আল্লাহ দুই মেয়েকে ফিরিয়ে দিয়েছেন, এতেই আমি খুবই খুশি: আবু বকর

আল্লাহ দুই মেয়েকে ফিরিয়ে দিয়েছেন, এতেই আমি খুবই খুশি: আবু বকর
আল্লাহ দুই মেয়েকে ফিরিয়ে দিয়েছেন, এতেই আমি খুবই খুশি: আবু বকর

বিশেষ প্রতিবেদক।।

যখন প্রাইভেট কারের ওপর কন্টেনার ছিল তখন আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। চোখে বারবার ভাসছিল আমার দুই মেয়ের চেহারা। অনেক শোকরিয়া আল্লাহ্‌রকাছে তিনি আমার দুই মেয়েকে ফিরিয়ে দিয়েছেন, এতে আমি খুবই খুশি।

একটু সুস্থতা অনুভব করলে কথার ফাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডের বিছানায় শুয়ে কথাগুলো বলছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী আবু বকর। তিনি তার ২০ বছরের প্রবাস জীবনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডেরা দুবাই থেকে অনেকবার দেশে ফিরেছেন । প্রতিবারই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আনন্দে কেটেছে সময়। কিন্তু এবার দেশে ফেরার তিন ঘণ্টার মধ্যেই মুখোমুখি হন ভয়ঙ্কর এক অভিজ্ঞতার ।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির লেলাং ইউনিয়নের বাসিন্দা আবু বকরের কাছে এ যেন মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা । ছোট মেয়ে আদিলাকে (২) কোলে নিয়ে প্রাইভেট কারের পেছনের সিটে বসেন আবু বকর। পাশে ছিল বড় মেয়ে আদিবা (৬)। ড্রাইভারের পাশের সিটে বসেন শ্বশুর মোহাম্মদ মুছা। জামাইকে বিমানবন্দর থেকে আনার জন্য ভোর ছয়টার ফটিকছড়ির মাইজভান্ডার দরবার এলাকার নিজ বাড়ি থেকে দুই নাতনিকে নিয়ে রওয়ানা দেন মুছা। সকাল ৮টা ১৫ মিনিটের দিকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছান। বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে সকাল পৌনে ৯টার দিকে জামাই আবু বকরের সঙ্গে সাক্ষাত হয়। দীর্ঘদিন পর দুই মেয়েকে কাছে পেয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলেন আবু বকর। সে জানতো না এর ঘণ্টাখানেকের মধ্যে এই উচ্ছ্বাস বিষাদে পরিণত হবে ।

আবু বকর আরো বলেন, প্রায় দুই ঘণ্টা কন্টেনারের চাপার মধ্যে মাথা নিচু করে কোলে ছোট মেয়েকে নিয়ে কোনোভাবে শুয়ে ছিলাম। দুর্ঘটনার পর কারের ফাঁকা অংশ দিয়ে বড় মেয়ে আদিবা বের হয়ে যায়। পরবর্তীতে যখন কারের ওপর থেকে কন্টেনারটি সরানো হচ্ছিল, তখন বুকে অসম্ভব চাপ অনুভব করেছিলাম। মনে হচ্ছিল এই বুঝি মরে গেলাম। প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছি ঘাড়ে ও পায়ে। আমরা আল্লাহর ইচ্ছায় বেঁচে গেছি, এটাই এখন বোনাস জীবন।

আবু বকরের শ্বশুর মোহাম্মদ মুছা বলেন, চেয়েছিলাম আমি একা যেতে। কিন্তু বড় নাতনি বায়না ধরেছে সেও যাবে। তাই তার সাথে ছোটটাকেও নিয়ে গেলাম। কিন্তু আসার পথেই তো বড় দুর্ঘটনা হয়ে গেল। তবে আল্লাহর রহমত না থাকলে আমাদের বাঁচার সম্ভাবনা ছিল না। প্রায় দুই ঘণ্টা কারে আটকে ছিলাম। প্রতিনিয়ত মৃত্যুর কথা মনে পড়েছে। আমার ঘাড়, দুই হাতের বাহু ও পায়ে ব্যথা পেয়েছি। আমি ড্রাইভারের পাশে ছিলাম। ড্রাইভারও ব্যথা পেয়েছে। আমরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছি, শুনেছি সে অন্য কোথাও চিকিৎসা নিয়েছে।

অন্যদিকে প্রবাসী আবু বকরের বড় ভাই মোহাম্মদ হাসান বলেন, সকাল ১১টার দিকে খবর পাই তাদের গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। দুর্ঘটনার একটি ছবি ফেসবুকে দেখে আমরা কান্নাকাটি শুরু করে দিই। কারণ কন্টেনার চাপায় কারের অবস্থা খুব খারাপ দেখাচ্ছিল। তাদের জীবিত পাওয়ার আশা এক প্রকার ছেড়ে দিয়েছিলাম আমরা । তবে আল্লাহ তাদেরকে ফিরিয়ে দিয়েছেন আমাদের কাছে । 

খালেদ / পোস্টকার্ড ;