ইজারাদারদের সাথে চসিকের বৈঠক, পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে কড়া নির্দেশনা

ইজারাদারদের সাথে চসিকের বৈঠক, পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে কড়া নির্দেশনা
ইজারাদারদের সাথে চসিকের বৈঠক, পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে ইজারাদারদের কড়া নির্দেশনা দিলেন মেয়র

মোরশেদ তালুকদার ।।

দুইটি পশুর মাঝখানে তিন ফুট দূরত্ব নিশ্চিতসহ নগরের কোরবানি পশুর হাটগুলোর ইজারাদারদের জন্য ১৩টি করণীয় নির্ধারণ করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে একইসঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে হাট ব্যবস্থাপনায় একটি মডিউল তৈরি করেছে। এতে সহযোগিতা করেছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) স্থাপত্য বিভাগের তিন শিক্ষার্থী। যা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোভিড-১৯ এর ঝুঁকি অনেকাংশেই কমানো সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, এবার নগরে তিনটি স্থায়ীসহ সাতটি পশুর হাট বসবে। চাঁদ দেখা স্বাপেক্ষে আগামী সোমবার অথবা মঙ্গলবার থেকে হাটগুলোতে বিকিকিনি শুরু হওয়ার কথা। স্থায়ী হাটগুলোতে গত পহেলা বৈশাখ এক বছরের জন্য ইজারাদার নিয়োগ করেছে চসিক। হাটগুলো হচ্ছে- সাগরিকা, বিবিরহাট ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার। অস্থায়ী চারটি বাজারের মধ্যে তিনটি বাজারে গত ৮ জুলাই দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইজারাদার চূড়ান্ত করা হয়। এগুলো হচ্ছে- কমল মহাজন হাট পশু বাজার, সল্টগোলা গরুর বাজার ও ৪১ নং ওয়ার্ডস্থ বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টিকে গ্রুপের খালি মাঠ। বাকি হাট তথা কর্ণফুলী পশুর বাজারে আজ মঙ্গলবার ইজারাদার চূড়ান্ত করার কথা। এদিকে তিনটি অস্থায়ী বাজারের জন্য ইজারাদার চূড়ান্ত করলেও গতকাল পর্যন্ত চুক্তি করেনি চসিক। জেলা প্রশাসন থেকে চসিককে দাপ্তরিক প্রক্রিয়ায় সম্মতি না দেয়ায় সেটি আটকে আছে। আবার জেলা প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছে। অবশ্য ইতোপূর্বে মন্ত্রণালয় থেকে বাজার বসানোর বিষয়ে সবুজ সংকেত পেয়েছে চসিক। সেই আলোকে দরপত্র কার্যক্রমও সম্পন্ন করা হচ্ছে। এছাড়া গতকাল তিনটি স্থায়ী বাজারের ইজারাদার এবং অস্থায়ী বাজারের জন্য চূড়ান্ত করা ইজারাদারদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। বৈঠকে সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতসহ বিভিন্ন করণীয় মেনে চলার জন্য ইজারাদারদের নির্দেশ দেন মেয়র।
গতকালকের বৈঠকে চুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থী ফারহান আরিফ রহমান, তাসফিয়া তাসনিম ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সৈয়দ ইমাম বাকের কোরবানি পশুর হাট ব্যবস্থাপনার মডিউল পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে তুলে ধরেন। এতে দূরত্ব মেনে পশু রাখা, ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যকার দূরত্ব নিশ্চিত, আলাদা প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ, জীবাণুনাশক চেম্বার স্থাপন, নিরাপত্তাকর্মীদের অবস্থান, হ্যান্ড সেনিসটাইজার স্ট্যান্ড স্থাপনসহ বিভিন্ন বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
