পুণ্যার্থীর ভিড় বাড়ছে সীতাকুণ্ডে

পুণ্যার্থীর ভিড় বাড়ছে সীতাকুণ্ডে
পুণ্যার্থীর ভিড় বাড়ছে সীতাকুণ্ডে

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ ধাম ঘিরে পুণ্যার্থীদের পদচারণে মুখর হয়ে উঠেছে । ক্রমশ বাড়ছে মহাতীর্থে আয়োজিত শিব চতুর্দশী মেলায় পুণ্যার্থীর ভিড় । তিনদিন ব্যাপী মেলার প্রথম দিন গতকাল (শুক্রবার) মেলা ও তীর্থ দর্শনের লক্ষ্যে হাজার হাজার পুণ্যার্থীর আগমন হয়েছে। তবে আজ ও কাল (শনিবার-রবিবার) শিব চতুর্দশীর পূণ্য তিথিকে ঘিরে এ মেলায় অন্তত ১৫ লাখ ভক্তের আগমন হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা । ফলে এসব পুণ্যার্থীদের তীর্থ দর্শন নিরাপদ করতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

মেলা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, আনুমানিক সাড়ে ৩'শ বছর ধরে সীতাকুণ্ড পৌরসদরে অবস্থিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান তীর্থ ভূমি চন্দ্রনাথ ধামে প্রতিবছর শিব চতুর্দশী তিথিতে প্রায় ১০-১৫ লাখ ভক্তের আগমন হয়। এ সময় সমতল ভূমির মহাসড়ক থেকে মন্দির সড়ক হয়ে সমুদ্র পৃষ্ট থেকে সাড়ে তিন কি.মি. উঁচু পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দির পর্যন্ত সর্বত্র লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। আর এ বিশাল জনসংখ্যাকে ঘিরে বসে যায় মেলা। তীর্থ দর্শনে এসে ভারত-নেপাল-শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশের পুণ্যার্থীরা পূজা অর্চনা শেষে এ মেলায় কেনাকাটা করেন। ফলে এসময় তীর্থ ভূমি ও মেলা প্রাঙ্গণে তিল ঠাঁই থাকে না।

মেলা কমিটি জানান, শিব চতুর্দশী মেলায় পূণ্য তিথি আজ (শনিবার) সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডে শুরু হয়ে থাকবে পরদিন (রবিবার) বিকাল ৪টা ৮ মিনিট ৪৯ সেকেন্ড পর্যন্ত। ফলে এ সময়ে তীর্থের মঠ-মন্দিরগুলোতে সর্বাধিক ভক্তের আগমন হবে। তাছাড়া দূরাগত ভক্তরা গত বৃহস্পতিবার থেকে চন্দ্রনাথ ধামে আসতে শুরু করেছেন ।

চন্দ্রনাথ ধাম দর্শনে খাগড়াছড়ি থেকে সপরিবার আসা দীপক কান্তি নাথ  বলেন, তারা রিজার্ভ বাস নিয়ে শিব চতুর্দশী মেলা পরিক্রমা করতে সীতাকুণ্ডে এসেছেন । তিনি জানান, আগামীকাল বিকেলে শিব চতুর্দশীর স্নান শেষে চন্দ্রনাথ ধাম দর্শন করবেন। 

কুমিল্লা থেকে আসা পুণ্যার্থী কিশোর দাশ বলেন, তাঁরা শিব চতুর্দশী তিথি শুরুর পর ব্যাস কুণ্ডে স্নান সেরে চন্দ্রনাথ মন্দির দর্শনে উঠবেন। সেখানে তাঁরা দেবাদিদেব মহাদেবের অর্ঘ্য প্রদানের পাশাপাশি মঙ্গল কামনায় ঢালবেন শিবের মাথায় জল।

