ভারী বর্ষণে চট্টগ্রামে পানির নিচে তলিয়ে গেল ৩০ হাজার হেক্টর জমির ফসল

ভারী বর্ষণে চট্টগ্রামে পানির নিচে তলিয়ে গেল ৩০ হাজার হেক্টর জমির ফসল
ভারী বর্ষণে চট্টগ্রামে পানির নিচে তলিয়ে গেল ৩০ হাজার হেক্টর জমির ফসল

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

একটানা ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের কারণে নগরীর ৩ থানাসহ জেলার ১৮ উপজেলায় ৩০ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমির শরৎকালীন সব সবজিই নষ্ট হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গত ১০ আগস্ট জেলার ১৫ উপজেলা এবং নগরীর পতেঙ্গা, ডবলমুরিং, পাঁচলাইশ থানায় ক্ষয়ক্ষতির যে প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরি করেছে তা থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

গত এক সপ্তাহের প্রবল বর্ষণে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ, বাঁশখালী, আনোয়ারা, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, পটিয়া, ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী এলাকায় বেশি ক্ষতি হয়েছে। এসব এলাকায় উৎপাদিত আউশ ধান ও সমপ্রতি লাগানো আমনের চারা পানিতে ডুবে গেছে। পাশাপাশি সবজির আবাদ পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার চট্টগ্রামে ৩৩ হাজার ৭১৯ হেক্টর জমিতে আউশের আবাদ হয়েছিল। এর মধ্যে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ৬ হাজার ১৩ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। জেলায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে আমনের বীজতলা তৈরি করা হয়েছিল। এরমধ্যে ৩ হাজার ৭৯৪ হেক্টর জমির বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। এদিকে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ৫১ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছিল। বন্যা না হলে এই লক্ষ্যমাত্রা ১ লক্ষ ৮০ হাজার হতো। আবাদকৃত আমন চাষের মধ্যে বন্যায় ১৪ হাজার ৪৯৬ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। চট্টগ্রাম কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর তথ্য মতে একটানা ভারী বর্ষণ ও বন্যায় চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, বাঁশখালী, আনোয়ারা ও সন্দ্বীপ এলাকায় আবাদ করা আউশ ধানের বেশি ক্ষতি হয়েছে। চলতি মাসের শেষের দিকে এসব ফসল কাটার কথা ছিল। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকায় ২০ হেক্টর জায়গায় আবাদ হওয়া আউশ ধানের মধ্যে ৫ হেক্টর জমির ফসল ডুবে আছে। তাছাড়া বিভিন্ন উপজেলার মধ্যে মীরসরাই উপজেলায় ১শ হেক্টর, সীতাকুণ্ডে ২৯৭ হেক্টর, ফটিকছড়িতে ৬৫ হেক্টর, হাটহাজারীতে ১৫ হেক্টর, রাঙ্গুনিয়ায় ৪০ হেক্টর, পটিয়ায় ২৯০ হেক্টর, কর্ণফুলীতে ২৩৫ হেক্টর, আনোয়ারায় ৬৬০ হেক্টর, চন্দনাইশে ২ হাজার ২শ হেক্টর, লোহাগাড়ায় ১৭০ হেক্টর, সাতকানিয়ায় ৪৯০ হেক্টর, বাঁশখালীতে ১ হাজার ৫শ হেক্টর ও সন্দ্বীপে ৫শ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত আউশ ধান পানিতে ডুবে আছে।

চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আবদুস সোবহান আজাদীকে বলেন, গত ৩ আগস্ট থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত চট্টগ্রামে অতিবৃষ্টি, জোয়ারের পানি এবং পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক প্রতিবেদন আমরা তৈরি করেছি।

এরমধ্যে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ, আনোয়ারা, পটিয়া, বোয়ালখালী, কর্ণফুলী, সন্দ্বীপ, মীরসরাইয়, সীতাকুণ্ড, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, নগরীর পতেঙ্গা, পাঁচলাইশ, ডবলমুরিংয়ে ২৯ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এরমধ্যে ৫ হাজার ৩৮৭ হেক্টর জমির শরৎকালীন সবজি নষ্ট হয়েছে।

তিনি বলেন, আমনের বীজতলা তেমন ক্ষতি হয় না। তবে আউশের ফলন কিছুটা কম হতে পারে। আমরা কৃষকদের নিরাশ না হওয়ার জন্য বলছি। কারণ আউশের যদি কিছু নষ্ট হয়েও থাকে আমরা তাদেরকে ইরি ২২ এবং ইরি ২৩ লাগানোর জন্য পরামর্শ দিচ্ছি। কারণ এই দুটো ধানের চারা সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত লাগানো যায়। এই দুটো ধানের বীজ আমাদের কাছে পর্যাপ্ত আছে। কৃষকরা সংগ্রহ করে লাগাতে পারবেন।

জলাবদ্ধতায় চট্টগ্রাম মহানগর ও ১৫ উপজেলায় ৫ হাজার ৩৮৭ হেক্টর জমির শরৎকালীন সবজি যেমন : বেগুন, বরবটি, ঢেঁড়শ, শসা, ক্ষীরা, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, ঝিঙ্গা, কাকরোল, করলা, লাউ, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল নষ্ট হয়েছে। তথ্য মতে, চন্দনাইশে ১ হাজার ২৪৫ হেক্টর, লোহাগাড়ায় ২৫০ হেক্টর, সাতকানিয়ায় ২২২ হেক্টর, বাঁশখালীতে ৩৫০ হেক্টর, মীরসরাইয়ে ১৫০ হেক্টর, সীতাকুণ্ডে ৪১৫ হেক্টর, ফটিকছড়িতে ৩১৫ হেক্টর, হাটহাজারীতে ৩০ হেক্টর, রাউজানে ২৫৭ হেক্টর, রাঙ্গুনিয়ায় ৬৪৪ হেক্টর, বোয়ালখালীতে ৬৫ হেক্টর, পটিয়ায় ২৩২ হেক্টর, কর্ণফুলীতে ১৫৭ হেক্টর, আনোয়ারায় ১৪০ হেক্টর, ও সন্দ্বীপে ৪৫৫ হেক্টর জমিতে এবং নগরের পাঁচলাইশে ১০২ হেক্টর, ডবলমুরিংয়ে ৩৮ হেক্টর জমিতে শরৎকালীন সবজির চাষ হয়েছিল। বৈরি আবহাওয়ার কবলে পড়ে শরৎকালীন সবজির শতভাগ ক্ষতি হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;