আগুন নেভানোর কাজ শেষ, বিএম ডিপো এখনো কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন

আগুন নেভানোর কাজ শেষ, বিএম ডিপো এখনো কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন
আগুন নেভানোর কাজ শেষ, বিএম ডিপো কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

আগুন নেভানোর কাজ শেষ করে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস চলে গেছে । বুধবার রাতে সেনাবাহিনীর সকল সদস্য এই ডিপো থেকে চলে যাবার পর বৃহস্পতিবার (গতকাল) দুপুর ২টায় ফিরে গেছে ফায়ার সার্ভিসের সবকটি ইউনিট। তারা বিএম কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা না পাওয়ায় আগুন নেভাতে এতো দেরি হলো বলে জানিয়েছে। অন্যদিকে উদ্ধারকারীরা চলে গেলেও এখনো বেশ কয়েকটি কন্টেইনারে ধোঁয়া আছে। আর তা স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় নেভানোর চেষ্টা করতে হবে প্রতিষ্ঠানটিকে। চারটার দিকে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে ডিপো । এদিকে এ ঘটনায় পুলিশের দায়েরকৃত মামলায় ৮ আসামির কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। তারা পলাতক আছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। অথচ তাদের একাংশ এখন বিভিন্ন মেডিকেল  চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন ।

বিএম ডিপোতে গত শনিবারের অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ৬দিন পর গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকাল ১১টা থেকে সেখানে কাজ পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ফায়ার সার্ভিস। তবে যন্ত্রপাতি গুছিয়ে তারা ফিরে গেছেন দুপুরের পর। অন্যদিকে এর আগের রাতে (বুধবার) বিএম ডিপো এখন নিরাপদ দাবি করে ফিরে যায় সেখানে উদ্ধার কাজে থাকা সেনা সদস্যরাও। 

ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মো. ফারুক হোসেন সিকদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখানে অন্তত ২০ কন্টেইনার আছে উঁচুতে। সেগুলো উপর থেকে নামিয়ে তারপর ঠাণ্ডা করে ডাম্পিং করতে হবে। আমরা যত পানি দিই সব পানি এসব কন্টেইনারের উপর দিয়ে চলে যায়। এগুলো নামিয়ে দিলে আমরা ভেতরে পানি দিয়ে নেভাতে পারতাম। তাদের একটি ক্রেন। সেটিও নষ্ট। কাজের জন্য আমরা বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষের কাছে কন্টেইনার সরানোর উপযুক্ত দুটি বড় ক্রেন চেয়েছিলাম। না থাকলে বন্দর থেকে ভাড়া নিয়ে দেবার জন্য অনুরোধ করি। শুধুমাত্র সেই ক্রেনগুলোর অভাবে আমরা গত কয়েকদিন ধরে সবগুলো কন্টেইনার নামিয়ে ঠাণ্ডা করে ডাম্পিং করতে পারছিলাম না। বিএম কর্তৃপক্ষ আমাদের এ ব্যাপারে কোন সহযোগিতা করেনি। সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন সিকদার আরো বলেন, এখানে গার্মেন্টস পণ্য আছে, তামাক আছে। আরো অনেক দ্রব্য ছিলো। কিন্তু পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিলো না। এখানে অগ্নি নির্বাপণের জন্য পানির ব্যবস্থাও ছিলো না। আমরা আশপাশের মানুষের নানা কথা শুনেও ৬-৭টি পুকুরের পানি সেচে ফেলেছি। এ কয়েকদিন আগুন ছিলো না। ধোঁয়া আছে। সব কন্টেইনারের ভেতরেই গার্মেন্টস পণ্য আছে। এসব পণ্যে পুড়ে পুড়ে ধোঁয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (গতকাল) আমাদের (ফায়ার সার্ভিসের) মহাপরিচালক মহোদয় এখানে অগ্নিকাণ্ডের অবস্থা জানতে চাইলে আমরা বলেছি স্যার এখানে দৃশ্যমান আগুন নেই, ধোঁয়া আছে। তিনি সব শুনে আমাদেরও কাজ পরিত্যক্ত করে ফিরে যাবার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই আমরা সেখান থেকে সব ইউনিট ফিরিয়ে এনেছি। এখনো যতটুকু ধোঁয়া আছে তা কারখানা কর্তৃপক্ষকে স্থানীয় বা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নেভাতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

কারখানা থেকে যাওয়ার সময় সাংবাদিক সম্মেলনে সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশান অফিসার নুরুল আলম দুলাল বলেন , এই আগুন নেভাতে ১৮টি স্টেশানের ৩২টি ইউনিট সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলো। এরমধ্যে ৯জন ফায়ার সার্ভিস কর্মীসহ মোট ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে গতকাল ( বৃহস্পতিবার) বিএম ডিপো পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি। এই কমিটির প্রধান জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক বদিউল আলমের নেতৃত্বে সোয়া ২ ঘণ্টা তদন্ত শেষে সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় ফিরে যায়। তদন্ত কমিটির সদস্য সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহাদাত হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার (গতকাল) এই কমিটি প্রথম দিনের মতো ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। পরে এসব যাচাই করা হবে। এদিকে বিএম ডিপোতে গাফিলতিতে পুলিশের দায়েরকৃত মামলায় ৮ আসামির কেউ এখনো গ্রেপ্তার হয়নি বলে জানিয়েছেন সীতাকুণ্ড থানার ওসি মো. আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, আসামিরা পলাতক। একজন কিছুটা অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঢাকায় চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জেনেছি। আমরা খুঁজছি তাদের ।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;