আজ বিভীষিকাময় ২১ আগস্ট, এখনও পলাতক ১২ আসামি

আজ বিভীষিকাময় ২১ আগস্ট, এখনও পলাতক ১২ আসামি
আজ বিভীষিকাময় ২১ আগস্ট, এখনও পলাতক ১২ আসামি

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

আজ রক্তাক্ত বিভীষিকাময় ২১ আগস্ট । জাতি আজ শ্রদ্ধাবনতচিত্তে ইতিহাসের ভয়াবহতম গ্রেনেড হামলার ১৮তম বার্ষিকী পালন করবে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের এই দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী শান্তিপূর্ণ সমাবেশে নজির বিহীন গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। আক্রান্ত হন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই ঘটনায় দলীয় নেতাকর্মীরা মানববর্ম রচনা করে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করলেও গ্রেনেডের আঘাতে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ মোট ২৪ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারান। বাংলাদেশের ইতিহাসে ২১ আগস্ট একটি নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের ভয়াল দিন। 

বাসস জানায় : পরবর্তী সময়ে গ্রেনেড হামলার বিচারের রায়ে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি জোট সরকারের মন্ত্রী ও সরকারের কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলে যে ওই সরকারের প্রত্যক্ষ মদতেই হামলাটি পরিচালিত হয়েছিল। ইতিহাসের এই জঘন্যতম গ্রেনেড হামলার ১৮তম বার্ষিকীতে বাঙালি জাতি শ্রদ্ধাবনতচিত্তে হামলায় নিহতদের স্মরণ করবে। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনটি পালনে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার। সেদিন ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতি বিরোধী’ শান্তি সমাবেশের আয়োজন করেছিল তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। সন্ত্রাস বিরোধী শান্তি সমাবেশের আগে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে স্থাপিত অস্থায়ী ট্রাকমঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা শেষ হওয়ার পরপরই তাকে লক্ষ্য করে উপর্যুপরি গ্রেনেড হামলা শুরু হয়। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে থাকে একের পর এক গ্রেনেড। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুহুর্মুহু ১৩টি গ্রেনেড বিস্ফোরণের বীভৎসতায় মুহূর্তেই মানুষের রক্ত-মাংসের স্তুপে পরিণত হয় সমাবেশস্থল। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পরিণত হয় এক মৃত্যুপুরীতে। স্পিন্টারের আঘাতে মানুষের হাত-পাসহ বিভিন্ন অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। সভামঞ্চ ট্রাকের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায় রক্তাক্ত নিথর দেহ। লাশ আর রক্তে ভেসে যায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউর সামনের পিচঢালা পথ। নিহত-আহতদের জুতা-স্যান্ডেল ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। ভেসে আসে শত শত মানুষের গগন বিদারী আর্তচিৎকার। বেঁচে থাকার প্রাণপণ চেষ্টারত মুমূর্ষুদের কাতর-আর্তনাদসহ অবর্ণনীয় মর্মান্তিক সেই দৃশ্য।

২১ আগস্টের রক্তাক্ত ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। পরে সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ জনে। হামলায় আওয়ামী লীগের চার শতাধিক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়ে শরীরে স্পিন্টার নিয়ে আজও মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আহত হয়েছিলেন বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা। এখনও অনেক নেতাকর্মী সেদিনের সেই গ্রেনেডের স্পিন্টারের মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। অনেক নেতাকর্মীকে তাৎক্ষণিক দেশে-বিদেশে চিকিৎসা করালেও তারা এখন পর্যন্ত পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেননি।

