পানি নেমে যাওয়ার পর ভেসে আসছে লাশ, চট্টগ্রামের ৪ জেলায় নিহত ৪৯

পানি নেমে যাওয়ার পর ভেসে আসছে লাশ, চট্টগ্রামের ৪ জেলায় নিহত ৪৯
পানি নেমে যাওয়ার পর ভেসে আসছে লাশ, চট্টগ্রামের ৪ জেলায় নিহত ৪৯

বিশেষ প্রতিবেদক ।।

টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢল আর জলাবদ্ধতার পর পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীতে ভেসে আসছে একের পর এক লাশ। শুক্রবার সকাল থেকে দুই ঘণ্টার ব্যবধানে সাঙ্গু নদীর সাতকানিয়া ও আনোয়ারা অংশ থেকে দুই শিশুসহ ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ ও স্থানীয়রা।

প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে ৪৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ১৮ জন, কক্সবাজারে ২০, রাঙ্গামাটিতে ৩ ও বান্দরবানে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ আছেন ১০ জনের বেশি।

সাতকানিয়া চরতী ইউনিয়নের মো. রুহুল্লাহ চৌধুরী বলেন, শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে সাঙ্গু নদীর ব্রাহ্মণডেঙ্গা এলাকা থেকে ৭-৮ বছরের একজন ছেলে শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহটি উদ্ধার কাজ শেষ করে ফেরার সময় চালগাঁও এলাকায় আরেকটি কন্যা শিশুর মরদেহের খবর মিলেছে। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে ব্রাহ্মণডেঙ্গা থেকে আরও এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। এ নিয়ে শুধু চরতি ইউনিয়নেই ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে, নিখোঁজও আছে অনেকে।

এদিকে সকাল ১০টার দিকে আনোয়ারা উপজেলার ১ নম্বর জুইদন্ডী এলাকায় সাঙ্গু নদী থেকে অজ্ঞাত এক পুরুষের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

আনোয়ারা থানার ওসি সোহেল আহমদ বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে একটি অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহ দেখে মনে হচ্ছে দুই থেকে তিনদিন আগে মানুষটির মৃত্যু হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে সাঙ্গু নদীর চন্দনাইশের দোহাজারী রেলওয়ে নতুন সেতুর নিচে থেকে আবু সৈয়দ (৮৩) ও মো. আনাস (১০) নামে দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করে এলাকাবাসী। মঙ্গলবার বন্যার পানিতে তারা দুজন নিখোঁজ হন। একইদিন সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পেছন থেকে মোহাম্মদ ইদ্রিস নামে একজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রামে চলতি আগস্ট মাসের গত ৭ দিনে ৬৬৪ মিলিমিটার (মিমি) বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে ৪ আগস্ট ৪২ দশমিক ৮ মিমি, ৫ আগস্ট ৬৪ দশমিক ২ মিমি, ৬ আগস্ট ২৩১ দশমিক ৫ মিমি এবং ৭ আগস্ট ২১৬ দশমিক ৪ মিমি মিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

এদিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যমতে, বন্যায় এখন পর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে চকরিয়ায় ১১, পেকুয়ায় ৬, উখিয়ায় ২ ও রামুতে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, এক সপ্তাহের ভারী বৃ্ষ্টিতে বান্দরবানে বন্যায় ও পাহাড় ধসে এখন পর্যন্ত ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া নিখোঁজ রয়েছে ২ জন এবং আহত হয়েছে ১৭ জন।

রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুমানা আক্তার জানান, উপজেলায় পাহাড়ি ঢলের পানিতে ভেসে গিয়ে ও পানিতে ডুবে রাহুল বড়ুয়া (১০), জুনি চাকমা (৭) ও মো. জুয়েল (৭) নামে তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে দুর্গতদের সহায়তায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআর মঙ্গলবার জানিয়েছে, সেনা সদস্যের মাধ্যমে নিরলসভাবে উদ্ধার তৎপরতা, জরুরি ত্রাণ পরিচালনা ও চিকিৎসা সহায়তা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। 

খালেদ/ পোস্টকার্ড ;