সীতাকুন্ডের ছাতা কারিগরদের কাটছে এখন ব্যস্ত সময়

সীতাকুন্ডের ছাতা কারিগরদের কাটছে এখন ব্যস্ত সময়

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

সাধারণত একটু ভিন্নরকম থাকে বর্ষাকালে প্রকৃতির আচরণ । এই রোদ, এই ঝুম বৃষ্টি। কখনো থেমে থেমে, আবার কখনো একটানা মুষলধারে হচ্ছে ভারী বর্ষণ। তবে রোদ-বৃষ্টি যাই হোক এ সময় ছাতাই যেন হয়ে উঠে মানুষের প্রিয়সঙ্গী। এ সময়ে ঘরের বাইরে পা রাখতে প্রথমেই যা সঙ্গে নিতে হয় তা হলো ছাতা। আর সে ছাতা যদি ফুটো কিংবা ভাঙা হয় তবেই যত বিপত্তি। আর এই বিপত্তির কবল থেকে পরিত্রাণ পেতে ছুটে যেতে হয় ছাতা সারাইয়ের কারিগরদের কাছে। আর তাই বর্ষায় ভরসা এসব কারিগররা। বছরের অন্য সময়গুলোতে ছাতা মেরামতের কাজ না থাকলেও বর্ষার এ মৌসুমটুকুতে পুরো দস্তুর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা। কারন যাদের বাসা বা বাড়িতে নষ্ট ছাতা রয়েছে তারা মেরামত করাতে ছুটে আসেন কারিগরের কাছে। এ যেন এক যুৎসই মৌসুমী কারবার।

ছাতা মেরামতের এই কারবারকে কারিগররা নিজেরাই বলে এটা বর্ষাকালের অস্থায়ী কারবার। বিশেষ করে লেপ-তোষক সেলাইয়ের ধুনকর, জুতা-স্যান্ডেল মেরামতকারী রবিদাস সম্প্রদায়ের লোকজনসহ অন্যান্য পেশার লোকজনও বর্ষায় বৃষ্টি শুরু হলেই এই পেশাতে ঝুঁকে পড়ে। কেননা বৃষ্টির মৌসুম না এলে সাধারণত মানুষ ছাতা ব্যবহার করেন না। বৃষ্টি শুরু হলেই প্রয়োজন পড়ে বাড়িতে রাখা পুরাতন ছাতাটির। প্রায় প্রতিটি পরিবারেই দীর্ঘ ৮ থেকে ১০ মাস অযত্মে অবহেলায় পড়ে থাকা ছাতাটি মেরামত করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় বর্ষায়। ফলে বর্ষা এলেই ছাতা মেরামতের কারিগরদের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। এজন্য সুযোগ বুঝে ছাতার কারিগররা বেশি দামে মেরামত ও ছাতা সারাইয়ের কাজটি সম্পন্ন করে থাকেন। আর এ কারণেই তারা অন্য পেশা ছেড়ে এসে অস্থায়ী এবং লাভজনক এই মৌসুমী পেশায় যুক্ত হন।

বর্ষাকালে ছাতার ব্যবহার অন্য সময়ের তুলনায় বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে বাড়ে ছাতাকারিগরদের ব্যস্ততা। ব্যতিক্রম নয় সীতাকুন্ড উপজেলাও। বৃষ্টির কারণে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মানুষ ভিড় করছে নষ্ট ছাতা মেরামত করতে। উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে ছাতা কারিগরদের ব্যস্ততা চোখে পড়ে। টানা বৃষ্টিতে অন্য ব্যবসায়ীরা বসে অলস সময় পার করলেও ব্যস্ত সময় পার করছে ছাতা কারিগররা।

সীতাকুন্ডের বড়দারোগাহাট, টেরিয়াল, বাঁশবাড়ীয়া, বাড়বকুন্ড, কুমিরা, বারাউলিয়া, কদমরসুল, মাদামবিবির হাট, ভাটিয়ারী, ফৌজদার হাট , সলিমপুর ফকিরহাটসহ  বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অন্য সময়ের তুলনায় ছাতা কারিগরদের ব্যস্ততা চোখে পড়ার মত। তারা নাওয়া-খাওয়া ভুলে রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছেন। তবে ছাতা মেরামতের সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় একটু বেশি টাকা নিচ্ছে বলে অভিযোগ জনসাধারণের।

ফৌজদার হাট এর ছাতা কারিগর আবুল হোসেন জানান, টানা বৃষ্টিতে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে পুরনো ও নষ্ট ছাতা মেরামত করতে কারিগরদের কাছে ছুটছে সাধারণ মানুষ। তিনি দৈনিক ১৫ থেকে ২০টি ছাতা মেরামত করে থাকেন। ছাতা মেরামত করে দৈনিক এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা আয় করে থাকেন। তবে বছরের অন্য সময় ব্যস্ততা তেমন থাকে না।

সীতাকুন্ড পৌরসভায় ছাতা মেরামত করতে আসা জাহাঙ্গীর আলম জানান, তার ঘরে দুটি ছাতা নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি ছাতাগুলো মেরামত করতে এসেছেন। একটি ছাতা মেরামত করতে ১০০ টাকা নিচ্ছে ছাতার কারিগর সালাউদ্দীন। কারিগর সালাউদ্দীন জানান, তার বাড়ি রংপুর। তিনি প্রত্যেক বছর বৃষ্টির সময় চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলা উপজেলায় ছাতা মেরামত করতে বের হন। প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০টি ছাতা মেরামত করে থাকেন। এতে দৈনিক দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা আয় করেন।

সলিমপুর ফকিরহাট বাজারের ভ্রাম্যমাণ ছাতা কারিগর নুরুল আবচার জানান, ছাতা মেরামত করা তার পৈতৃক পেশা। তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে ছাতা মেরামত করে থাকেন। তিনি দৈনিক প্রায় ৩০টি ছাতা মেরামত করে থাকেন। তা দিয়ে বৃষ্টি মৌসুমে ভালোই চলে তার সংসার। তবে অন্য সময়ে অলস বসে থাকতে হয়।

ভাটিয়ারী বাজার এলাকায় অবস্থান করা ছাতা কারিগর শাহেদ উদ্দীন  ও নাঈম উদ্দীন বলেন, এখন ছাতা মেরামতের ভরা মৌসুম। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটানা মেরামতের কাজে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। আয়-রোজগারও হচ্ছে ভালো। বেশ কয়েক বছর ধরে তারা এ কাজের সাথে জড়িত। এছাড়াও বাড়বকুন্ড এলাকার শফিক মিয়া , লতিফপুর এলাকার আক্তার উদ্দীনসহ অনেকেই ছাতা মেরামতের কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। তবে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন বলে জানান তারা।