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানায়, দীর্ঘ তিন বছরের কঠোর সামরিক প্রশিক্ষণ শেষে এই মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজের মাধ্যমে ৮৫তম বিএমএ দীর্ঘ মেয়াদী কোর্সের সর্বমোট ২৫০ জন অফিসার ক্যাডেট এবং এক বছরের সামরিক প্রশিক্ষণ শেষে ৫৮তম বিএমএ স্পেশাল কোর্সের ৩ জন অফিসার ক্যাডেট এবং ৭ জন ট্রেইনি অফিসার কমিশন লাভ করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের মধ্যে ২২৮ জন পুরুষ ও ৩১ জন মহিলা অফিসার রয়েছেন। এছাড়াও কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের মধ্যে ১ জন শ্রীলংকান অফিসার রয়েছেন, যিনি নিজ সেনাবাহিনীতে যোগদান করবেন।

সর্ব বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য ব্যাটালিয়ন সিনিয়র আন্ডার অফিসার এ এম সানজিদ ৮৫তম বিএমএ দীর্ঘ মেয়াদী কোর্সে সেরা চৌকস ক্যাডেট বিবেচিত হন এবং অসামান্য গৌরবমন্ডিত ‘সোর্ড অব অনার' অর্জন করেন। এছাড়া কোম্পানি সিনিয়র আন্ডার অফিসার রিয়াদ হোসেন সামরিক বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য ‘সেনাবাহিনী প্রধান স্বর্ণপদক’ অর্জন করেন এবং শ্রীলংকার অফিসার ক্যাডেট হারসা নিমেসা তিলান্হা হিথারচ্ছি বেস্ট ওভারসিজ ক্যাডেট এওয়ার্ড অর্জন করেন। পরে ক্যাডেটরা আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ করেন এবং পিতা-মাতা ও অভিভাবরা নবীন অফিসারদের র‌্যাংক-ব্যাজ পরিয়ে দেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধান অতিথি বিএমএ প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছালে আর্মি ট্রেনিং এন্ড ডকট্রিন কমান্ডের জিওসি, ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও চট্টগ্রাম এরিয়া কমান্ডার এবং বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির কমান্ড্যান্ট তাকে অভ্যর্থনা জানান। অনুষ্ঠানে উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দূতাবাসের কূটনৈতিক, আমন্ত্রিত অতিথি, সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের পিতা-মাতা ও অভিভাবক উপস্থিত থেকে এ বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন। -সময়ের আলো

খালেদ / পোস্টকার্ড ;