সীতাকুণ্ডে মা-ছেলের মৃত্যু, পরিবারের দাবি ডায়রিয়া চিকিৎসকের ধারণা খাবারের বিষক্রিয়া

সীতাকুণ্ডে মা-ছেলের মৃত্যু, পরিবারের দাবি ডায়রিয়া চিকিৎসকের ধারণা খাবারের বিষক্রিয়া
সীতাকুণ্ডে মা-ছেলের মৃত্যু, পরিবারের দাবি ডায়রিয়া চিকিৎসকের ধারণা খাবারের বিষক্রিয়া

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি ।।

গত বৃহস্পতিবার রাতে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়িতে মা–ছেলের ‘অস্বাভাবিক মৃত্যুর’ ঘটনা ঘটেছে। পরিবার ও পুলিশের দাবি, মৃত্যুর আগে তারা দুজনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন, পায়খানা ও বমির কারণে শরীরে পানিশূন্যতার সৃষ্টি হয়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে।

অন্যদিকে দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি অস্বাভাবিক বলে দাবি করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদ। ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর বিষয়টি সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন তিনি।

নিহতরা হলেন উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের বার আউলিয়া ফুলতলা এলাকার মছিউল্ল্যাহ বাড়ির মো. সোহাগের স্ত্রী ঝর্ণা বেগম (২৪) ও তার ছেলে মো. সোহেল (৫)। ঝর্ণার দেড় বছর বয়সী এক ছেলে ও দুই মাস বয়সী এক কন্যা শিশু রয়েছে।

পরিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার রাতে কলমি শাক দিয়ে ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন তারা। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে গৃহবধূ ঝর্ণা ও তার পাঁচ বছর বয়সী ছেলে সোহেলের ডায়রিয়া শুরু হয়। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত বেশ কয়েকবার পাতলা পায়খানা হয় তাদের। তবে দুপুরের পর থেকে পায়খানার পাশাপাশি তাদের বমিও শুরু হয়। বিষয়টি তার স্বামীকে জানালে তিনি চাকুরি থেকে বাড়িতে ছুটে আসেন। স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছ থেকে স্ত্রী ও সন্তানের জন্য ওষুধ কিনে দিয়ে পুনরায় চাকরিতে ফিরে যান। তার এনে দেওয়া ওষুধ খাওয়ালেও ক্রমশ দুজনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। একপর্যায়ে বৃহস্পতিবার রাতে ঝর্ণা ও তার ছেলে সোহেল নিস্তেজ হয়ে গেলে চিকিৎসক নিয়ে আসতে পরিবারের সদস্যরা সোহাগকে আবারো ফোন করেন। তিনি স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক অমল শিকদারকে নিয়ে বাড়িতে আসেন। চিকিৎসক পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত গৃহবধূ ঝর্ণার স্বামী সোহাগ জানান, তিনি স্থানীয় একটি রাবার পোড়ানোর কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন। দুপুরে তার স্ত্রী ও ছেলে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছে জানতে পেরে তিনি কারখানা থেকে ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন। দুজনের জন্য স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছ থেকে ওষুধ কিনে আনেন এবং তাদের দুজনকে খাইয়ে দেন। কিন্তু সন্ধ্যার পর দুজনের শারীরিক অবস্থার অবনতির খবর পেয়ে পল্লী চিকিৎসককে নিয়ে ফের বাড়িতে ছুটে আসেন। হাতে টাকা না থাকায় দুজনকে হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি। গতকাল সকালে তাদের দাফন করা হয়েছে।

স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক অমল সিকদার জানান, তিনি সোহাগের বাড়িতে যাওয়ার পর তার স্ত্রী ও ছেলেকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। তাদের দুজনের মুখ খোলা অবস্থায় ছিল। অত্যাধিক ডায়রিয়া ও বমির কারণে পানিশূন্যতায় তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছেন তিনি।

অন্যদিকে এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদ বলেন, একই পরিবারের দুজনের মৃত্যুর খবরটি জানতে পেরে সকালে ঘটনাস্থলে চিকিৎসকের একটি দল গিয়েছেন। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ডায়রিয়া নয়, অস্বাভাবিক কোনো কারণে দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিষয়টি চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনকে অবহিত করা হয়েছে। খাবারের কোন বিষক্রিয়ার কারণেই এই দুজনের মৃত্যু হতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।

সোনাইছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মনির আহমদ বলেন, পরিবারটি খুবই গরিব। দুজনের মৃত্যুর খবর পরিবারের পক্ষে আমাকে অবহিত করা হয়েছে। তারা বুধবার রাতে খাবার খেয়ে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছে বলে আমাকে জানান।

সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সাঈদ জানান, একই পরিবারের দুজনের মৃত্যুর খবর পেয়ে তারা ভোররাতে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। ডায়রিয়া ও বমিতে আক্রান্ত হওয়ার কারণে দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে পরিবার ও স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন।

তিনি আরো বলেন, নিহত দুজনের শরীরে কোন ধরনের আঘাতের চিহ্ন কিংবা অস্বাভাবিক কোনো কিছু পরিলক্ষিত হয়নি। সঠিক চিকিৎসার অভাবে ডায়রিয়ায় পানি শূন্যতার সৃষ্টি হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছেন তিনি।

খালেদ / পোস্টকার্ড;