আপিল দ্রুত নিষ্পত্তিতে বেঞ্চ চায় রাষ্ট্রপক্ষ : বিডিনিউজ জানায়, দেড় যুগ আগে ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন এবং তাদের করা আপিলের ওপর ‘অগ্রাধিকার’ ভিত্তিতে শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষে চার বছর আগে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল রায় দিলেও উচ্চ আদালতে আপিল শুনানি আটকে আছে অন্যান্য মামলার দীর্ঘ জটের কারণে। অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলছেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ মামলাটির রায় নিয়ে উচ্চ আদালতে আপিল নিষ্পত্তির জন্য ‘অগ্রাধিকার’ ভিত্তিতে শুনানির যে আবেদন করা হয়েছে, তাতে প্রধান বিচারপতি একটি বেঞ্চ ঠিক দেবেন বলে তিনি আশা করেছেন। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি আশা করব- অবকাশকালীন ছুটির আগে হয়ত সম্ভব হবে না, অবকাশের পরেই হয়ত উনি বেঞ্চ ঠিক করে দেবেন। যে বেঞ্চ ঠিক করবেন, সেখানে আমরা শুনানি আরম্ভ করব।’

এখনও পলাতক ১২ আসামি ঃ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ১২ আসামি এখনও পলাতক। এর মধ্যে ছয় জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি হয়েছিল। তবে রাজনৈতিক মামলার কথা বলে দুজন নোটিশ থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিতে পেরেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, পলাতকদের গ্রেফতারে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।

চলতি বছরেই র‌্যাব এই মামলার অন্যতম দুই আসামি হরকাতুল জিহাদের নেতা শফিকুল রহমান ও আব্দুল হাইকে গ্রেফতার করেছে। গত বছর ইকবালকে গ্রেফতার করা হয়। বাকিদের অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র জানায়, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় এখনও যারা পলাতক তারা হলেন— বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন আহমদ, হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ, জঙ্গিনেতা মাওলানা তাজউদ্দিন, মহিবুল মুত্তাকিন, আনিসুল মোরসালিন, মোহাম্মদ খলিল, মাওলানা লিটন ওরফে দেলোয়ার হোসেন ওরফে জোবায়ের, জাহাঙ্গির আলম বদর ও রাতুল আহমেদ বাবু।

সূত্র জানায়, পলাতক আসামিদের মধ্যে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করা হয়। তবে রাজনৈতিক মামলার অজুহাত দেখিয়ে তারেক রহমানের পক্ষে আবেদন করে সেই নোটিশ নামিয়ে ফেলা হয়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল থেকে তারেক রহমান লন্ডনে বাস করছেন। ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর শাহ মোফাজ্জাল হোসেন কায়কোবাদের বিরুদ্ধেও ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি হয়। তিনিও একই অজুহাতে আবেদন করে রেড নোটিশ প্রত্যাহার করিয়েছেন। বর্তমানে কায়কোবাদ কিছুদিন সৌদি আরব ও কিছুদিন আরব আমিরাতে বাস করছেন বলে জানা গেছে।

২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি হয়। সম্প্রতি হারিছ চৌধুরী ঢাকার পান্থপথ এলাকার একটি বাসায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় মারা যান বলে একাধিক গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর খাতায় এখনও তিনি পলাতক।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, পলাতক অন্য আসামিদের মধ্যে লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার কানাডায়, মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন আহমদ যুক্তরাষ্ট্রে, মোহাম্মদ হানিফ ভারত কিংবা দুবাই, জঙ্গিনেতা তাজউদ্দিন দক্ষিণ আফ্রিকায়, মহিবুল মুত্তাকিন ও আনিসুল মোরসালিন ভারতের তিহার জেলে রয়েছেন বলে জানা গেছে। বাকিদের মধ্যে মোহাম্মদ খলিল, মাওলানা লিটন ওরফে দেলোয়ার হোসেন ওরফে জোবায়ের, জাহাঙ্গির আলম বদর ও রাতুল আহমেদ বাবুর অবস্থানের বিষয়ে কোনও তথ্য জানা যায়নি।

 

চট্টগ্রামে কর্মসূচি : ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ সকল শহীদদের স্মরণে ১৮তম বার্ষিকীতে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন চত্বরে আজ রোববার বিকাল ৩টায় এক বিশাল জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সকল কর্মকর্তা, সদস্যবৃন্দ, থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের সকলস্তরের নেতাকর্মীদের যথা সময়ে উপস্থিত থাকার জন্য চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি বিশেষভাবে আহ্বান জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, একই কর্মসূচি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন ১৫টি থানা ও ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড পর্যায়ে পালনের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;