কর্মজীবীদের দুর্ভোগ পথে পথে ,বন্ধ গণপরিবহন

কর্মজীবীদের দুর্ভোগ পথে পথে ,বন্ধ গণপরিবহন
কর্মজীবীদের দুর্ভোগ পথে পথে ,বন্ধ গণপরিবহন

ইকবাল হোসেন ।।

করোনায় দেশে আস্তে আস্তে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। বাড়ছে সংক্রমণের পরিধিও। এতে আতঙ্কও বাড়ছে সাধারণ মানুষের মাঝে। শুরু থেকে অফিস, আদালত, গার্মেন্টস ও গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয় সংক্রমণ এড়াতে। তবে ব্যাংকসহ যেসব জরুরি প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে চরম ভাবে। এর মধ্যে গতকাল গার্মেন্টস খোলায় কর্মজীবীদের আরো দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। ফলে একদিকে যেমন ভোগান্তি বেড়েছে, তেমনি করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিও বেড়েছে। জানা যায়, করোনা আতঙ্কের মধ্যে খোলা হয় গার্মেন্টস শিল্পের মতো শ্রমিক আধিক্যের কারখানা। অন্যদিকে অতি জরুরি প্রয়োজনে সীমিত সময়ের জন্য খোলা রাখা হয়েছে ব্যাংকগুলো। খোলা রয়েছে বাজার, বেসরকারি হাসপাতাল ও কিছু শিল্প কারখানা। করোনা সংকটে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় পথে পথে দুর্ভোগ মাড়িয়ে কর্মস্থলে যেতে হয়েছে কর্মজীবী মানুষদের। হেঁটে কিংবা একাধিক পরিবহন পরিবর্তন করে যেতে হয়েছে কর্মস্থলে। এতে দুর্ভোগের পাশাপাশি পরিবহন ব্যয়ও গুণতে হয়েছে কয়েকগুণ।

সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে গাড়ি চলাচলের কারণ জানছে পুলিশ। কোথাও কোথাও সেনাবাহিনীর সদস্যরাও গাড়িতে করে মাইকিং করে নজরদারি চালিয়েছেন। তবে কর্মস্থলে যাতায়াতকারী মানুষজন তেমন হয়রানির মুখে পড়েননি।

মরজিনা বেগম নামের এক গার্মেন্টস কর্মী বলেন, ‘আমার বাসা বাকলিয়ায়। প্রতিদিন গার্মেন্টসের গাড়ি করে ইপিজেড এর কারখানায় যেতাম। কিন্তু আজ গার্মেন্টস খুললেও অফিসের সেই বাসটি ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে আগ্রাবাদ পর্যন্ত পায়ে হেঁটে, পরে মিনি ট্রাকে করে ইপিজেড যেতে হয়েছে। আসার পথে পায়ে হেঁটে সল্টগোলা পর্যন্ত এসে পরে একটি খোলা ট্রাকে করে নিউ মার্কেট আসি। নিউ মার্কেট থেকে পায়ে হেঁটে বাসা যাচ্ছি।’

আনোয়ারার কোরিয়ান ইপিজেড এর একটি কারখানায় অপারেটরের চাকুরি করেন চরপাথরঘাটা এলাকার কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে আমরা কয়েকজনে মিলে মাসিক লেগুনা ভাড়া করে কেইপিজেডের কারখানায় যাওয়া আসা করতাম। কিন্তু আজকে (গতকাল) আমাদের কারখানা খুললেও গাড়ি পাইনি। প্রথমে শিকলবাহা ক্রসিং পর্যন্ত হেঁটে এবং পরে সিএনজি টেক্সিতে করে কারখানায় গিয়েছি।’

ব্যাংকার আবদুল্লাহ মোহাম্মদ জাবের বলেন, ‘আমি পটিয়া থেকে নিয়মিত আগ্রাবাদে কর্মস্থলে যাওয়া-আসা করি। করোনায় অফিস, আদালত ও গণপরিবহন বন্ধ হলেও ব্যাংকগুলো খোলা। এতে গাড়ির সংকটে চরম দুর্ভোগের মধ্যে অফিস করতে হচ্ছে। রাস্তায় গাড়ি নেই। হেঁটে, নৌকায় বাংলাবাজার ঘাট দিয়ে কর্ণফুলী নদী পার হয়ে রিকশায় করে আগ্রাবাদ অফিসে গিয়েছি।’

আরেক ব্যাংক কর্মকর্তা আবদুল্লাহ ফারুক রবি বলেন, ‘আমার অফিস হাটহাজারীতে হলেও প্রতিদিন গ্রামের বাড়ি পটিয়া থেকেই নিয়মিত অফিসে যাতায়াত করি। এখন গণপরিবহন বন্ধ থাকাতে চরম বিপদে পড়তে হচ্ছে। আগে যেখানে আসা যাওয়াতে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা লাগত, এখন সেখানে ৮ ঘণ্টা ব্যয় হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে দেড়শ টাকার মতো গাড়িভাড়া খরচ হত। এখন সেখানে খরচ হচ্ছে ৬৫০-৬৭০ টাকা। হাঁটতেও হয়েছে অনেকদূর। আসা-যাওয়া দুবারেই নতুন ব্রিজ হেঁটে পার হতে হয়েছে। কখনো রিকশা, কখনো মোটর সাইকেলে, কোথাও সিএনজি টেক্সিতে করে গন্তব্যে যেতে হয়েছে। দুর্ভোগের যেন শেষ নেই।’