টিম লিডার তাসফিয়া তাসনিম বলেন, আমরা পশুর হাটকে নতুনভাবে চিন্তা করেছি, যেখানে সামাজিক দূরত্ব, হাত ধোয়া ও জীবাণুমুক্তকরণের মত বিধিগুলো ডিজাইনকে ধাবিত করেছে। এখানে গরুর ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের জন্য থাকছে সুনির্দিষ্ট জায়গা, যাতে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব। চলাচলের পথে যেন কোন বাধার সৃষ্টি না হয় সেজন্য ক্রেতাদের গরু পর্যবেক্ষণের জন্য প্রদান করা হয়েছে বিশেষ জায়গা। হাটে আসা পশুগুলোকে রাখা হবে নির্দিষ্ট সংখ্যক আয়তাকার মডিউলের ভেতর, যেগুলো নালা দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকবে যেন চলাচলের পথের সাথে পশু রাখার স্থানের পরিস্কার পার্থক্য থাকে এবং পথগুলো যেন শুকনো থাকে। প্রত্যেক মডিউলের কেন্দ্রীয় স্থানে দূর-দুরান্ত থেকে আসা পশু বিক্রেতারা অবস্থান করতে পারবেন, রাখতে পারবেন পশুর জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী। এছাড়াও হাটে হাত ধোয়ার জন্য থাকছে নির্দিষ্ট জায়গা। হাটে মানুষ জীবাণুমুক্তকরণ চেম্বার পার করেই প্রবেশ করতে পারবেন এবং যেখানে মাস্ক অবশ্যই বাধ্যতামূলক।
চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মুফিদুল আলম বলেন, চুয়েটের শিক্ষার্থীদের মডিউল আমাদের পছন্দ হয়েছে এবং সেটা অনুসরণ করার জন্য ইজারাদারদের নির্দেশনা দিয়েছি। তারা মূলত সামাজিক দূরত্ব কিভাবে নিশ্চিত করবে, গরু রাখার ক্ষেত্রে মানুষ কিভাবে থাকবে, ক্রেতা কোথায় থাকবে, বিক্রেতা কোথায় থাকবে, স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন।
বাজার বসানো নিয়ে এখনো জেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি না পাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনুমতি হয়তো দুয়েকদিনের মধ্যে পাব। ইজারাদার নিয়োগে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া, ইজারাদারদের সাথে চুক্তিসহ অন্যান্য কার্যক্রমগুলোর জন্য সময় প্রয়োজন। তাই এসব কাজ আমরা সম্পন্ন করছি। যদি ফাইনালি জেলা প্রশাসন না করে দেয় তাহলে আমরাও বাদ দিয়ে দিবো।
এদিকে চসিকের রাজস্ব সূত্রে জানা গেছে, ইজারাদারদের জন্য ১৩টি করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে। চূড়ান্ত চুক্তির সময় তা বাস্তবায়নে ইজারাদারদের নির্দেশনা দেয়া হবে। করণীয়গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- পশুর দূরত্ব নিশ্চিত, ঠিকাদারদের পক্ষে স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা, বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার, সকাল থেকে বাজার বসানো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম পরিচালনা।
এ প্রসঙ্গে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, সংক্রমণ রোধে কোরবানি পশুর হাটগুলোর ইজারাদারদের জন্য একটা গাইডলাইন ঠিক করেছি। মিটিং করে তাদের সেটা বলেও দিয়েছি। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েও সেটা প্রকাশ করবো। প্রতিবছর বিক্রেতারা প্রথমদিকে গরুর দাম আকাশচুম্বি হাঁকায়। শেষ দিকে বিক্রি করবে এমন মনোভাব থাকে। এবার প্রথমদিন থেকেই যেন বিক্রি করার মানসিকতা পোষণ করে। এতে ক্রেতাকে বারবার বাজারে যেতে হবে না এবং শেষ দিকে যে ভিড় হয় সেটা হবে না। বিষয়টি বিক্রেতাদের জানানোর জন্য ইজারাদারদের বলে দিয়েছি। একটি গরু থেকে আরেকটি গরুর দূরত্ব এবং জোন করে বিক্রি করতে হবে। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে যেন পরষ্পরের সংস্পর্শে না আসে। প্রতিদিন সকালে বাজারের বর্জ্য পরিষ্কার করা হবে এবং সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে মশার ওষুধ দেয়া হবে। প্রবেশমুখে হ্যান্ড স্যানিটাইজার থাকবে। আমাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে। ক্রেতারা যেন অহেতুক বাজারে বাজারে না ঘুরে, বয়স্ক ও শিশুদের বাজারে নিয়ে না যায়, এক পরিবার থেকে সর্বোচ্চ দুইজনের বেশি যেন না যায় সে ব্যাপারে জনগণের প্রতি আহবান জানাবো।
শিফটিং বাজার বসানোর পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিবার বিকেল থেকে বাজার বসতো। এবার সকাল থেকে বসবে। এতে একসঙ্গে বহু লোকের ভিড় এড়ানো যাবে। ক্রেতাদেরও বলবো তারা যেন পুরোদিন ভিড় না করে। সামগ্রিক বিষয়গুলো আমরা লিফলেট আকারে প্রচার করবো। পত্রিকায়ও বিজ্ঞপ্তি দিবো।