মুচলেকা দিয়েও পাহাড় কাটে কবির ষ্টীল

মুচলেকা দিয়েও পাহাড় কাটে কবির ষ্টীল
মুচলেকা দিয়েও পাহাড় কাটে কবির ষ্টীল

পরিবেশ আদালতে পাহাড় কাটবেনা বলে মুচলেকা দিয়েও নিয়মিতভাবে পাহাড় কাটছে কেএসআরএম-এমন অভিযোগ ও তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৬ জানুয়ারি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের কারখানায় পরিদর্শনে যান পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালকের নেতৃত্বে একটি দল। এসময় ভেতরে ঢুকতে বাধা দেন কারখানার ফটকে থাকা নিরাপত্তাকর্মীরা।

পরবর্তীতে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ারের কার্যালয়ে ৩১ জানুয়ারি, সোমবার দুপুরে সরকারি কর্তব্য পালনে বাধাদানের বিষয়টি কর্মচারীদেরও ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেন কবির ষ্টীলের সিইও মেহেরুল করিম ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, সরকারি কর্তব্যপালনে বাধাদান মারাত্মক অপরাধ। সরি বললেই এর সমাধান হয়ে যাবে না। কেএসআরএমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কি ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেএসআরএম যে অপরাধ করেছে তা ফৌজদারি এবং পরিবেশ আইন-দুইয়ের মধ্যেই পড়ে। আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি কোন আইনে গেলে তাদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা যায়।

উপপরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, কারখানার ভেতরে পাহাড় কেটে সমতল করা হচ্ছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত গিয়েছিলাম। পরিবেশ আইনে কারখানার অভ্যন্তরে প্রবেশের অধিকার থাকলেও প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। কেএসআরএমের নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মীদের দাবি, কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র ছাড়া প্রবেশ করা যাবে না।

তিনি আরও বলেন, তাদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। ভবিষ্যতে কেউ যাতে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার সাহস না পায় এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে কেএসআরএমের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এর আগে একই অপরাধ কেএসআরএম বারবার করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য কেএসআরএমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিমকে মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

তবে কেএসআরএমের মিডিয়া অ্যাডভাইজার মিজানুল ইসলাম জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ারের সাথে সাক্ষাৎ করতে কেএমআরএমের একটি প্রতিনিধি দল সেখানে গিয়েছিল।

জানা গেছে, এর আগে গত বছরের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর ছুটির দিনে পাহাড় কাটছিল কেএসআরএম। খবর পেয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মুফিদুল আলম পরিদর্শনে গেলে তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এর পর আরও কয়েকবার সেখানে অভিযানের জন্য দল পাঠানো হয়। সর্বশেষ ২৬ জানুয়ারি উপপরিচালক ফেরদৌস আনোয়ারের নেতৃত্বে কয়েকজন কর্মকর্তা সেখানে যান।

এলাকাসূত্রে জানা যায়, প্রায় তিন বছর ধরে ওই এলাকায় নানা কৌশলে পাহাড় কাটছে কেএসআরএম। বাড়বকুণ্ডে পরিবেশ আইন অমান্য করে পাহাড় কাটায় কেএসআরএম গ্রুপকে ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। জরিমানার পর কর্তৃপক্ষ পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে পাহাড় কাটবে না বলে অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু অঙ্গীকার ভঙ্গ করে কখনো দিনে আবার কখনো রাতে পাহাড় কেটে এলাকার জীববৈচিত্র্য, প্রাকৃতিক পরিবেশ, মাটির ভূ-প্রকৃতির পরিবর্তনসহ পরিবেশের ক্ষতি করে যাচ্ছে এই শিল্প প্রতিষ্ঠান ।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;