সীতাকুণ্ডে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে বেকারির পণ্য, নেই তদারকি

সীতাকুণ্ডে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে বেকারির পণ্য, নেই তদারকি

মেজবাহ খালেদ ।।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অবৈধ বেকারী । এসব বেকারিতে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে খাদ্যপণ্য। অধিকাংশ বেকারির নেই ট্রেড লাইসেন্স, বিএসটিআই, ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ, স্যানিটারি ও ট্রেডমার্ক ছাড়পত্র। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে বেকারিগুলো। নামসর্বস্ব এসব বেকারির কারখানায় দীর্ঘদিন ধরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি করে বাজারজাত করা হলেও নজরদারিতে নেই প্রশাসন ।

মহাসড়কের পাশে অবস্থিত বেকারিগুলোতে প্রশাসনের নিয়মিত অভিযান না হওয়ায় এখন উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাট-বাজারেও বেকারি স্থাপন করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এতে কোনো নিয়ম মানার প্রয়োজন মনে করেছেন না বেকারির মালিকেরা। এসব বেকারিতে উৎপাদিত খাদ্যপণ্য গ্রামের চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন হাটবাজারে। আর এসব অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও নিম্নমানের উপকরণে উৎপাদিত খাদ্যপণ্য খেয়ে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। যেন খাবারের নামে ‘বিষ’ খাচ্ছে মানুষ।

নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শকের তথ্য অনুযায়ী, সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী ছোট-বড় প্রায় ৪০টি বেকারির কারখানা রয়েছে। এসব বেকারির পণ্য উপজেলার বিভিন্ন বাজারের প্রায় ২০০০ প্রতিষ্ঠান ও ৪০টি হোটেল-রেস্তোরাঁয় যাচ্ছে। একটি বেকারি চালুর আগে ট্রেড লাইসেন্স, বিএসটিআই, ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ, স্যানিটারি ও ট্রেডমার্ক ছাড়পত্র থাকা বাধ্যতামূলক। তবে উপজেলার বেকারিগুলোর অধিকাংশই এই নিয়মের তোয়াক্কা করছে না । তাছাড়া বিএসটিআইয়ের মনোগ্রাম ব্যবহার করে এসব পণ্য প্যাকেটজাত করে বাজারে বিক্রি করছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, নিম্নমানের তেল এবং বিষাক্ত কেমিক্যাল দ্বারা উৎপাদিত এসব পণ্য গ্রহণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে সাধারণ মানুষের।

সরেজমিন দেখা গেছে, বেশির ভাগ কারখানায় কর্মচারীরা হাতে গ্লাভস ছাড়াই দু’হাতে ময়দা পিষছেন। জুতা পায়ে দিয়েই ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন রকমের পণ্য সাজিয়ে রাখছেন। অনেককে খালি গায়ে আটা-ময়দার স্তুপে দাঁড়িয়ে পায়ে ময়দা মাখতে দেখা যায়। কেউ আবার ময়দার খামির মেশিনে শুকাচ্ছেন। তাদের অধিকাংশই ছিলেন খালি গায়ে। কারও শরীর থেকে ঘাম ঝরছে। কেউ এক হাতে বিড়ি-সিগারেট ফুঁকছেন, অন্য হাত দিয়ে কাজ করছেন। খোলা তেলভর্তি ড্রামের ওপর দেখা যায়, মাছি ভনভন করছে। যত্রতত্র ইঁদুর ও তেলাপোকার বিষ্ঠা ছড়িয়ে থাকতেও দেখা যায়। খোলা পরিবেশে পণ্য তৈরির সময় উড়ে এসে ধুলো-বালি পড়ছে। অধিকাংশ বেকারির ফ্লোর পাকা করা নেই। এসব বেকারির পণ্যই বাহারি মোড়কে মুড়িয়ে বাজারজাত করা হচ্ছে। কারখানায় তৈরি বিস্কুট, পাউরুটি, কেক, মিষ্টির মতো খাবার এভাবেই চলে যাচ্ছে ভোক্তার নিকট।

জানা গেছে, বেকারিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে উৎপাদিত খাদ্যপণ্যগুলো উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারের চায়ের দোকান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যান্টিন, কনফেকশনারির দোকানে বিক্রি করা হয়। ব্র্যান্ডের তৈরি পণ্যের চেয়ে কমিশন বেশি পাওয়ায় নিম্নমানের বেকারি খাদ্যপণ্য দেদারসে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। পণ্যের প্যাকেটে বিএসটিআই সীল ও লাইসেন্স নম্বর দেওয়া থাকলেও তার কোনো ডকুমেন্ট নেই অধিকাংশ বেকারির। ভুয়া লাইসেন্স দিয়ে চলছে খাদ্যপণ্য বিক্রি।

সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নুর উদ্দিন রাশেদ বলেন, পেটের পীড়াজনিত রোগগুলো ভেজাল খাবারের কারণে হয়। ভেজাল কেমিক্যাল ও নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করা এসব খাদ্য সামগ্রী খেলে যেকেউ জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। শিশুদের জন্য এসব খাবার বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

উপজেলা নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক ফাতেমা বেগম জানান, তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে নিয়োজিত আছেন। সেখান থেকে ফেরার পর অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, প্রশাসনিক অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়ে উঠেনি। শিগগির সময় বের করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অবৈধ বেকারি কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিএসটিআই চট্টগ্রামের ফিল্ড অফিসার আশিকুজ্জামান বলেন, যেসব বেকারি শর্ত না মেনে পরিচালনা করছে শিগগির তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;