থেমে থেমে এখনো জ্বলছে আগুন, ঝুঁকিমুক্ত ঘোষণা 

থেমে থেমে এখনো জ্বলছে আগুন, ঝুঁকিমুক্ত ঘোষণা 
থেমে থেমে এখনো জ্বলছে আগুন, ঝুঁকিমুক্ত ঘোষণা 

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।। 

৭০ ঘণ্টারও বেশি সময় পার হলেও এখনো আগুন জ্বলছে বেশ কয়েকটি কন্টেনারে। তবে ঘটনার  বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে গতকাল বিএম কন্টেনার ডিপোকে ঝুঁকিমুক্ত ঘোষণা করে বলা হয়েছে ভয়াল আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। গতকাল মঙ্গলবার ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এই কন্টেনার ডিপো থেকে দুইটি লাশ উদ্ধার করেছে। লাশ দুইটি পুরোপুরিই পুড়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে এদের একটি ফায়ার ম্যানের, অপরটি নিরাপত্তারক্ষীর। গতকাল উদ্ধারকৃত দুইটি লাশসহ এই ঘটনায় সর্বমোট ৪৩ জনের প্রাণহানি ঘটলো। সেনাবাহিনী এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বিএম কন্টেনার ডিপোর আগুন পুরোপুরি নিভানোর চেষ্টা করার পাশাপাশি পোড়া কন্টেনারগুলো থেকে ভালো কন্টেনারগুলোকে আলাদা করছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায় , ঘটনার ৭০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও বিএম কন্টেনার ডিপোর আগুন পুরোপুরি নিভেনি। ডিপোর ভিতরে রক্ষিত বিভিন্ন কন্টেনারে গতরাতেও আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিএম কন্টেনার ডিপোকে ঝুঁকিমুক্ত ঘোষণা করলেও নিরাপত্তার স্বার্থে এখনো বাইরের কাউকে ডিপোতে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস যৌথভাবে আগুন নিভানোর চেষ্টা করছে। এদিকে গতকাল সকালে ডিপো থেকে আরও দুটি দেহের পোড়া অংশ উদ্ধার করা হয়েছে। কুমিল্লা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান দুইটি মরদেহ পাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, ধ্বংসস্তূপ সরানোর সময় দুটি পোড়া লাশের কিছু অংশ উদ্ধার করা হয়েছে। পোশাক দেখে মনে হচ্ছে, তাদের একজন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী, আরেকজন নিরাপত্তা কর্মী। তবে এ বিষয়ে আমরা এখনও নিশ্চিত নই। গতকাল উদ্ধারকৃত দুইটিসহ এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৩ জনের প্রাণহানি ঘটলো। এদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের ৯ কর্মী রয়েছেন। ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, ডিপোর কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকসহ দুই শতাধিক মানুষ আগুনে পুড়ে গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। তারা চমেকসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

গতকাল বিকেলে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সাংবাদিকদের বলেন, ২৮টি কন্টেনারের ভেতরে থেমে থেমে আগুন জ্বলছে। উত্তপ্ত হয়ে আছে কন্টেনারগুলো। এগুলোতে ক্রমাগত পানি ছিটানো হচ্ছে। উক্ত ২৮টি কন্টেনারের মধ্যে রাসায়নিক পণ্য ভর্তি কন্টেনারও রয়েছে। তবে ওগুলোর মধ্যে ঠিক কোন কন্টেনারগুলোতে রাসায়নিক পণ্য বা কোনটিতে তৈরি পোষাক তা চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে না বলেও তারা জানান। তারা বলেন, কিছু কিছু কন্টেনারের দরোজা খুলে ভিতরের আগুন নিভানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বিশেষ করে তৈরি পোষাক রয়েছে এমন বেশ কিছু কন্টেনারের আগুন নিভানোর জন্য প্রচুর পানি ছিটানো হচ্ছে। তারা বলেন, আমরা জানতে পেরেছি যে ১২টি কন্টেনারে ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক পণ্য রয়েছে। তবে ওই ১২টি কন্টেনার চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।

সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল আলম দুলাল জানান, আগুন নেভাতে রাতভর কাজ করেছেন তারা। মঙ্গলবার ভোররাতের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল। কিন্তু কন্টেনারের ভিতরে থাকা পণ্যে আগুন রয়েছে। ওখান থেকে আবারো আগুনের বিস্তার ঘটছে। তবে বুধবারের মধ্যে আগুন পুরোপুরি নিভানো সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এদিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গতকাল বিএম কন্টেনার ডিপোকে ঝুঁকিমুক্ত ঘোষণা করেছেন। তারা বলেছেন, ঘটনার ৬১ ঘণ্টা পর আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। তারা বলেন, এই ডিপো থেকে আর বড় ধরনের কোনো বিপদ হওয়ার আশঙ্কা নেই। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ১৮ ব্রিগেডের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল আরিফুল ইসলাম হিমেল সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে উপরোক্ত মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, গত রোববার সকাল থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের দুই শতাধিক সদস্য ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে কাজ করছেন। ডিপোতে এসে আমরা ফায়ার সার্ভিসকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। এখন যে আগুনটা আছে তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের কিছুটা সময় বেশি লেগেছে। কারণ এলাকাটা অনেক বড়। প্রায় ২৬ একর জায়গার উপর এই ডিপো। এখানে ৪ হাজারেরও বেশি কন্টেনার রয়েছে। কন্টেনারগুলো একটির সঙ্গে অপরটি লাগানো ছিল, কোথাও টু হাই থ্রি হাই কন্টেনার ছিল। আমরা কন্টেনারগুলো নিচে নামিয়ে কাজ করেছি। এতে আমাদের অনেক বেশি সময় লেগেছে।

সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা বলেন, জ্বলন্ত কন্টেনারের পাশে কিছু ভালো কন্টেনার ছিল। সেগুলো আমরা পৃথক করে রেখেছি। যাতে আগুনটা আর না বাড়ে এবং ক্ষয়ক্ষতি না হয়। সবার নিরলস চেষ্টায় আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। এখান থেকে আর কোনোভাবে আগুন ছড়ানোর সুযোগ নেই। এই ডিপো নিয়ে শংকার আর কিছু নেই বলেও তিনি আশ্বস্ত করেন।

উল্লেখ্য, গত শনিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ সীতাকুণ্ডের কাশেম জুট মিলস সংলগ্ন বিএম কন্টেনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আগুন বিস্তার ঘটলে এক পর্যায়ে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ভর্তি কন্টেনারে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে বিশালকারের এই কন্টেনার ডিপো একেবারে লন্ডভন্ড হয়ে যায়। কেঁপে উঠে পুরো এলাকা। স্মরণকালের ভয়াবহতম এই অগ্নিকাণ্ড এবং বিস্ফোরণের ঘটনায় ৪৩ জনের প্রাণহানি ছাড়াও আহত হয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ । 

খালেদ / পোস্টকার্ড ;