ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং : কেড়ে নিল ১০ প্রাণ, ব্যাপক ক্ষতি উপকূলে

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং : কেড়ে নিল ১০ প্রাণ, ব্যাপক ক্ষতি উপকূলে
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং : কেড়ে নিল ১০ প্রাণ, ব্যাপক ক্ষতি উপকূলে

পোস্টকার্ড নিউজ।।

সিত্রাংয়ের সোমবার সন্ধা ছয়টায় ও মূল কেন্দ্র রাত নয়টায় উপকূলে আঘাত করে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রটি ভোলার ওপর দিয়ে চলে যায়।

ঝড়ের কারণে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের বেশির ভাগ এলাকাজুড়ে ঝোড়ো বাতাস ও ভারী বৃষ্টি হয়। উপকূলের ১৫টি জেলার নদ–নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট উচ্চতা নিয়ে আছড়ে পড়ে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দমকা বাতাসে সোমবার কুমিল্লায় তিনজন, ভোলায় দুজন, সিরাজগঞ্জে দুজন, ঢাকা, নড়াইল ও বরগুনায় একজন করে মোট নয়জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

কুমিল্লায় তিন মৃত্যু

ঝড়ের মধ্যে রাত ১১টার দিকে নাঙ্গলকোট উপজেলার হেসাখাল ইউনিয়নের হেসাখাল পশ্চিম পাড়ায় গাছ ভেঙে ঘরের উপর পড়ে তিনজনের মৃত্যু হয়।

নিহতরা হলেন- হেসাখাল পশ্চিম পাড়া গ্রামের নিজাম উদ্দিন, তার স্ত্রী শারমিন আক্তার সাথী এবং তাদের মেয়ে চার বছরের শিশু নুসরাত আক্তার লিজা।

হেসাখাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ইকবাল বাহার বলেন, “ঝড়ো বাতাসে বড় একটি গাছ উপড়ে তাদের ঘরের ওপর পড়ে। পরে ভেতর থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।”

নাঙ্গলকোট থানার ওসি ফারুক হোসেন বলেন, ঘরের ওপর পড়া গাছটি সরানোর চেষ্টা কছেন তারা। ওই তিনজন ছাড়া আরও কেউ চাপা পড়েছে কি-না, তা খুঁজে দেখা হচ্ছে।

ভোলায় নিহত ২ মৃত্যু

ঝড়ের মধ্যে গাছ ভেঙে পড়ে ভোলার দৌলতখান ও চরফ্যাশন উপজেলায় দুইজনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

দৌলতপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ঝড়ে পৌরসভায় একজন নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন।

নিহত নারীর নাম বিবি খাদিজা (৮০) বলে জানা গেছে। তিনি দৌলতখান পৌরসভায় মৃত গোলাম মোস্তফার স্ত্রী।

পরিবারের সদস্যরা জানান, সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঘরের ওপর গাছ পড়লে ওই বৃদ্ধা নিচে চাপা পড়েন। আত্মীয়-স্বজনরা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

চরফ্যাশনের ইউএনও আল নোমান বলেন, সেখানে আলম স্বর্ণকার নামে এক ব্যক্তি ভেঙে পড়া গাছের ডালের সঙ্গে আঘাত পেয়ে নিহত হয়েছেন। তিনি উপজেলার এওয়াজপুর এলাকার বাসিন্দা।

পরিবারের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, তিনজন মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলেন। পথে ঝড়ে একটি গাছের ডাল ভেঙে পড়েছিল। চালক ডালের নিচ দিয়ে গিয়ে নিজেকে বাঁচাতে পারলেও আলম ডালে আঘাত পান। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নড়াইলে নারীর মৃত্যু

ঘূর্ণিঝড় উপকূলে পৌঁছানোর আগেই দুপুরে ঝড়ো হাওয়ায় গাছের ডাল ভেঙে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।

সোমবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ ঘটনা ঘটে বলে লোহাগড়া থানার ওসি মো. নাসির উদ্দীন জানান।

নিহত মর্জিনা বেগম (৪০) বাগেরহাট সদর উপজেলার অর্জনবাহার গ্রামের বাসিন্দা। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ১১ বছরের ছেলেকে নিয়ে তিনি লোহাগড়া পৌর এলাকার রাজপুর গ্রামের আবদুল গফ্ফারের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন বিভিন্ন বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন তিনি।

দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বর দিয়ে যাওয়ার সময় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সামনে পৌঁছালে একটি মেহগনি গাছের ডাল ভেঙে তার মাথায় পড়ে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। লোকজন তাকে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নাদিরা ভূঁইয়া বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তার মাথায় আঘাত ছিল।

লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আজগর আলী বলেন, বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। নিহতের পরিবারকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।

ঢাকায় রিকশাচালকের মৃত্যু

সিত্রাংয়ের প্রভাবে বৃষ্টি আর ঝড়ের মধ্যে ঢাকার হাজারীবাগে দেয়াল ধসে এক রিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে।

সোমবার সন্ধ্যায় জিগাতলার মনেশ্বর রোডে এ ঘটনায় আহত হয়েছেন এক মোটর সাইকেল চালক।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া জানান, স্থানীয় লোকজন দুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে এলে রিকশাচালককে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ওই ব্যক্তির নাম পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।

আহত মোটর সাইকেল চালককে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

হাজারীবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এনামুল হক খন্দকার বলেন, “ঘটনার সময় বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। নিহত ব্যক্তি রিকশা নিয়ে যাচ্ছিলেন। পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন বাইক আরোহী। তখন চারতলা একটি ভবনের ছাদের রেলিং ধসে পড়ে।”

পরিস্থিতির কারণে মঙ্গলবার খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;