শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের শোনার ক্ষমতা ফিরে পেতে চট্টগ্রাম সিএমইচ-এ বিনামূল্যে কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সেবা চালু

শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের শোনার ক্ষমতা ফিরে পেতে চট্টগ্রাম সিএমইচ-এ বিনামূল্যে কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সেবা চালু
শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের শোনার ক্ষমতা ফিরে পেতে চট্টগ্রাম সিএমইচ-এ বিনামূল্যে কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সেবা চালু

স্বাস্থ্য ডেস্ক ।।

চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য সুখবর দিল । যেখানে শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের শোনার ক্ষমতা ফিরে পেতে চালু করা হয়েছে কক্লিয়ার সেন্টার। ইতোমধ্যে চালু হওয়া এ সেন্টারের মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করে শোনার ক্ষমতা ফিরেও পেয়েছেন বহু সংখ্যক রোগী। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শ্রবণ শক্তি নেই এমন ৩১ জনের কানে সফল অস্ত্রোপচার হয় চট্টগ্রাম সিএমএইচ’র কক্লিয়ার সেন্টারে। যাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি তাদের শোনার ক্ষমতা ফিরে পেয়েছেন। আছেন স্বাভাবিকও। বাকিরাও ফলোআপে রয়েছেন। যাদের ডিভাইস স্থাপন করা হলে শোনার ক্ষমতা ফিরে পাবেন বলে আশাবাদ চিকিৎসকদের। মূলত সার্জারির মাধ্যমে বিনামূল্যেই কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট ভিভাইস বসানোর ফলে এসব প্রতিবন্ধী রোগীরা তাদের শোনার ক্ষমতা ফিরে পেয়েছেন। এছাড়া এ সেন্টারে আরও ৮৬ জন শ্রবণ প্রতিবন্ধী রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যাদের ধাপে ধাপে পরীক্ষা নিরীক্ষাশেষে অস্ত্রোপচার করা হবে। এর বাইরে ৫১ জন রোগী অপেক্ষায় রয়েছেন, যাদের ধাপে ধাপে অস্ত্রোপচারের আওতায় আনা হবে। এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) ক্লাসিফাইড ইএনটি বিশেষজ্ঞ, হেড-নেক ও কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সার্জন ডা. লে. কর্নেল মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, শ্রবণ প্রতিবন্ধী বা বধির বলতে কিছুই নেই। মূলত মানুষের কানের তিনটি অংশের একটি অন্তঃকর্ণের ভেতর শামুকের মতো দেখতে যে নালিটি থাকে, সেখানে বালুকণার চেয়ে ছোট কিছু কোষ থাকে। আর এই কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে মানুষ আর শুনতে পায় না। কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট নামের এই যন্ত্রটি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে মানুষ তার শোনার ক্ষমতা ফিরে পেতে পারে।

বিনামূল্যে পাওয়া যাবে সেবা : কক্লিয়ার ডিভাইস বসাতে যেখানে পার্শ্ববর্তী ভারতে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা খরচ হয়। কিংবা সিঙ্গাপুরে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা অথবা ইউরোপ-আমেরিকায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে। সেখানে প্রায় ৭ লাখ টাকা মূল্যের এ ডিভাইসটি বিনামূল্যে বসানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছে সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এমন কার্যক্রম চালু হয়েছে চট্টগ্রাম সিএমএইচ’র কক্লিয়ার সেন্টারে।

যেভাবে সেবা পাবেন : চট্টগ্রাম সিএমএইচ-এ কক্লিয়ার সেন্টারের আওতায় এমন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। যেখানে এমন গুরুত্বপূর্ণ সার্জারি করতে অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি যুক্ত রয়েছে। আছে পৃথক কক্লিয়ারি অপারেশন থিয়েটার, থেরাপি ইউনিট, ইএনটির বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা নিরীক্ষাসহ যাবতীয় সব সেবা। এর বাইরে ঢাকার সিএমএইচ-এ বহু আগেই এমন সেবা কার্যক্রম চলমান। বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের শ্রবণ প্রতিবন্ধীরা সেবাটি চট্টগ্রাম সিএমএইচ-এ গ্রহণ করতে পারবেন। প্রয়োজন হলে সরাসরি সকাল আটটা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত কক্লিয়ার সেন্টারে এসে অথবা ০১৭৬৯-২৪৩০০৪ এ নম্বরে যোগাযোগ করে সেবাটি গ্রহণ করতে পারবেন সহজেই।

কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট কী? : কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট বা বায়োনিক ইয়ার হলো শ্রবণ সহায়ক অত্যাধুনিক এমন একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস। যা মারাত্মক বা সম্পূর্ণ বধির ব্যক্তিকে শব্দ শুনতে সহায়তা করে। ইমপ্লান্ট চালুর পর বধির ব্যক্তির কাছে তখন পৃথিবীটা শব্দময় হয়ে ওঠে। কক্লিয়ার ইমপ্লান্টের দুটি অংশ- একটি অংশ কানের বাইরে থাকে, যে অংশে থাকে মাইক্রোফোন, স্পিচ প্রসেসর ও ট্রান্সমিটার এবং আরেকটি অংশ কানের ভেতরে থাকে, যে অংশে রিসিভার স্টিমুলেটর এবং ইলেকট্রোড থাকে। সাধারণত ৮ বছরের নিচে সকল জন্মগত বধির বা শ্রবণ প্রতিবন্ধী এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ১০ বছরের মধ্যে শোনার ক্ষমতা হারানো ব্যক্তিরা কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট সার্জারির মাধ্যমে শোনার ক্ষমতা ফিরে পেতে পারে।