রেলওয়ের স্টাফ কোয়ার্টার দখল, চলছে কোটি টাকার ভাড়া বাণিজ্য

রেলওয়ের স্টাফ কোয়ার্টার দখল, চলছে কোটি টাকার ভাড়া বাণিজ্য
রেলওয়ের স্টাফ কোয়ার্টার দখল, চলছে কোটি টাকার ভাড়া বাণিজ্য

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

চট্টগ্রামের টাইগার পাস এলাকায় রেলওয়ে কলোনীর স্টাফ কোয়াটার দখলসহ ছোট বড় অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে কোটি টাকা ভাড়া বাণিজ্য করছে একটি চক্র। আর এসব ঘওে অবৈধভাবে দেওয়া হয় গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ। 

জানা যায় এসব  এলাকায় রেলের খালি জায়গাগুলোতে ৫ শ’র অধিক কাচাঁ পাকা ঘর গড়ে উঠেছে। প্রতি ঘর থেকে ৪-৫ হাজার টাকা করে প্রতি মাসে আদায় করা হয়। যার দখলদার এলাকার প্রভাবশালী নেতারা। নামে রেলওয়ে স্টাফ কোয়ার্টার হলেও এই বাসাগুলো সন্ত্রাসীদের দখলে। রেলওয়ে কলোনীর রেলের স্টাফদের জন্য তৈরি কোয়ার্টারগুলো অর্ধেকে রয়েছে বাহিরাগত আর অর্ধেকের বেশী খালি পড়ে রয়েছে। ৩ থেকে ৪টি বিল্ডিং প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। তবে সন্ত্রাসীদের কারণে এখানে থাকতে পারেন না রেলের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী। অভিযোগ থাকলেও দায়সারা রেলওয়ে কর্মকর্তারা।

টাইগার পাস ২নং গেইট দিয়ে ঢুকতে রেলওয়ে কলোনীর ১নং বিল্ডিং পিছনে রাতারাতি তৈরী হয়েছে অবৈধ রিক্সার গ্যারেজ। যেখানে রাতে কিশোর গ্যাং কালচার ফলোয়াররা বসায় মাদকের আসর। অনুসন্ধানে কিশোর গ্যাং কালচার ফলোয়ারের মধ্যে নাম উঠে এসেছে সিফাত, বাদশা, কাউসার, হৃদয়, রাজ, রংপুরের বাবু, রুবেলসহ আরও অনেকের। তাদের ভয়ে এলাকার কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না। তাদের ব্যবহার করে বড় ভাইগুলো গড়ে তুলেছে ভূমি দখলের সাম্রাজ্য। তাদের দ্বারা ঘর তৈরি করে ঘর প্রতি ২-৩ লাখ টাকা হিসাবে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলেও অভিযোগে আছে। 

স্থানীয়রা জানায়, এলাকায় তাদের দৌরাত্ম্য অনেক। কোয়াটার দখল করে তা ভাড়ায় দেওয়ার বাইরেও তারা এলাকার বিভিন্ন জায়গা ঘর বাড়িসহ নানা রকম স্থাপনা গড়ে তুলেছে। ব্যবহার করছে অভিনব পদ্ধতি। শাক-শবজির ক্ষ্যাত, কবুতর ও হাস মুরগির খামারসহ রিক্সার গ্যারেজ রয়েছে। এলাকার স্কুল পড়ুয়া ছেলেরা এদের সাথে মেলামেশা করে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। আমবাগান দিয়ে প্রবেশ মুখের একটিসহ ভেতরের বেশ কয়েকটি বিল্ডিং ভাড়া দেওয়ার জন্য সাম্প্রতিক সময়ে রং করেছে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। রেল কর্তৃপক্ষ স্টাফ কোয়ার্টারগুলো তাদের স্টাফদের জন্য মেরামত করে রাখলে তার পরদিনই স্থানীয় সন্ত্রাসীরা দরজা-জানালা ভেঙে দেয় অথবা খুলে নিয়ে যায়। বিদ্যুতের তার কেটে নিয়ে যায়। যার ফলে পুরো কলোনিতে চলছে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের দখলদারিত্ব। তারা চাঁদাবাজি ও এলাকাকে উশৃঙ্খল করে রখেছে। 

রেলের একাধিক স্টাফের অভিযোগ, টাইগারপাসে বিশাল রেলওয়ে কলোনিটাকে ‘পরিত্যক্ত’ করে রাখার পেছনে বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ দায়ী। স্থানীয় সন্ত্রাসীদের সাথে তার যোগসাজস রয়েছে। স্টাফ কোয়ার্টারে স্টাফরা না থাকার পরিবেশ সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। এখানে চলাচলের ভালো রাস্তাও নেই। ভাঙাচোরা রাস্তা আর ড্রেন একাকার হয়ে গেছে। অনেক বাসার নিচতলা পানিতে ডুবে যায়। স্টাফরা না থাকায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা এসব বাসা বহিরাগতদের কাছে ভাড়া দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করে। বিভাগীয় প্রকৌশলীর চেয়ারে যিনি আসুক তার কাছে প্রতি মাসে চলে যায় লক্ষ টাকার ভাগ। রেলওয়ের প্রায় কলোনির সামনের খোলা জায়গাও ঘর করে ভাড়া দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ আহসান হাবীব বলেন, স্টাফ কোয়ার্টারগুলোর দায়িত্ব আমার, সেটা ঠিক আছে তবে এই ব্যাপারে আমি কোনো বক্তব্য দিতে পারব না।

অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মাহবুব উল করিম বলেন, এখানে আগে একবার উচ্ছেদ করেছিলাম। করোনার পর আবার উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছি। এখন উচ্ছেদ করতে কোনো অসুবিধা নেই। আপনাদের প্রতিবেদন এলে এটা দিয়ে একটা মাঠ প্রতিবেদন তৈরি করে আবার উচ্ছেদ করা হবে।