ছয় বছরেও প্রতিষ্ঠিত হয়নি বার্ন হাসপাতাল, জায়গা দেখে গেলেন চীনের প্রতিনিধি দল

ছয় বছরেও প্রতিষ্ঠিত হয়নি বার্ন হাসপাতাল, জায়গা দেখে গেলেন চীনের প্রতিনিধি দল
ছয় বছরেও প্রতিষ্ঠিত হয়নি বার্ন হাসপাতাল, জায়গা দেখে গেলেন চীনের প্রতিনিধি দল

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।। 

অবশেষে চমেক হাসপাতালের অদূরে বার্ন হাসপাতাল স্থাপনের জন্য প্রস্তাবিত বিকল্প জায়গা পছন্দের পর এবার দেশটির প্রতিনিধিরা এসে সরেজমিনে দেখে গেলেন। শনিবার এ সংক্রান্ত বিষয়ে চীনের দুই প্রতিনিধি এসে বার্ন হাসপাতালের প্রস্তাবিত জায়গা দেখে যান । সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, একটি জায়গা পছন্দের কথা জানালেও এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোন বিষয়ই মতামত দেননি পরিদর্শনে আসা চীনের সদস্যরা। তবে এ নিয়ে পরবর্তীতে জানানো হবে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন।

জানা যায়, গত ছয় বছর আগে চীন সরকারের সহযোগিতায় উদ্যোগ নেয়া হয় চট্টগ্রামে বিশেষায়িত বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার। কিন্তু শুধুমাত্র একটি উপযুক্ত জায়গার অভাবে আলোর এতদিনে প্রতিষ্ঠা পায়নি পোড়া ও দগ্ধ রোগীদের প্রস্তাবিত বিশেষ সেবা কেন্দ্র ।

সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোর বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের পূর্ণাঙ্গ সেবা দিতে গিয়ে বিশেষায়িত বার্ন হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে ।

জানা যায়, শনিবার সকাল দশটার দিকে বাংলাদেশে বসবাসরত চীনের দুই নাগরিক হাসপাতালে আসেন। চীনের বিভিন্ন প্রকল্পের প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করে থাকেন। পরে এ সংক্রান্ত বিষয়ে পরিচালকসহ হাসপাতালের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে প্রথমে আলাচোনা পরবর্তীতে বার্ন হাসপাতালের জন্য প্রস্তাবিক জায়গা সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করেন। এসময় তারা প্রস্তাবিক এলাকার ভিডিও চিত্র এবং ছবিও সংরক্ষণ নেন। এদিকে, দেখে যাওয়া দুটি জায়গার মধ্যে একটি হচ্ছে গোয়াছি বাগান এলাকার চট্টেশ্বরী রোডের প্রধান সড়কের পাশে ২৬ হাজার ৯১৮ বর্গফুটের একটি এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রধান ছাত্রাবাসের উত্তর পশ্চিম পার্শ্বের খালি আরেকটি জায়গা। যার পরিমাণ ৩৩ হাজার ৯৭০ বর্গফুট। এ দুটি জায়গাই সরেজমিনে দেখে যান চীনের প্রতিনিধিরা। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, চীনের দু’জন প্রকৌশলী শনিবার সকালে হাসপাতাল স্থাপনের জন্য যে জায়গা নির্বাচন করা হয়েছে, তা দেখে গেছেন। তারা প্রায় দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে প্রস্তাবিত জায়গাগুলো পরিদর্শন করে। তারমধ্যে গোঁয়াছি বাগানের দুটি জায়গার মধ্যে একটি জায়গা উনাদের পছন্দ হয়েছে বলে অভিমত দিয়েছেন। পাশাপাশি এসব জায়গায় ছবি | ও ভিডিও ধারণ করেন তারা। পরবর্তীতে তাদের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলের সঙ্গে আলোচনা করেন। কিন্তু এ বিষয়ে আমাদের চুড়ান্তভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে ধারণা করছি, তারা এ জায়গাতে হাসপাতাল স্থাপন করতে আগ্রহী।' এর আগে গত  বছরে শেষের দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন প্রতিনিধি দল এসে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল এলাকায় | দটি জায়গা দেখে যান। যা পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল কিন্তু দেখে যাওয়া জায়গাগুলো নিয়ে শুরু থেকেই আপত্তি থাকায় সেটিও বাতিল করেন সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

সর্বশেষ চলতি বছরের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে আরও চারটি জায়গা নির্বাচন করে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। তারমধ্যে গোঁয়াছি বাগানের আলোচ্য দুটি জায়গার মধ্যে ছাত্রাবাসের পেছনের খালি জায়গাটি পছন্দ করা হয়। প্রসঙ্গত : ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সর্বপ্রথম চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল এলাকায় সম্ভাব্য জায়গা পরিদর্শনে আসে চীন সরকারের ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধি। দল। পরিদর্শনে তারা হাসপাতালের বর্তমান বার্ন ইউনিটের পেছনের খালি জায়গায় বিশেষায়িত এ ইউনিট করার কথা জানালে তৎকালীন পরিচালক সম্মতি দেন। যার প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ২৮ মার্চ বাংলাদেশস্থ চীনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে একটি চিঠি বিষয়ে সম্মতির কথা জানিয়ে চট্টগ্রামে সম্পূর্ণ আলাদা বিশেষায়িত একশ’ শয্যার বার্ন ইউনিট করার আগ্রহ প্রকাশ করে চীন সরকার।

পরবর্তীতে তারা প্রায় চার হাজার বর্গফুট জায়গায় চারতলা বিশিষ্ট এক'শ শয্যার বিশেষায়িত হাসপাতাল করতে সকল রকমের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। একই সাথে নকশাও তৈরি করেন। কিন্তু দ্বিতীয়বার এসে পরিমাপ করে কম জায়গা পাওয়ায় এ নিয়ে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ চতুর্থবারের মতো চীনা প্রতিনিধি দলের সদস্যদের সাথে কয়েক দফার রুদ্ধধার বৈঠকে বসে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাতেও কোনরকম সুরহান না মেলায় ফেরত যায় চীনের প্রতিনিধিরা। এ নিয়ে স্বয়ং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার আলোচনা হলেও প্রকল্পের নকশা পরিবর্তন করতে রাজি হয়নি চীন। যার কারণে বর্তমানে চট্টগ্রামে বার্ন ইউনিট পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। যদিও শেষ পর্যন্ত ২০২০ সালের ২০ জুলাই এক বৈঠকে চীন সরকারের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ বার্ন হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাব দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত। 

খালেদ / পোস্টকার্ড ;