সীতাকুণ্ডে অপহৃত কালামকে পাওয়া গেল হাসপাতালে, উদ্ধারে পাহাড়ে চষে বেড়াচ্ছিল পুলিশ

সীতাকুণ্ডে অপহৃত কালামকে পাওয়া গেল হাসপাতালে, উদ্ধারে পাহাড়ে চষে বেড়াচ্ছিল পুলিশ
সীতাকুণ্ডে অপহৃত কালামকে পাওয়া গেল হাসপাতালে, উদ্ধারে পাহাড়ে চষে বেড়াচ্ছিল পুলিশ

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।। 

সীতাকুণ্ডে অপহৃত গাড়ি চালক আবুল কালামকে উদ্ধারে গত শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত বাড়বকুণ্ডের গহীন পাহাড় চষে বেড়াচ্ছিল সীতাকুণ্ড থানা পুলিশের সদস্যরা। গতকালও র‌্যাব ও পুলিশের যৌথ অভিযান হয়েছে ওই পাহাড়ে। অথচ অপহৃত কালাম তিন দিন ধরে চট্টগ্রাম নগরের বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২২ জুন) রাত সাড়ে এগারোটায় সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রামের পিএইচপি গ্লাস কারখানার সামনে থেকে ৫-৬ জনের একটি দুস্কৃতিকারী দল কালামকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে ৮০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে আনতে গিয়ে অপহৃত হন আরও তিন নারী।

তাদেরকে পাহাড়ে নিয়ে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িতরা অপহৃত গাড়ি চালক আবুল কালামের পূর্ব পরিচিত বলেও জানিয়েছে পুলিশ। অপহরণকারী চক্রের ৪ সদস্যের মধ্যে আবুল বশর নামে একজন পুলিশের হাতে আটক হলেও বাকি আরও ৩ জন এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন। তারা সবাই সীতাকুণ্ডের স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধিদের অনুসারী বলে জানা গেছে।

গ্রেপ্তার অপহরণকারী চক্রের সদস্য মো. বশর প্রকাশ আবুল বশর (৩০) বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের নতুন পাড়ার মো. আব্দুলের ছেলে। পলাতক আসামিরা হলেন, বাড়বকুণ্ডের চৌধুরী পাড়া এলাকার জালাল আহম্মদের ছেলে সাদ্দাম হোসেন, একই ইউনিয়নের হাশেমনগর এলাকার রুহুল আমিনের ছেলে দেলোয়ার হোসেন, ৭ নং ওয়ার্ড নতুন পাড়া এলাকার মনির হোসেনের ছেলে ইউসুফ মুন্না।

জানা যায়, গত ২২ জুন রাত সাড়ে এগারোটায় সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ডের পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস কারখানার সামনে ঢাকামুখী মহাসড়কে একটি যাত্রীবাহী বাস হঠাৎ বিকল হয়ে যায়। এসময় যাত্রীরা নেমে এদিক-সেদিক হাঁটাচলা শুরু করে। এসময় ওই বাসের যাত্রী আবুল কালামকে তুলে নিয়ে যায় ৫-৭ জনের একটি দুষ্কৃতিকারী দল। পরে তাদেরকে পিএইচপি গ্লাস কারখানার পেছনের গহীন পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তার পরিবারের কাছে ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করলে কালামের ২ বোন যথাক্রমে মরিয়ম বেগম ও শাহানা এবং তার স্ত্রী জাহানারা বেগম ৮০ হাজার টাকা নিয়ে পরদিন ভোরে সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ডের সেবা ফিলিং স্টেশনের সামনে পৌঁছালে মুক্তিপণের টাকা গ্রহণের পর অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা তাদেরকেও অপহরণ করে পাহাড়ে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে কালামের ভাইয়ের স্ত্রী টিপু বেগমের কাছে পুনরায় ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হলে কালামের ভাইয়ের স্ত্রী টিপু বেগম টাকা যোগাড় করতে না পেরে বিষয়টি পুলিশকে জানায়।

এই ঘটনায় গত ২৩ জুন সকালে টিপু বেগম ৪ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর অপহৃত ৩ নারীকে উদ্ধার করা হয়। অপহরণকারীরা ওই তিন নারীকে বেড়ধক পিটিয়েছে বলে তাদেরকে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এরপরও কালামকে জীবিত উদ্ধারে গহীন পাহাড়ে চষে বেড়াচ্ছিল পুলিশ ও র‌্যাব। চারদিন ধরে অভিযান চললেও কালামকে পাওয়া যায়নি। শেষমেশ গতকাল সোমবার বিকেলে পুলিশ জানতে পারে কালাম বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার বিকাল ৫টা ১১ মিনিটে নিজে এসে অর্থোপেডিক সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি হন কালাম। ভর্তি ফরমে তাঁর ঠিকানা লেখা হয়েছে চট্টগ্রাম নগরের হাজি ক্যাম্প এলাকায়।

পুলিশের ধারণা, কালাম বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালে আছেন বিষয়টি তার পরিবার জানত। কিন্তু তারা কিছু একটা লুকাচ্ছে পুলিশের কাছে। কালাম কীভাবে হাসপাতালে গিয়েছে তা জানার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

জানতে চাইলে মামলার বাদী অপহৃত কালামের ভাইয়ের স্ত্রী টিপু বেগম বলেন, কারা, কেন, কীভাবে আমার দেবরকে অপহরণ করেছে তা আমি জানি না। আমি অপহরণ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছুই জানি না। আমরা তাদের থেকে আলাদা হয়ে অন্য এলাকায় থাকি।

পরে অভিযান চালিয়ে অপহরণকারী চক্রের সদস্য আবুল বশরকে (৩০) গ্রেপ্তার করে সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ। তার ভাষ্য, অপহৃত গাড়ি চালক আবুল কালাম তাদের পূর্বপরিচিত।

সীতাকুণ্ড থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন , আবুল বশরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার তদন্ত অব্যাহত আছে ।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;