করোনা জয়ী একই পরিবারে দুই মেয়ে ও বাবা

করোনা জয়ী একই পরিবারে দুই মেয়ে ও বাবা

ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি।।

করোনা জয় করলো ভৈরবের একই পরিবারের দুই মেয়ে ও তাদের বাবা। তারা হলেন পরিবারের অভিভাবক কাজী আবুল হোসেন (ব্যবসায়ী)। তার দুই মেয়ে হালিমা তুর্জ স্নিগ্ধা ও নওশিন শার্মিলী নিরা।

স্নিগ্ধা ইংরেজি বিষয়ে স্নাতকে পড়ছে । তিনি স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজ করেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। ছোট বোন নিরা এইচএসসি পরীক্ষার্থী।

গত ১৬ এপ্রিল শরীরে করোনা উপসর্গ অনুভব করায় উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগে যোগাযোগ করলে তার শরীরের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। গত ১৭ এপ্রিলে তার নমুনায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়।

শনাক্ত হবার দিন রাতেই উপজেলা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির আহবায়ক লুবনা ফারজানা তাকে কিশোরগঞ্জে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসার পাঠান। এর পরদিন তার সংস্পর্শে আসা পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠালে ১৯ এপ্রিলের রিপোর্টে তার মা এবং ছোট বোন নাফিসা ছাড়া পরিবারের মেঝো বোন ও বাবা করোনায় সংক্রমিত হন। ওই দিন তাদের দুজনকে একই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়।

দীর্ঘ দুই সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে করোনাকে জয় করে একই দিনে বাসায় ফেরেন। গত ৩ মে রোববার বিকালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের তিনজনকে ছাড়পত্র প্রদান করেন।

করোনা জয়ী হালিমা তুজ স্নিগ্ধা জানান, আল্লাহ আমাকে নতুন জীবন দান করেছেন। আমার এই নতুন জীবনে শুধু মানুষের কল্যাণে কাজ করব। যখন জানতে পারলাম আমার শরীরে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে, তখন আমি নিজেকে নিয়ে চিন্তিত না হয়ে আমার পরিবারের জন্য চিন্তিত ছিলাম। কখন যে আমার শরীরে ভাইরাস প্রবেশ করে তা বুঝতেই পারিনি। তবে ব্লার্ড ফর ভৈরব সংগঠনে রক্তদানের কাজে বাইরে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন। পরিচিত একজন আক্রান্ত হয়েছে শুনে সন্দেহ থেকে পরীক্ষা করিয়েছেন এবং রেজাল্ট পজেটিভ আসে। বাবা বোনের করোনা পজেটিভ আসার খবরে ভেঙে পড়েছিলেন।

তিনি জানান, করোনায় সংক্রমিত হলে আংতকিত বা ভয় পাবার কিছু নেই। ভয় না পেয়ে মনে সাহস মনোবল নিয়ে করোনায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হয়। তারপরই আসে সফলতা। তবে চিকিৎসকের পরার্মশ অনুযায়ী নিয়ম কানুন মেনে চললে, ঔষধ সেবন, শরীরচর্চা করলে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব। এখন হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়ে চিকিৎসকের পরার্মশ অনুযায়ী পরিবারের তিন সদস্য বাসায় বিশ্রামে রয়েছেন।

স্নিগ্ধার বাবা কাজী আবুল হোসেন বলেন, আমার বড় মেয়ে স্নিগ্ধার সংক্রমিত হওয়ার খবরে আমরা সবাই ভেঙে পড়ি। তবে আমার বড় মেয়ে সবসময় আমাদের ভরসা দিতো। সে বলতো আমার জন্য চিন্তা করো না। আমি ও আমার ছোট মেয়ের শরীরে যখন করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় তখনই মনে সাহস নিয়ে হাসপাতালে যাই। সেখানে চিকিৎসকদের দেয়া ঔষধ সেবনে, তার বড় মেয়ের তদারকিতে তিনিও সুস্থ হয়েছেন নিয়ম মানার কারণে।

হাসপাতালে প্রতিদিন ৫ বার গরম পানিতে ভাপ নেয়াসহ গারগিল করা, লেবুর শরবত খাওয়া, আদা দিয়ে চা খাওয়া, ভিটামিন সি যুক্ত ফলমূল খাওয়া সবই করেছি। ডাক্তারদের দেয়া ওষুধ নিয়মিত সেবন করেছি। আল্লাহতালার অশেষ রহমতে আমরা তিনজন একইদিনে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসি।