পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণই প্রথম কাজ, কাগজপত্র যাচাই পরে: বিএম কন্টেইনার ডিপোতে তদন্ত কমিটি

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণই প্রথম কাজ, কাগজপত্র যাচাই পরে: বিএম কন্টেইনার ডিপোতে তদন্ত কমিটি
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণই প্রথম কাজ, কাগজপত্র যাচাই পরে: বিএম কন্টেইনার ডিপোতে তদন্ত কমিটি

এসএম মিন্টু ও মেজবাহ উদ্দিন খালেদ, সীতাকুণ্ড থেকে ।।

বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটির সদস্যরা গতকাল পরিদর্শন করেছেন। তদন্ত কমিটি প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টা ডিপোর ভেতর অবস্থান করে বিভিন্ন পয়েন্টে পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন চলাকালে বিএম কন্টেইনার ডিপোর ভেতরে তখনও ধাউ ধাউ করে আগুণ জ¦লছিল। এসময় ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে যায় ডিপোর প্রধান ফটকের সামনে। আগুনের কুণ্ডলি দেখে আশাপাশের বাসিন্দাদের মধ্যে ফের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।  

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে অভিযান সমাপ্ত ঘোষনা করা হয়েছে। ডিপোর ভেতর দফায় দফায় আগুনের কুল্ডলি দেখা গেলেও বিষয়টি স্বাভাবিক মনে করছেন ডিপোর সংশ্লিষ্টরা।

অপরদিকে তদন্ত কমিটির পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের আনুষ্ঠানিক কিছু জানায়নি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র নাম প্রকাশ না করার  শর্তে বলেন, ডিপোর মালামাল যেখান থেকে খালাস হতো ওই শেডটি বর্তমানে ধ্বসংস্তুপে পরিনত অবস্থায় পরেড় রয়েছে। সেখানে কারও মৃতদেহ রয়েছে কী না তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।  ওই সূত্র আরও জানায়, ধ্বসংস্তুপের পরিনত শেডটি ওই অবস্থায় পড়ে আছে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরাও সেখানে উদ্ধার অভিযান চালায়নি। ওই শেডেই শ্রমিকরা কন্টেইনার ও হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ড্রামগুলো লোড আন লোডের কাজ করেতা। সেখানেই ভয়াবহু বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

গতকাল বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে ডিপোর ভেতর সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভস্মিভূত কন্টেইনারগুলো সরানোর কাজ করছে ডিপোর সংশ্লিষ্ট কর্মচারিরা। বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আমদানির জন্য আনা তৈরী পোশাক। এছাড়াও কন্টেইনার বিস্ফোরিত অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। পোড়া কাপড়গুলো জায়গায় জায়গায় স্তুপ করে রাখা হয়েছে। তার কিছুক্ষন পরই একে একে আসা শুরু করেন জেলাপ্রশাসক কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা। এসময় ডিপোর বাইরে যাওয়ার অনুরোধ করেন সংশ্লিষ্টরা। প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টা যাবত চলা তদন্তটিমের সদস্য বৃষ্টি উপক্ষো করে ধ্বংসস্তুপের কাছে যান। এসময় তদন্তকারীদের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছিল বলে ওই সূত্র জানায়।
সন্ধ্যায় তদন্তকারীরা বেরিয়ে আসলে উপস্থিত সাংবাদিকরা প্রশ্ন করে তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে এসময় তারা কোনও মন্তব্য করেননি।  

সূত্র জানায়, তদন্তকারীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, আহবায়ক চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকারের উপসচিব ও উপপরিচালক বদিউল আলম, সীতাকুণ্ড সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল করিম, সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাহাদাত হোসেন, চট্টগ্রামের শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মো. জসীম উদ্দীন, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সজীব কুমার চক্রবর্তী, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফÍরের উপ-মাহাপরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল সাকিব মুবাররাত, পরিবেশ অধিদফতরের উপপরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার, চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের    সহকারী পরিচালক মো. ফারুক হোসেন সিকদার ও চট্টগ্রাম বিস্ফোরক পরিদর্শক মো. তোফাজ্জল হোসেন।

তদন্তের বিষয়ে সীতাকুণ্ড নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তারা বিভিন্ন বিষয়ে তদন্ত করেছেন। ডিপোর বিভিন্নস্থানে পরিদর্শন করেছেন। বিস্ফোরণের অংশবিশেষ চিহ্নিত করা হয়েছে। তাছাড়া তিনি বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে বলেন, ভেতরে যেনো আর কারও ক্ষতি না হয় সেটি নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়াও ভেতরে বিস্ফোরণে ধ্বংসাবশেষ যেগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সেগুলো আলাদা স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তদন্তচলাকারীন আগুনের কুণ্ডলি দেখা গেছে সেই বিষরয় তিন বলেন, কন্টেইনারের ভেতরে যেসমস্ত কাপড় ছিল, সেই কাপড়গুলো কন্টেইনারে ভেতরে জলন্ত অবস্থায় ছিল এবং তা কন্টেইনার থেকে বের করার পর বাইরের বাতাস পাওয়ার কারেন কাপড়ের জমাট আগুন জ¦লে উঠছিল। যদিও তা ডিপোর কর্মচারিরা নিভিয়ে ফেলে। আজ (গতকাল) থেকে ফায়ার সার্ভিস সেখানে কাজ বন্ধ রেখেছেন। উদ্ধারের সময় কোনও মৃতদেহ পাওয়া গেলে, বা কেমিক্যাল পাওয়া গেলে তখন কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, তখন ফায়ার সার্ভিসের সহযোগীতা নেওয়া হবে।

ডিপোর কাগজপত্র সঠিক ছিল কী না, এ প্রসঙ্গে ইউএনও বলেন, আমরা আগে ক্ষতিগ্রস্থ স্থানে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি। আর কাগজপত্রের বিষয়টি পরবর্তিতে দেখা হবে।

তদন্ত কমিটির প্রথম সদস্য সীতাকুণ্ড সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল আলম বলেন সময়ের আলোকে, আমরা তদন্তের পার্ট আগে শেষ করছি। মামলার তদন্তকাজ চলছে। এরমধ্যে মালিক পক্ষের কোনও গাফলতি পাওয়া গেছে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ কনরা হবে।

খালেদ /পোস্টকার্ড ;