বিএম ডিপোর ধ্বংসস্তুপ থেকে খণ্ড মরদেহ উদ্ধার, থাকতে পারে আরও লাশ

বিএম ডিপোর ধ্বংসস্তুপ থেকে খণ্ড মরদেহ উদ্ধার, থাকতে পারে আরও লাশ
বিএম ডিপোর ধ্বংসস্তুপ থেকে খণ্ড মরদেহ উদ্ধার, থাকতে পারে আরও লাশ

এসএম মিন্টু ও মেজবাহ উদ্দিন খালেদ ।।

বিএম কন্টেইনার ডিপোর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আরও একজনের মরদেহের তিনখণ্ড উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৯ জনে। সোমবার (১৩ জুন) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কন্টেইনারের পাশ থেকে ওই মরদেহের তিন খণ্ড উদ্ধার করা হয়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে নিহতের পরিচয় জানা যায়নি। এ নিয়ে এ ঘটনার এক সপ্তাহ পরেও আরও একজনের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করা হলো।

দুপুরে সিআইডির ক্রাইম সিন টিম কাজ করার সময় একজনের শরীরের দেহবাশেষ পড়ে থাকতে দেখে। এরপর সিআইডির সহযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গাউসিয়া কমিটির সদস্যরা শরীরের তিনটি অংশ উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যায় ।

সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে ধ্বংসস্তুপে আরও লাশ রয়েছে বলে ধারণা করছেন নিখোঁজদের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা। তারা বলছেন, পুরনো শেডে এখনও উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়নি। ওই শেডটি দূর থেকে দেখে মনে হবে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা। ওই শেডেই অস্তিত্ব মিলতে পারে অনেকে মৃতদেহ।

এদিকে রোববার (১২ জুন) রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এবং চট্টগ্রাম নগরীর বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৪৯ জনে।

বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় জেলা প্রশাসন সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি আরও পাঁচ দিনের সময় চেয়েছে।

শনিবার বিকালে বিএম ডিপোতে সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই কন্টেইনারগুলো চোখে পড়ে। এগুলো লন্ডভন্ড হয়ে পড়ে রয়েছে। এখনও ভেতরে থাকা তৈরি পোশাক থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল। একটু ভেতরে ঢুকতেই দেখা যায় একটি বড় রেকার, যা দিয়ে কন্টেইনারগুলো লোড-আনলোড করা হয়। সেই রেকারও পুড়ে কঙ্কালের মতো হয়ে গেছে। একটু দক্ষিণে যেতেই সেখানে লাল ফিতা দিয়ে আটকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওখানেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে নীল রঙয়ের ড্রাম। ওই ড্রামগুলোতেই হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ছিল, যা থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে।

ডিপোর ভেতরে আরও দেখা যায়, বিশাল আকারের একটি পুরনো শেড। ওই শেডটি বিস্ফোরণের পর থেকেই পড়ে রয়েছে। ওই শেডেই ছিল হাজার হাজার কর্মী। ঘটনার দিন অনেকেই সেখানে কর্মরত ছিল। সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এমন একজনের বর্ণনায় ভয়াবহ ঘটনার তথ্য পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিপোর ওই কর্মী বলেন, উত্তর-দক্ষিণমুখী লম্বা শেডটির পূর্ব-পশ্চিমমুখী মোট দরজা ৫৩টি। এর মধ্যে একটি দরজা অফিসের জন্য সংরক্ষিত। বাকি ৫২টি দরজা গোডাউনে রাখা ছিল বিভিন্ন পণ্য। ওই পণ্যের সঙ্গেই রাখা ছিল বিভিন্ন রাসায়নিক। বিশালাকার ওই শেডে এখনও উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়নি। ওই শেডেই নিখোঁজদের লাশ থাকতে পারে।

তিনি বলেন, হয়তো মানুষগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

এদিকে রোববার ভোররাত ৩টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মারা যান ফায়ার সার্ভিসের কর্মী গাউসুল আজম (২২)। তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. এসএম আইউব হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গাউসুল আজমের শরীরের ৭০ শতাংশ দগ্ধ ছিল। তার শ্বাসনালি পুড়ে গিয়েছিল।

ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক শাহজাহান সিকদার বলেন, গাউসুল আজমসহ ফায়ার সার্ভিসের ১০ কর্মী নিহত হয়েছেন। এখনও নিখোঁজ আছেন ৩ জন।

রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর বেসরকারি হাসপাতাল পার্কভিউতে মারা যান নুরুল কাদের নামে আরেক ব্যক্তি। তার শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল বলে জানান পার্কভিউ হাসপাতালের মহাব্যবস্থাপক তালুকদার জিয়াউর রহমান শরীফ।

আরও পাঁচ দিনের সময় চায় তদন্ত কমিটি : ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি আরও পাঁচ দিন সময় চেয়েছেন। গতকাল দুপুরে সময় চেয়ে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আবেদন করেন কমিটির প্রধান অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। এর আগে ঘটনা তদন্তে ৯ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন বিভাগীয় কমিশনার। কমিটিকে সময় দেওয়া হয় পাঁচ কার্যদিবস। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান জানান, তাদের পক্ষ থেকে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাদের প্রতিবেদন ৭ কর্মদিবসের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে। সে সময় এখনও শেষ হয়নি।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;