সীতাকুণ্ডের স্বয়ং আবির্ভূত মহাদেব (শম্ভুনাথ) মন্দিরের পুরোহিত দিপক ভট্টাচাৰ্য্য বলেন, চন্দ্রনাথ ধাম সারা পৃথিবীর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি মহাতীর্থ ভূমি । এ কারণে প্রত্যেক হিন্দু জীবনে একবার হলেও এই তীর্থভূমি দর্শন করতে চান। বিশেষত শিব চতুর্দশীর পূণ্য তিথিতে দেবাধিদেব মহাদেবের সন্তুষ্টির জন্য লাখ লাখ ভক্তের আগমন হয়। এসে তারা শিব ঠাকুরকে স্নান করিয়ে পূজা অর্চনা করে পূণ্য লাভ শেষে ফিরে যান। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে সীতাকুণ্ড মহাতীর্থের শম্ভুনাথ মন্দিরের শিব লিঙ্গটি স্বয়ং আবির্ভূত। এখানে ভগবান শিব নিজে এসেছেন। তাই এটির দর্শন করাও মহাপূণ্যের। এটি ছাড়াও এই মহাতীর্থের আরো দুটি অবিচ্ছেদ্য অংশ আছে। উত্তরে ছোটদারোগারহাটে লবনাক্ষ আর দক্ষিণে বাড়বকুণ্ডে বাড়বানল। পুণ্যার্থীদের এসবগুলোই দর্শন করা কর্তব্য।

সীতাকুণ্ড রেলস্টেশন মাস্টার সৈকত দেবনাথ বলেন, মেলাকে ঘিরে গত বুধবার থেকে সীতাকুণ্ড স্টেশনে থামছে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা মহানগর এক্সপ্রেস, চট্টগ্রাম মেইল, কর্ণফুলী কমিউটার, ময়মনসিংহ থেকে বিজয় এক্সপ্রেস, ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস, সিলেট থেকে আসা উদয়ন ও পাহাড়িকা এক্সপ্রেস, চাঁদপুর থেকে ছেড়ে আসা মেঘনা ও সাগরিকা এক্সপ্রেস। এ ছাড়া সীতাকুণ্ড থেকে ছেড়ে যাচ্ছে সাগরিকা কমিউটার, কর্ণফুলী কমিউটার, ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস ও ঢাকা মেইল। ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা এসব ট্রেন সীতাকুণ্ড স্টেশনে দুই মিনিট করে যাত্রাবিরতি করবে।

সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা নুরুল আলম দুলাল বলেন, এবারের শিব চতুর্দশী মেলায় ছয়টি পয়েন্টে অর্ধশতাধিক ফায়ার সার্ভিসের কর্মী দায়িত্ব পালন করেছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নুর উদ্দিন রাশেদ বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও মেলাকে ঘিরে তিন দিনের মেডিকেল ক্যাম্প বসানো হয়েছে। এবার অন্য ওষুধের পাশাপাশি মেলায় আগত তীর্থযাত্রীদের ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা হচ্ছে।

সীতাকুণ্ড থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ বলেন, মেলার কয়েকদিন এখানে তিল ঠাঁই থাকে না। এখানে দেশ-বিদেশের পুণ্যার্থীরা আসেন। তাই তারা যেন সম্মানের সাথে তীর্থ দর্শন করতে পারে তা নিশ্চিত করতে আমাদের সাড়ে ৫ শতাধিক পুলিশ ছাড়াও র‍্যাব,আনসার, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষী বিশাল বাহিনী কাজ করবে। এ ছাড়া নিরাপত্তা নিশ্চিতে আকাশে ওড়ানো হচ্ছে ড্রোন।

মেলা কমিটির সভাপতি ও সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হোসেন বলেন, তীর্থযাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিরাপত্তা নিশ্চিতে পাঁচটি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য ওড়ানো হচ্ছে ড্রোন। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ছয়টি পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছেন। চিকিৎসকদের একটি দল এবং পুলিশের প্রায় ৫০০ সদস্য নিরাপত্তার জন্য কাজ করছেন।

খালেদ / পোস্টকার্ড;