সীতাকুণ্ডে রেললাইনের ওপর সিডিএর গার্ডার, বন্ধ মালবাহী ট্রেন

সীতাকুণ্ডে রেললাইনের ওপর সিডিএর গার্ডার, বন্ধ মালবাহী ট্রেন

সীতাকুন্ড প্রতিনিধি ।।

সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটে-বায়েজিদ সড়কের নির্মাণাধীন একটি ওভারপাসে স্থাপনের সময় ক্রেনের রশি ছিঁড়ে প্রায় একশ’ টন ওজনের একটি গার্ডার নিচে রেললাইনের উপর পড়ে যায়। তবে ভাগ্যক্রমে বড় ধরনের কোনো বিপর্যয় ঘটেনি।

ফৌজদারহাটের বাংলাবাজার এলাকায় ওভারপাসটি নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। ঘটনার সাথে সাথে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হলেও ঘণ্টা খানেকের মধ্যে আবার চালু করা হয়। অবশ্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। রাতের মধ্যে গার্ডারটি স্থাপন করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

রোববার বিকাল তিনটার দিকে এই ঘটনা ঘটে।

চট্টগ্রাম মহানগরীর যান চলাচলসহ আবাসন এবং শিল্পায়নে নতুন মাত্রা যোগ করার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফৌজদারহাট থেকে বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সড়ক নির্মাণ করে। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে ৩২০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ ব্যয় করে সড়কটির নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে ৯৩ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। সাত শতাংশ কাজ বাকি থাকলেও যান চলাচল শুরু হয়েছে। এই সড়কে ঢাকা চট্টগ্রাম রেল লাইনের উপর একটি ওভারপাস রয়েছে। প্রায় ৪শ’ মিটার লম্বা ওভারপাসটির নির্মাণ কাজ চলছে। অবশ্য পাশের দুই লেনের পুরনো একটি ওভারপাস ব্যবহার করে রাস্তাটিতে যান চলাচল করছে।

ভূমি থেকে প্রায় ২৭ ফুট উচু নির্মাণাধীন রেলওয়ে ওভারপাসটিতে সর্বমোট ৪৫টি গার্ডার রয়েছে। ১৩২ ফুট লম্বা একেকটি গার্ডারের ওজন ৯০ টন। মাস কয়েক আগ থেকেই ওভারপাসে গার্ডার স্থাপন শুরু হয়েছে। নিচে তৈরি করে দুই পাশে দুইটি ক্রেন দিয়ে গার্ডার প্রায় ২৭ ফুট উপরে তুলে স্প্যানের উপর স্থাপন করা হয়। একটি ক্রেনের ধারণক্ষমতা দেড়শ’ টন। দুই পাশে মোট ৩০০ টন ধারণক্ষমতার ক্রেন ব্যবহার করে ৯০ টনের গার্ডার মাটি থেকে তোলা হয়। এই প্রক্রিয়ায় ইতোমধ্যে ২৩টি গার্ডার স্থাপন করা হয়েছে।

রোববার বিকাল তিনটার দিকে ২৪ নম্বর গার্ডার স্থাপন করা হচ্ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে দুই পাশে ক্রেন দিয়ে গার্ডারটি তোলার সময় উপর থেকে এক পাশের ক্রেনের রশি ছিঁড়ে গার্ডারটির একপাশ নিচে পড়ে যায়। অপরপাশ স্প্যানের উপর আটকে থাকে। গার্ডারটির একপাশ নিচে পড়লেও সেখানে বালির একটি স্তুপ থাকায় গার্ডারের কোনো ক্ষতি হয়নি। অবশ্য রেললাইনের একাংশের উপর গার্ডার পড়ায় ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে গার্ডারটি কিছুটা সরিয়ে নিলে ট্রেন চলাচল শুরু করা হয়। তবে বন্দর থেকে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের পথে গার্ডারটি আগলে থাকে। এতে বিকেল থেকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে কোনো ট্রেন যেতে পারেনি। গার্ডারটি না সরানো পর্যন্ত কন্টেনারবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হবে বলেও রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস জানান, গার্ডার স্থাপনের সময় একটি ক্রেন ফেল করেছে। রশি ছিঁড়ে গেছে। এতে গার্ডারটির একপাশ নিচে পড়ে যায়। তবে বালির স্তুপের উপর পড়ায় গার্ডারটি নষ্ট হয়নি। কোনো ক্ষতিও হয়নি। এটিকে রাতের মধ্যেই স্থাপন করা সম্ভব হবে। সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার বলেন, গার্ডার স্থাপনের সময় নিচে কোনো লোকজনকে থাকতে দেয়া হয় না। তাই কেউ হতাহত হয়নি।

ফৌজদারহাট-বায়েজিদ বাইপাস সড়কের প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার রাজীব দাশের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি খুবই সামান্য। একটি ক্রেন ফেল করেছে। আমরা অপর একটি ক্রেন এনে গার্ডারটি তুলে ফেলবো। আমাদের পূর্ব সতর্কতার কারণে বড় কোনো অঘটন ঘটেনি। গার্ডারের কোনো ক্ষতি হয়নি, রেল লাইনেরও কোনো ক্ষতি হয়নি। আমরা রাতে গার্ডারটি তুলে দিলেই সবকিছু আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

এদিকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা স্নেহাশীষ দাশগুপ্ত জানান, বন্দর রুটে দুটি মালবাহী ট্রেন চালানোর কথা থাকলেও দুর্ঘটনার কারণে পরিবর্তন করা হয় শিডিউল। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ছেড়ে যাওয়া মালবাহী ট্রেনটি রাত সাড়ে ১০টায় ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।