সীতাকুণ্ডে বসতি উচ্ছেদ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ 

সীতাকুণ্ডে বসতি উচ্ছেদ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ 
সীতাকুণ্ডে বসতি উচ্ছেদ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ 

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

জঙ্গল সলিমপুর থেকে অবৈধ বসতিদের উচ্ছেদের প্রতিবাদে মঙ্গলবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফৌজদারহাট এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন জঙ্গল সলিমপুর ও আলীনগরের বাসিন্দারা। মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে মহাসড়কের ফৌজদারহাট-বায়েজীদ সংযোগ সড়কের বিআইটিআইডি হাসপাতাল গেট এলাকায় তাঁরা অবরোধ করেন।

বসতি উচ্ছেদ বন্ধ ও বিদ্যুৎ সংযোগ চালুর দাবিতে অবরোধকালে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। বিকেল সাড়ে ৫টায় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় দু'পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। পরে অবরোধকারীরা সরে যান।

অবরোধের কারণে মহাসড়কের উভয় পাশে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটারের বেশি এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়। অত্যন্ত গরমে যানজটে আটকে দুর্ভোগে পড়তে হয় হাজার হাজার যাত্রীর। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন দূরপাল্লার যাত্রীরাও।

জঙ্গল সলিমপুরের বাসিন্দাদের দাবি, দীর্ঘ ১ মাস ধরে জঙ্গল সলিমপুর আলীনগরে বিদ্যুৎ না পাওয়ায় তাঁরা খাবার পানির সংকটে ভুগছেন। আর এ কারণে সড়ক অবরোধ করতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। এ ছাড়া ওই এলাকায় সরকারের নেওয়া মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন বন্ধ করে অবৈধ বসতি উচ্ছেদ বন্ধের দাবিও জানান তাঁরা।

অবরোধকারী মোহাম্মদ জাকের আলম জানান , দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গল সলিমপুর ও আলীনগরে প্রায় ৩০ হাজার লোক বসবাস করে আসছেন। সরকার ওই এলাকায় যে উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে তা বন্ধ করতে হবে তাছাড়া অবৈধ বসতিদের ঘরে বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ ফের চালু করতে হবে।

এসময় আন্দোলনরত সঙ্গে কথা বলতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন, সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আজিজ, সীতাকুণ্ড সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল করিম ঘটনাস্থলে যান পাশাপাশি অবরোধস্থলে উপস্থিত হয় সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের সদস্যরাও ঘটনাস্থলের পাশে অবস্থান নেন। অবরোধের কারণে ক্রমেই মহাসড়কের দুই পাশে বাড়তে থাকে গাড়ির সারি। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে পুলিশ অবরোধকারীদের সরে যেতে বলে। এ সময় অবরোধকারীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে।

দিনভর সড়ক আটকে রাখার পর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে অবরোধকারীদের ধাওয়া দেয় পুলিশ। এ সময় অবরোধকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। তারা ফৌজদারহাট বন্দর সংযোগ সড়কের ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে। এ সময় মহাসড়কে থাকা অন্তত পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করে। পুলিশ ব্যাপক লাটিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ধাওয়া করলে অবরোধকারীরা বায়েজিদ লিংক রোড হয়ে জঙ্গল সলিমপুরের দিকে পালিয়ে যায। এর পরপরই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উভয় পাশের যান চলাচল শুরু হয়।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম জানান, জঙ্গল সলিমপুরের বিদ্যুতের সংযোগ তারা বিচ্ছিন্ন করেননি। দেশে বিদ্যুৎ সংকটের কারণে অন্যান্য এলাকার মতো সেখানেও বিদ্যুৎ সরবরাহ সীমিত রয়েছে। ওই এলাকায় সরকারি পাহাড় কেটে যে বসতি গড়ে উঠেছে সেগুলো সম্পূর্ণ অবৈধ। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। তবে ভূমিহীন ও অসহায়দের পুনর্বাসন করা হবে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল করিম বলেন, বিদ্যুৎ ও পানির দাবিতে জঙ্গল সলিমপুরের বিক্ষুব্ধ বাসিন্দারা প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। তারা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করলেও মহাসড়ক থেকে সরে যায়নি। পরে ‘বল প্রয়োগ’ করলে চলে যায়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, আন্দোলনকারীরা বিদ্যুতের দাবিতে বায়েজিদ সড়কে আন্দোলন করছিল। কিন্তু কারো প্ররোচনায় হঠাৎ করে ফৌজদারহাট মহাসড়কে এসে অবস্থান নেয়। এতে দীর্ঘ যানজটের কারণে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। তাদের সঙ্গে কথা বলে মহাসড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়। পরে পুলিশি অ্যাকশনের পর তারা সরে যায়।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;