জোয়ার আর ভারি বর্ষণে জলমগ্ন নগরী ,সমুদ্রবন্দরে ৩ নং সংকেত

জোয়ার আর ভারি বর্ষণে জলমগ্ন নগরী ,সমুদ্রবন্দরে ৩ নং সংকেত
জোয়ার আর ভারি বর্ষণে জলমগ্ন নগরী ,সমুদ্রবন্দরে ৩ নং সংকেত

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

নগরীর নিচু এলাকাগুলো জোয়ারের সাথে ভারি বর্ষণে হাঁটুপানিতে ডুবে গেছে। বিশেষ করে যেসব এলাকার নালা, ড্রেন ইতোমধ্যে পরিষ্কার করা হয়নি কিংবা জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে এমন বেশিরভাগ নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল আটটা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নগরীর বহদ্দারহাট, চকবাজার, প্রবর্তক মোড়, মুরাদপুর, বাকলিয়া, চন্দনপুরা ডিসি রোড, রাহাত্তারপুল, পূর্ব বাকলিয়া, আগ্রাবাদ, গোসাইলডাঙ্গা মা ও শিশু হাসপাতাল, হালিশহর, মধ্যম হালিশহর, পাথরঘাটা, আছদগঞ্জ শুটকি পট্টি, রশিদ বিল্ডিং এলাকায় জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী।

রোববার ভোররাত থেকে চট্টগ্রামে মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ শুরু হয়। থেমে থেমে দুপুর পর্যন্ত মেঘলা আকাশ থেকে কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি কখনো মুষলধারে বৃষ্টি নামে। এদিকে আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে- চট্টগ্রামের অধিকাংশ জায়গায় আজ অস্থায়ী দমকা বাতাস কিংবা ঝড়ো হাওয়ার সাথে থেমে থেমে মাঝারি থেকে ভারি ধরনের বৃষ্টি কিংবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। আর চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৩নং স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রোববার সকাল ৬টা থেকে জোয়ার শুরু হয়। আর দুপুর ১২টায় শুরু হয় ভাটা। জোয়ার ও ভাটার মধ্যে শেষ সময় পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। একদিকে বৃষ্টির পানি ও অন্যদিকে জোয়ারের পানি মিলে জলমগ্ন হয়ে পড়ে নগরীর অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকাগুলো। পানি ঢুকে পড়ে বাসাবাড়ি, অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও বিভিন্ন দোকানে। এতে করে দুভোর্গ পোহাতে হয় নানা কাজে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষজনকে। জলজটের মধ্যে জনবহুল ব্যস্ত মোড়গুলোতে যানজটে জনভোগান্তির মাত্রা বেড়ে যায়। বেলা ১১টায় আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের নিচ তলায় হাঁটু পানি উঠে। এতে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হয়। পানির মধ্যেও দূরদূরান্ত থেকে রোগী আসে হাসপাতালটিতে। আবুল কাশেম নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, সকালে হাঁটু পানিতে তলিয়ে গেছে মা ও শিশু হাসপাতাল চত্বর। এটি অনেক জনপ্রিয় হাসপাতাল। সাধারণ মানুষ চিকিৎসার জন্য এখানে আসে। অথচ সামান্য বৃষ্টি কিংবা জোয়ারের পানিতে সামনের চলাচলের রাস্তা ও হাসপাতালের নিচতলা তলিয়ে যায়। চাইলে কর্তৃপক্ষ হাসপাতালে পানি প্রবেশ রোধে ব্যবস্থা নিতে পারে। প্রতি বর্ষায় আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

চকবাজার এলাকার বাসিন্দা আলম জানান, ‘অলিগলির ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হলেও খালটি এখনো আবর্জনায় পূর্ণ। এতে বৃষ্টির পানি সহজে নামতে না পেরে চকবাজার এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। চকবাজার হতে রাহাত্তার পুল যাওয়ার বাকলিয়া এলাকার রাস্তাটির অনেক স্থানে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এখানে অনেক দোকানে সকালে পানি ঢুকে গেছে।’

সকাল থেকে আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। আগ্রাবাদ হোটেলের সামনে থেকে কমার্স কলেজ রোড, বিজ্ঞান যাদুঘরের সামনে হাঁটু পানি জমে। জলাবদ্ধতার কারণে সকালে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসমুখী লোকজন। পানিতে সিএনজি অটোরিকশার ইঞ্জিনে পানি ঢুকে অনেক গাড়ি বিকল হয়ে যায়। ব্যাটারি চালিত অনেক রিকশাও ওই এলাকায় বিকল হয়ে যানজট তৈরি করে।

এদিকে চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস রোববার সন্ধ্যা ৬টার স্থানীয় পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। সেই সাথে অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা বাতাস কিংবা ঝড়ো হাওয়ার সাথে থেমে থেমে মাঝারি থেকে ভারি ধরনের বৃষ্টি কিংবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। তাছাড়া সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে ও তংলগ্ন বাংলাদেশ উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিম দিক হতে ঘণ্টায় ১০-১২ কি.মি. বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে, যা অস্থায়ী দমকা হাওয়ার আকারে সর্বোচ্চ ৩৫-৪৫ কি. মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৩নং স্থানীয় সতর্কতা সংকেত ও নদী বন্দরের জন্য ১নং নৌ সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।