শীতকালে নামাজের নির্দেশনা

শীতকালে নামাজের নির্দেশনা
শীতকালে নামাজের নির্দেশনা

আরিফ খান সাদ ।।

শীতের শীতলতা আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেন, ‘জাহান্নাম আল্লাহর কাছে আভিযোগ করে বলে, আমার এক অংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলেছে। তখন আল্লাহ তাকে দুবার শ্বাস ফেলার অবকাশ দেন। শীতে একটি, গরমে একটি। এর ফলেই তোমরা পচন্ড গরম ও তীব্র ঠান্ডা অনুভব কর।’ (বুখারি : ৪৩৭; মুসলিম : ৬১৭)। এই শীতের পরিবেশে একজন মুমিনের কিছু নির্দেশনা রয়েছে।

ইস্তেঞ্জার চাপ ধরে না রাখা

শীতের সময় পানি অনেক ঠান্ডা হয়ে আসে। এই ভয়ে অনেকে এক অজু দিয়ে পরের নামাজ পড়ার চেষ্টা করেন। অনেক সময় ইস্তেঞ্জার (প্রশ্রাব-পায়খানা) চাপ থাকলেও তা ধরে রেখে নামাজের অপেক্ষা করেন। এটা মাকরুহ এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাসী কোনো মুমিনের জন্য বৈধ নয়, মল-মূত্রের বেগ চেপে রাখা অবস্থায়, তা দূর না করে নামাজ আদায় করা।’ (আবু দাউদ : ৯১)

সময় হলে নামাজ পড়া

প্রচন্ড শীতে দুপুরের দিকে নামাজের ওয়াক্ত বুঝতে অসুবিধা হয়। তাই শীতের সময় জোহর ও আসর ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পড়ার চেষ্টা করা। একইভাবে ওয়াক্ত মতো অন্যান্য নামাজ আদায় করা। হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘শীত তীব্র হলে নবীজি (সা.) নামাজ আগে আগে পড়তেন। আর গরম প্রচন্ড হলে নামাজ বিলম্বে পড়তেন।’ (বুখারি : ৯০৬)

নামাজে মুখ ঢেকে না রাখা

শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে অনেকে চাদর বা মাফলার দিয়ে মুখ ঢেকে রাখেন। নামাজের সময় এভাবে মুখ ঢেকে না রাখা। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সা.) কাপড় ঝুলিয়ে ও মুখমন্ডল ঢেকে নামাজ আদায় করতে নিষেধ করেছেন।’ (আবু দাউদ : ৬৪৩)

চামড়ার মোজায় মাসেহ করা

শীতকালে চামড়ার মোজা পরিধান করা এবং অজুর সময় পা না ধুয়ে মোজার ওপর মাসেহ করা আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য বিশেষ ছাড়। বান্দা হিসেবে মালিকের এ ছাড় গ্রহণ করা। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর সাধারণ বিধানের পাশাপাশি ছাড়ের বিধানগুলোর ওপর আমল করা তিনি পছন্দ করেন।’ (মুসনাদে আহমদ : ৫৮৩২)। চামড়ার মোজায় মাসেহ করা শরিয়তের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। পূর্ণ অজু অবস্থায় মোজা পরিধান করার পর অজু নষ্ট হওয়ার সময় থেকে নিয়ে বাড়িতে অবস্থান (ইকামত) কালে এক দিন, এক রাত্র আর সফর অবস্থায় তিন দিন, তিন রাত্র মাসেহ করার বিধান আছে। অজুতে পা ধোয়ার পরিবর্তে তিন আঙুল ভিজিয়ে, উভয় মোজার ওপর টাখনু পর্যন্ত টান দেওয়া। যদিও বছরজুড়েই এ আমল করা যায়। তবে শীতে এর সুযোগ বেশি। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) মোজার ওপর মাসেহের মেয়াদ মুকিমের জন্য এক দিন, এক রাত্র এবং মুসাফিরের জন্য তিন দিন, তিন রাত্র নির্ধারণ করেছেন।’ (মুসলিম : ২৭৬)

আগুন নিভিয়ে ঘুমানো

শীতের কারণে অনেক সময় রাতে আগুন জ্বালিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন অনেকে। এটা ঠিক নয়। হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিতÑ রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এই আগুন তোমাদের শত্রু। যখন ঘুমাবে তা নিভিয়ে ঘুমাবে।’ (বুখারি : ৬২৯৪)