দেশেই আছে মৃগীরোগের সুচিকিৎসা - ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী

দেশেই আছে মৃগীরোগের সুচিকিৎসা - ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী
দেশেই আছে মৃগীরোগের সুচিকিৎসা - ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী

স্নায়বিক রোগ মৃগীরোগ।এ রোগের জন্য মস্তিষ্কের অতিসংবেদনশীলতা বহুলাংশে দায়ী। কারো মধ্যে বারবার খিঁচুনির উপসর্গ দেখা দিলে তার মৃগীরোগ হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়। এ ছাড়া মস্তিষ্কের টিউমার, রক্তক্ষরণ (স্ট্রোক), মাথায় আঘাতজনিত কারণ এবং তা থেকে রক্তপাত, রক্তনালিতে সমস্যা, সংক্রমণ, মাত্রাতিরিক্ত জ্বর, মানসিক সমস্যা, স্মৃতিভ্রম বা আলঝেইমার, নেশাজাতীয় ওষুধ সেবন, শরীরের লবণ, ভিটামিন বা খনিজ উপাদান ক্রমে কমে যাওয়া এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর রক্তের শর্করার পরিমাণ খুব বেশি বা খুব কমের কারণেও খিঁচুনি হতে পারে।

একজন মৃগীরোগীর হঠাৎ মারাত্মক উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন-শরীর শক্ত বা টান টান হয়ে হঠাৎ অচেতন অবস্থা, শিথিল হয়ে ঢলে পড়া, শরীরের কোনো অংশে খিঁচুনি ও পর্যায়ক্রমে সারা শরীরে তা ছড়িয়ে পড়া, হঠাৎ অস্বাভাবিক আচরণ এবং হাত, পা ও মুখের অস্বাভাবিক নড়াচড়া ইত্যাদি। সাধারণত খিঁচুনি থামার পর দীর্ঘ সময় রোগীর চেতনা থাকে না। খিঁচুনির সময় দাঁতে জিব কাটা বা প্রস্রাব বা মলত্যাগের মতো ঘটনাও হতে পারে।

আক্রান্ত ব্যক্তিকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে সাহায্য করতে এগিয়ে যাওয়া উচিত। একইভাবে মৃগীরোগীর স্বজন বা বন্ধুদেরও জানা উচিত আক্রান্ত হলে কী করতে হবে। এসব ক্ষেত্রে করণীয় হলো- খুব শান্ত থাকা জরুরি। অস্থির বা আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। অধিকাংশ খিঁচুনি খুব কম সময়ের মধ্যে থেমে যায়। তাই অপেক্ষা করতে হবে। রোগীর শরীর থেকে বেল্ট, টাই, চশমা ইত্যাদি খুলে দিতে হবে। পোশাক ঢিলে করে দেওয়া এ সময় খুব জরুরি। রোগী যাতে শক্ত মেঝেতে পড়ে গিয়ে আঘাত না পায়, সেদিকে লক্ষ রাখুন। মাথার নিচে কুশন বা বালিশ দিন। কিছু না পাওয়া গেলে ভাঁজ করা কাপড়চোপড় বা সাহায্যকারীর হাত ব্যবহার করা যায়। রোগীকে আগুন, পানি, যন্ত্র, তীক্ষ ধারালো বা শক্ত বস্তু থেকে দূরে রাখুন।

খিঁচুনি বন্ধ হওয়ার পর রোগীকে কাত করে দিন, মুখের ফেনা পরিষ্কার করে দিন। রোগীর মুখে চামচ বা অন্য কিছু দেওয়া যাবে না। নাকে চামড়ার জিনিস, জুতা ইত্যাদি ধরলে তাড়াতাড়ি জ্ঞান ফিরে এটা ভুল ধারণা। রোগীর মাথায় বা চোখে-মুখে পানি দেওয়া বা হাত-পা চেপে ধরারও দরকার নেই। জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত পানি বা অন্য কিছু জোর করে খাওয়াতে যাবেন না। মনে রাখবেন, মৃগীরোগের সুচিকিৎসা আছে। এতে রোগ নিয়ন্ত্রণ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব।

লেখক : অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস (এনআইএনএস)

চেম্বার : ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হসপিটাল

বাড়ি-১, রোড-৪, ধানমন্ডি, ঢাকা

০১৮৪৩৬১৬৬৭০; ০১৮৬৫৪৪৪৩৪৬