‘আমিন মোহাম্মদ মেহমানখানা’র অনন্য উদ্যোগ " প্রতিদিন দুপুরে তৃপ্তির খিচুড়ি ভোজ "

সাব্বির আহমেদ ।।

‘আমিন মোহাম্মদ মেহমানখানা’র অনন্য উদ্যোগ
" প্রতিদিন দুপুরে তৃপ্তির খিচুড়ি ভোজ "
তখন ভরদুপুর; কিন্তু কাকভেজা বৃষ্টি। সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে রিকশা। তবে নেই যাত্রী। রিকশার চালকরাই যাত্রীর আসনে। সারিবদ্ধভাবে একে একে খিচুড়ি নিচ্ছেন এবং খোশগল্প করে খাচ্ছেন। আবহাওয়াটাও যেন এই খিচুড়ির সঙ্গে বেশ মানানসই। খিচুড়ির স্বাদে রিকশাচালকদের ঘর্মাক্ত দেহ যেন জুড়িয়ে যাচ্ছে। বিনা খরচায় এমন মধ্যাহ্নভোজে খুশি রিকশাচালকরা। শুধু রিকশা চালক নয়, বিভিন্ন শ্রেণির মানুষরা এ মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন।

রাজধানীর ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডের শঙ্কর বাসস্ট্যান্ড থেকে আমিন মোহাম্মদ মেহমানখানা পর্যন্ত মধ্যাহ্নভোজের এই চমকপ্রদ দৃশ্যটি চোখে পড়ে গতকাল শুক্রবার। আর এই মেহমানদারির আয়োজক আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ। গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান দৈনিক সময়ের আলোর উপদেষ্টা হাজী হায়দার হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এম এনামুল হক নিজেই রিকশাচালকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মাঝে খাবার তুলে দেন এবং বিতরণ শেষে তারা নিজেরাও সেখানে বসে খাবার খান। প্রতিদিন মধ্যাহ্নভোজে বিনা টাকার আয়োজনটি মূলত সকল শ্রেণিপেশার মানুষের জন্য।
 

প্রতিদিন দুপুরে তৃপ্তির খিচুড়ি ভোজ

প্রতিদিন দুপুরে তৃপ্তির খিচুড়ি ভোজ

রিকশার ঝাঁপির ভেতর বসে খিচুড়ি খেতে খেতে পঞ্চাশোর্ধ্ব চালক মো. সলিমুদ্দিন বলেন, প্রায় দুপুরেই এখানে তৃপ্তিভরে খিচুড়ি খাই। খিচুড়িটা খাইতেও বেশ মজা। খাবারের মানও খুব ভালো।

সবসময় ধানমন্ডি এলাকায় রিকশা চালান বৃদ্ধ সমেদ আলী। তিনি জানান, বহুদিন ধরে এখানে দুপুরের খাবার খান। যেখানেই থাকেন দুপুরের খাবারের সময় হলেই এখানে চলে আসেন। পেট ভরে খেয়ে আবার রিকশা চালাতে বেরিয়ে পড়েন। শুধু রিকশাচালকই নন, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার অনেক মানুষ ধানমন্ডিসহ আশপাশ এলাকা থেকে প্রতিদিন এখানে দুপুরের খবার খেতে আসেন।

হাজারীবাগ থেকে প্রতিদুপুরে খেতে আসেন আহমদ আলী। তিনি বলেন, রিকশা চালিয়ে যখন দুপুর হয়, তখনই এখানে খেতে আসি। খাওয়া শেষে বাসায়ও খিচুড়ি নিয়ে যাই। রিকশাচালকদের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন দোকানি এবং নারী শ্রমিককেও দেখা যায় মধ্যাহ্নভোজের ওই আয়োজনে। ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুর এলাকায় বাসাবাড়িতে কাজ করেন নাজমা আক্তার। তিনি প্রতিদিন এখানে নিজে খেয়ে বাড়িতে স্বামী ও ছেলে-মেয়েদের জন্যও নিয়ে যান। নাজমা জানান, খাবারটা খুবই স্বাদের। গরম খিচুড়িতে মাংস থাকে।

 

বিনা খরচায় আয়োজনটি মূলত সকল শ্রেণির মানুষের জন্য। এই খাবার বিতরণ চলছে ২০১২ সালের শেষদিক থেকে। ঝড়বৃষ্টি যা-ই থাক, প্রতিদিন দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে শুরু হয়ে যায় খাবার বিতরণ। আয়োজকরা জানান, প্রতিদিন রান্নার আয়োজন শুরু হয় সকাল ৭টার পরই। আট থেকে দশজন বাবুর্চি রান্না করেন। পরিবেশনও করেন তারাই। চাল, ডাল, লাউ, কুমড়া, পেঁপে, টমেটো, গাজরসহ মুরগির মাংস মিলিয়ে একটু নরম করে এই খিচুড়ি রান্না করা হয়।
 

গতকালের আয়োজনে আরও উপস্থিত ছিলেন দৈনিক সময়ের আলোর প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ্সহ আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের কর্মকর্তা ও কর্মজীবীরা।  - সময়ের আলো ।