মনে হচ্ছিল আমি মৃত্যুর কাছে,শরীরের ৪০ স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা নিয়ে দুঃসহ স্মৃতির কথা বললেন তথ্যমন্ত্রী

মনে হচ্ছিল আমি মৃত্যুর কাছে,শরীরের ৪০ স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা নিয়ে দুঃসহ স্মৃতির কথা বললেন তথ্যমন্ত্রী
মনে হচ্ছিল আমি মৃত্যুর কাছে,শরীরের ৪০ স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা নিয়ে দুঃসহ স্মৃতির কথা বললেন তথ্যমন্ত্রী

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি ।। 

তথ্য ও সমপ্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ভাগ্যক্রমে ভয়াল ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছিলেন । ভাগ্যক্রমে সেদিন বেঁচে গেলেও শরীরে গ্রেনেডের ৪০ স্প্লিন্টার এখনো তাকে যন্ত্রণা দিচ্ছে। শরীরে স্প্লিন্টার নিয়ে দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন রাঙ্গুনিয়া থেকে নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ৪৯১ জন সাক্ষীর মধ্যে তিনি অন্যতম রাজসাক্ষী। মর্মান্তিক এই স্মৃতির কথা স্মরণ করতে গিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা যে ট্রাকে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছিলেন সেই ট্রাকের পাশেই আমি দাঁড়িয়েছিলাম। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই নেত্রীকে বাঁচাতে মানব দেয়াল তৈরি করেন নেতৃবৃন্দ। এ সময় দেখি আমার সমস্ত শরীর রক্তে ভিজে গেছে। শরীরে প্রচণ্ড যন্ত্রণা। রাস্তায় লুটিয়ে পড়ি। অ্যাডভোকেট রুবিনা মিরাসহ কয়েকজন আমাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে নিয়ে যান। তখনো আমার সারা শরীরে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অনেকক্ষণ বিনা চিকিৎসায় ফ্লোরেই পড়েছিলাম। ডাক্তাররা যখন আমার চিকিৎসা শুরু করেন, তখন আমি তীব্র যন্ত্রণা ছাড়া কিছুই অনুভব করতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল মৃত্যু আমার কাছে চলে এসেছে। একটু পরেই হয়তো আমি মরে যাব।

তিনি বলেন, ওই ঘটনায় আমার শরীরে কমপক্ষে দুই শতাধিক স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়। ঢাকার সিকদার মেডিকেলে আট দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৯ আগস্ট উন্নত চিকিৎসার জন্য বেলজিয়ামে যাই। হাসপাতালে আমার দুই মাসের চিকিৎসা চলে। সেখানে একাধিক অপারেশন করে দেড় শতাধিক স্প্লিন্টার শরীর থেকে বের করা হয়। তবে শরীরে এখনো ৪০টি স্প্লিন্টার রয়ে গেছে, যা একাধিক অপারেশনেও বের করা সম্ভব হয়নি।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, এতগুলো স্প্লিন্টার শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছি। তারপরও ভালো লাগে যে সেদিন নেত্রীর পাশে দাঁড়াতে পেরেছিলাম। ঘাতকদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিতে পেরেছিলাম। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী কোনোদিন অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে না। বিপদের দিনে ভয়ে পিছিয়ে যায় না। সেটারই প্রমাণ আমার শরীরে বিঁধে থাকা ৪০টি স্প্লিন্টার। এসব স্প্লিন্টার বের করতে গেলে নার্ভ কেটে বের করতে হবে। এতে মৃত্যুও হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এগুলো বের করিনি।

হাছান মাহমুদ বলেন, নারকীয় সেই দিনটির পর ১৮ বছর পার হয়েছে। কিন্তু এখনো দিনটির একটি মুহূর্তের কথাও ভুলিনি। আমরা শোককে শক্তিতে পরিণত করে রাজনীতি করে গেছি। সাফল্যও এসেছে। যারা রাজনীতির বদলে ষড়যন্ত্র করেছেন, যারা হত্যার রাজনীতি করেছেন তারা কেউ আমাদের থামাতে পারেনি। বরং নিজেরা থেমে গেছেন।

তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সহকারী ড. হাছান মাহমুদ ছাত্রজীবনে চট্টগ্রাম মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। দেশে পড়াশোনা শেষ করে বেলজিয়ামে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। সে সময় আওয়ামী লীগ নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যাকাণ্ড নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তৎকালীন জোট সরকারের দমন পীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় বহির্বিশ্বে কূটনৈতিক তৎপরতা চালান তিনি।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;