সীতাকুণ্ড জনমানবহীন নিরব নিস্তব্ধ এক উপশহর

সীতাকুণ্ড জনমানবহীন নিরব নিস্তব্ধ এক উপশহর

এম কে মনির।।

করোনায় আক্রান্ত ছয় লাখেরও বেশি। আর এরমধ্যেই করোনার ভয়াল থাবা কেড়ে নিয়েছে ৩০ হাজারেরও বেশি প্রাণ। চীনের উহান থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র, কোথাও বাদ পড়েনি করোনার বিস্তার। বিশ্বের ১৯৯টি দেশে এখন তাণ্ডব চালাচ্ছে মরণঘাতি এ ভাইরাসটি।
ইতালি,রাশিয়া,মালেশিয়া, স্পেন,ইরান এমনকি আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ অসংখ্য দেশ নিজেদের লকডাউনে নিতে বাধ্য হয়েছে। পুরো পৃথিবীর মানুষ এখন গৃহবন্দী। পৃথিবীর সব যুদ্ধগুলো করোনার কাছে হার মেনেছে। নির্বাক হয়ে পড়েছে বিভিন্ন দেশের রাস্ট্র প্রধানগণ। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ইরানের রাস্ট্র প্রধানের ব্যক্তিগত সহকারী মারা গেছেন কোভিড-১৯ ভাইরাসে।
উন্নত দেশ চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া এ মরণঘাতী ভাইরাস ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ বাংলাদেশেও। দেশের প্রতিটি নাগরিক এই পরিস্থিতির জন্য মোটেও প্রস্তুুত ছিলো না। প্রসঙ্গ বন্দর নগরী চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার সীতাকুণ্ড উপজেলা। এটি মূলত একটি উপশহর। ছোট বড় সব শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে এ উপজেলায়। স্কুল, কলেজসহ এখানে অবস্থান একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের। পাহাড় ও সাগরের অপরুপ বৈচিত্র্য এ উপজেলাকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। প্রতিদিন শতশত ভ্রমণ পিপাসুরা সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত অবলোকন করতে ছুটে আসে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। এ উপজেলার অর্থনৈতিক অবস্থান বেশ ভালো।
জাহাজ ভাঙা শিল্প, কল কারখানা, শিক্ষা, পর্যটন, ঐতিহাসিক স্থাপনা, রাজনীতি ও সামাজিক অবস্থানে এ উপজেলা দেশের অন্য ১০ টি উপজেলা থেকে আলাদা বলা চলে। যে শহরে নিয়মিত দেখা যেত হাজারো পথচারীর পদচারণা। জমজমাট ব্যবসা বাণিজ্য ও ব্যস্ততম সড়ক সেই শহর আজ নিরব নিস্তব্ধ। থেমে গেছে এই জনপদ। দোকানপাট বন্ধ, শিক্ষা প্রতিষ্টান বন্ধ, রাস্তায় নেই কোন মানবের চিহ্ন। ভোরের কাকও ডাকা বন্ধ করে দিয়েছে। গোধূলি বিহীন গাঁয়ের মেঠোপথ। মাঠে নেই কৃষক।
কামার,কুমার,জেলে,তাঁতি,মুচি,ফেরিওয়ালা, রিক্সাওয়ালা সকলে আজ যেন অদৃশ্য। বন্ধ হয়ে গেছে দেশের প্রায় জাতীয় পত্রিকা। হোটেল-রেস্তোরা, শপিং মল, মাছের বাজারের সেই হৈচৈ, কামারের টুংটাং শব্দ সবই আজ নিরব নিস্তব্ধ। এ যেন কোলাহল মুক্ত স্তব্ধ নগরী। নিত্য পণ্যের ও ঔষধের দুয়েকটি দোকান খোলা থাকলেও জনশূন্য হয়ে পড়েছে সীতাকুণ্ড বাজার ও আশপাশের এলাকা। জনমত সংগ্রহে জানা গেছে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এমন নিরবতা কেউ দেখেনি।
সর্বস্তরে বিরাজ করছে আতঙ্ক। এ ভয় ৭১ এর পাক হানাদার বাহিনীর বুলেটের নয় এ ভয় করোনার। যা মানুষ চোখে দেখেনি। শুনেছে কেবল করোনা ভাইরাস একটি প্রাণঘাতী ভাইরাস। অন্যের সংস্পর্শে আসলেই ছড়াবে। রাখতে হবে নিরাপদ দূরত্ব। থাকতে হবে ঘরে। তবে বাজারঘাট নিস্তব্ধ হলেও গ্রামের মসজিদে মুসল্লির সংখ্যা বহুলাংশে বেড়েছে। মানুষ ইবাদতে শামিল হয়ে আল্লাহকে ডাকছে। প্রতি ওয়াক্তে ৬-৭ কাতার মানুষ দেখা যাচ্ছে প্রায় সব মসজিদে।
সর্বপরি রাতের সীতাকুণ্ডও জনমানবহীন । দিন রাত যেন একই। তবে মানুষের প্রশ্ন এমন অবস্থায় আর কতো দিন থাকতে হবে? এ প্রশ্ন এখন সকলেরই।