সীতাকুন্ড - মিরসরাইয়ে বৃষ্টির পাহাড়ি পানি সংরক্ষণে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

সীতাকুন্ড - মিরসরাইয়ে বৃষ্টির পাহাড়ি পানি সংরক্ষণে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
সীতাকুন্ড - মিরসরাইয়ে বৃষ্টির পাহাড়ি পানি সংরক্ষণে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

বিশেষ প্রতিবেদক ।।

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড - মিরসরাই উপজেলা বাংলাদেশের অন্যতম একটি শিল্পাঞ্চল হিসেবে এটি পরিচিত । দেশের অন্যতম এই শিল্পাঞ্চলে ছোট-বড় ৬ শতাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের পরিমাণ লাখ-কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এ গুরুত্বপূর্ণ এ অঞ্চলে সম্প্রতি দেখা দিয়েছে পানি সংকট।

পানি সংকটের জন্য দায়ী করা হচ্ছে এখানকার শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে। কেননা শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করছে ভূগর্ভস্থ পানি। যে কারণে সীতাকুন্ড - মিরসরাইয়ে পানির তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে পানির অভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন। পাশাপাশি রয়েছে বিশুদ্ধ পানিরও সংকট। এ অবস্থায় সীতাকুণ্ড শিল্পাঞ্চলের পানি সংকটের সমাধানের দীর্ঘদিনের দাবি ব্যবসায়ীদের।

এদিকে সীতাকুন্ড - মিরসরাইয়ে বৃষ্টির পাহাড়ি পানি সংরক্ষণ করে পরিবেশবান্ধব জলধারা নির্মাণে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার ( ১১ মার্চ) চট্টগ্রামের পেনিনসুলা জিনিয়া হলে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সাবেক মন্ত্রী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রামের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শিবেন্দু খাস্তগীরের সভাপতিত্বে মতবিনিময়ে গেস্ট অব অনার ছিলেন দিদারুল আলম এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, ঢাকার অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা, নকশা ও গবেষণা) মুহাম্মদ আমিরুল হক ভূঞা, চট্টগ্রামের অতিরিক্তি বিভাগীয় কমিশনার ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রাক্তন পরিচালক ফজলুর রশীদ। পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেন সিইজিআইএস’র প্রিন্সিপাল স্পেশালিস্ট কাজী কামরুল হাসান ও আইডব্লিউএমএ’র প্রতিনিধি তরুণ কান্তি মজুমদার। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডাইরেক্টরেট অব প্ল্যানিং-১ ড. শ্যামল চন্দ্র দাশ ও  চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।

সেমিনার সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড উপজেলায় পাহাড়ি এলাকা হতে উৎপন্ন অসংখ্য ছোট বড় ছড়া পূর্ব-পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে । বৃষ্টি প্রবন এ অঞ্চলে বর্ষা মৌসুমে পানির প্রাপ্যতা বেশ ভালো হলেও শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট চরম আকার ধারণ করে। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সন্নিকটবর্তী বিধায় এ অঞ্চলটিতে দ্রুত শিল্পায়ন ঘটছে, ফলে পানির সংকট দিনে দিনে তীব্রতর হচ্ছে। স্থানীয় জনগণ ছোট ছোট পাহাড়ি ছড়া সমূহে মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে পানির চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করছে ।

বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং বাঁধ নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় জলাধার স্থাপন করা হলে সংরক্ষিত পানি কৃষিকাজ, গৃহস্থালি কাজ, এবং শিল্প কারখানা সহ বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। উল্লিখিত প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) "চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরা ছড়া এবং মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ও গোভানিয়া ছড়ায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও ব্যবহারে পরিবেশ বান্ধব জলাধার নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা" শীর্ষক প্রকল্পটি হাতে নেয়। ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকল্পটির প্রশাসনিক অনুমোদন লাভ করে । প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ৪৮৯.০০ লক্ষ টাকা (জিওবি) এবং বাস্তবায়নকাল ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত।
খৈয়াছড়া ও গোভানিয়া ছড়ায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও ব্যবহারে পরিবেশ বান্ধব জলাধার নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই, পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন করা। সমীক্ষাটি কম্পোনেন্ট-১ (হাইড্রোলজিক্যাল ও মরফোলজিক্যাল মডেলিং) ও কম্পোনেন্ট-২ (পরিবেশ ও সামাজিক প্রভাব বিশ্লেষণ) এ দুটি অংশে সম্পাদন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) এর উদ্যোগে প্রকল্পটির উপর সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এই কর্মশালা সম্পন্ন হয়। বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সুবিধাভোগীগণ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। আলোচনায় উপস্থিতগণ এর মতামতের ভিত্তিতে প্রকল্প এলাকার চারটি ছড়া যেমনঃ গোভানিয়া ছড়া, খৈয়া ছড়া, কুমিরা ছড়া এবং জোরামতল খালে বর্ষা মৌসুমে পানি সং রক্ষণের মাধ্যমে শুকনা মৌসুমে পানির প্রাপ্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই প্রকল্পটি প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রকল্পটি কারিগরিভাবে বাস্তবায়নযোগ্য ও অর্থনৈতিক ভাবে লাভজনক এবং পরিবেশগত ভাবে টেকসই ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি বলেছেন, মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড এলাকায় পানি সংকট নিরসনে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্প বাস্তবায়নে যে উদ্যোগ নিচ্ছে তা প্রশংসার যোগ্য। সংকট নিরসনে যে প্রকল্প নেওয়া হবে তাতে আমি সহযোগিতা দিয়ে যাব।  

কর্মশালায় দিদারুল আলম এমপি বলেন, সীতাকুণ্ড ও মিরসরাইয়ের পাহাড়ি এলাকায় বাঁধ দিয়ে বৃষ্টির পানি ধরে কৃষি ও শিল্পায়ন দুইটিই রক্ষা করা সম্ভব হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এ নিয়ে ফয়’সলেক থেকে করেরহাট পর্যন্ত একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে একদিকে চাষাবাদ রক্ষা পাবে, অপরদিকে শিল্পায়নে উপকৃত হবে।

মতবিনিময় সভায় উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন, জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলমাস শিমুল, বাঁশবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলী, কুমিরা ইউপি চেয়ারম্যান মোরশেদ হোসেন চৌধুরী, খৈয়াছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক, দুর্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যান এস এম সুফিয়ান, সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ প্রমুখ।

কর্মশালায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, পূর্ব দিকে পাহাড় এবং পশ্চিম দিকে সমুদ্র পরিবেষ্টিত মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড উপজেলায় পাহাড়ি এলাকা হতে সৃষ্ট অসংখ্য ছোট-বড় ছড়া পূর্ব-পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। বৃষ্টিপ্রবণ এ অঞ্চলে বর্ষা মৌসুমে পানির প্রাপ্যতা বেশ ভাল হলেও শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট চরম আকার ধারণ করে। বন্দর নগরী চট্টগ্রামের সন্নিকটবর্তী এ অঞ্চলটিতে দ্রুত শিল্পায়ন ঘটছে। ফলে পানির সংকট দিনে দিনে তীব্রতর হচ্ছে। স্থানীয় জনগণ ছোট ছোট পাহাড়ি ছড়াসমূহে মাটির বাঁধ দিয়ে পানির চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করছে। অথচ বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং বাঁধ নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় জলাধার স্থাপন করা হলে সংরক্ষিত পানি কৃষি, গৃহস্থালি এবং শিল্প কারখানাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহার করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তাঁরা ।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;