সীতাকুণ্ড বিএম ডিপো বিস্ফোরণের ক্ষতিপূরণ পায়নি অনেক ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার

সীতাকুণ্ড বিএম ডিপো বিস্ফোরণের ক্ষতিপূরণ পায়নি অনেক ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার
সীতাকুণ্ড বিএম ডিপো বিস্ফোরণের ক্ষতিপূরণ পায়নি অনেক ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার

পোস্টকার্ড নিউজ ।।

সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ সলিমপুর এলাকার বাসিন্দা ও ক্রেনচালক আবদুল মনির হোসেন (২৯) বিএম কনটেইনার ডিপোর ভয়াবহ বিস্ফোরণে প্রাণ হারান । সে সময় নিহত মনিরের স্ত্রী রহিমা আক্তার (২১) ছিলেন ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। 

মনিরের মৃত্যুতে অসহায় হয়ে পড়েন তাঁর স্ত্রী রহিমা। স্বামীর মৃত্যুর পর সে শ্বশুর বাড়ীতেই আছেন। শ্বশুরের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন সময় তাঁর চিকিৎসাসহ বিভিন্ন দায়িত্ব নেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। সেখানে গত আগস্টে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তিনি। শিশুসন্তানের জন্ম নেয়ার পর সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটছে তাঁর। দুর্ঘটনার পর ডিপো কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিলেও তা এখনো পাননি। ক্ষতিপূরণ পেতে প্রতিদিন সম্ভাব্য সব স্থানে দৌড়ঝাঁপের পর দিন শেষে নিরাশ হয়ে ফেরেন তার শ্বশুর বাড়ি এবং তার বাবার বাড়ির লোকজন ।

শুধু রহিমা আক্তার নন, দুর্ঘটনার সাড়ে চার মাস পার হলেও এখনো ক্ষতিপূরণ পায়নি অনেক হতাহত পরিবার। ক্ষতিপূরণ পেতে দীর্ঘ সময় দৌড়ঝাঁপের পর কোনো প্রতিকার না পেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। 

রহিমা আক্তার বলেন, ক্ষতিপূরণ পেতে ডিপো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু শত চেষ্টার পরও কোনো সাড়া না পেয়ে বাঁচার তাগিদে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়ি চলে যান। সন্তানের ভরণপোষণ ও চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে চরম সংকটে পড়েছেন তিনি। 

এদিকে রহিমা'র শ্বশুর আব্দুল হান্নান প্রকাশ শাহজাহান এই প্রতিবেদককে জানান, আমার ছেলের মৃত্যুর পর থেকে আমার ছেলে বউ আমাদের পরিবারের সাথে ছিল এবং এখনো আছে। কিছুদিন আগে সে বাপের বাড়ি গেছে । আমি তার সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছি। এমনকি চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে আমার নাতির জন্ম নিলে আমরা সারাক্ষণ নিজের দায়িত্বে দেখাশুনা করেছি। তিনি বলেন, বিএম কনটেইনার ডিপো কর্তৃপক্ষ যদি ক্ষতিপূরণ নাও দেয় আমার বউমা এবং নাতী'র সারজীবনের দায়িত্ব আমি / আমার পরিবার নেবে ।      

দুর্ঘটনায় আহত মোহাম্মদ ফারুক বলেন, তিনি ১০ বছর ধরে এ ডিপোতে ডেস্ক সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দুর্ঘটনার পর এক মাসের বেশি সময় চিকিৎসায় কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ডিপো কর্তৃপক্ষ তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা দেন। সেই সময় যথাযথ চিকিৎসার প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়ে দেবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু এখনো ক্ষতিপূরণের টাকার জন্য কর্তৃপক্ষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনি। 

বিস্ফোরণে আহত নোয়াখালীর মামুন, আমিরুল ইসলাম, নূর হোসেন, বিধান দে, জাহাঙ্গীর, নোমান ও বরিশালের মফিজ, মুরাদসহ একাধিক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিস্ফোরণের পরে চিকিৎসা ব্যয়সহ সংসারের ভরণপোষণের খরচ মেটাতে দীর্ঘ ভোগান্তিতে পড়লেও কর্তৃপক্ষ পাশে দাঁড়ায়নি। উল্টো কর্তৃপক্ষের ঘোষিত ক্ষতিপূরণের টাকা চাইতে গিয়ে একাধিকবার বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছেন বলে জানান তাঁরা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, দুর্ঘটনার পর বিএম কর্তৃপক্ষ হতাহত অনেককেই ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। তবে শনাক্তে জটিলতার কারণেই এখনো কিছু মানুষ ক্ষতিপূরণ পাননি। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। যাঁরা ক্ষতিপূরণ পাননি, তাঁদের তালিকা করে দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বিএম কনটেইনার লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মঈনুল আহসান খান বলেন, উত্তরাধিকার সনদের জটিলতার কারণে নিহত তিনজনের পরিবারকে এখনো ক্ষতিপূরণ দিতে পারেননি। পাশাপাশি তালিকা প্রণয়নে কিছু জটিলতার কারণে এখনো ক্ষতিপূরণ পাননি বেশ কয়েকজন আহত ব্যক্তি। যাঁরা এখনো ক্ষতিপূরণ পাননি, তাঁদের শিগগির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, এ বছরের ৪ জুন রাতে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে সীতাকুণ্ড ও কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের ১৩ জন কর্মীসহ ৫১ জন নিহত হন। আহত হন প্রায় ৩০০ জন।

খালেদ / পোস্টকার্ড;