দেশ লিজ দিলে ক্ষমতায় থাকার অসুবিধা নাই কিন্তু আমি তা হতে দেব না : শেখ হাসিনা

দেশ লিজ দিলে ক্ষমতায় থাকার অসুবিধা নাই কিন্তু আমি তা হতে দেব না : শেখ হাসিনা
দেশ লিজ দিলে ক্ষমতায় থাকার অসুবিধা নাই কিন্তু আমি তা হতে দেব না : শেখ হাসিনা

পোস্টকার্ড ডেক ।।

বিএনপি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বা বাংলাদেশকে বিদেশিদের কাছে বন্ধক দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায় কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ বুধবার (২১ জুন) সুইজারল্যান্ড সফর নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “এখনও যদি বলি যে, না, ওই সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বা আমাদের দেশ কাউকে লিজ দেব, তাহলে আমার ক্ষমতায় থাকার কোনো অসুবিধা নাই, আমি জানি সেটা কিন্তু আমার দ্বারা সেটা হবে না।”

এই সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রাখেন সেন্ট মার্টির দ্বীপ প্রসঙ্গেও।

দেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের ছোট প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন বিক্রি করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল কীভাবে? তখন তো গ্যাস বিক্রি করার মুচলেকা দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিল। তাহলে এখন তারা দেশ বিক্রি করবে? নাকি সেন্টমার্টিন দ্বীপ বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়? আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। আমি সেন্টমার্টিন দ্বীপ মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চাই না। এই দেশের কোনো সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে চাই না। গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিলে আমিও ক্ষমতায় আসতে পারতাম। আর এখন যদি বলি সেন্টমার্টিন দ্বীপ বা আমাদের দেশ কারও কাছে লিজ দেব, তা হলে আমার ক্ষমতায় থাকার কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু আমার দ্বারা সেটা হবে না।

বুধবার গণভবনে সম্প্রতি সুইজারল্যান্ড ও কাতার সফর পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে খেলতে দেওয়া হবে না হুঁশিয়ার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কারও নেই। আর আমার দেশের মাটি ব্যবহার করে কোনো জায়গায় কেউ সন্ত্রাসী কর্মকা- চালাবে, কাউকে অ্যাটাক করবে, এই ধরনের কাজ আমরা হতে দেব না। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি, আমরা শান্তিপূর্ণ সহযোগিতায় বিশ্বাস করি।

সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন হবে

নির্বাচনীকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু এ দেশে ‘ওয়েস্টমিনস্টার টাইপ অব ডেমোক্র্যাসি’, ইংল্যান্ডের মতো জায়গায় যে রকম নির্বাচন হয়, ঠিক সেইভাবে এখানে নির্বাচন হবে। সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কোনো সুযোগ নেই। তা হলে তারা কেন সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করছে? সবাই এটা জানে (উচ্চ আদালতের রায় এবং সংবিধান সংশোধন)। এটা জানার পরও তারা কেন সাংবিধানিক সংকট তৈরির চেষ্টা করছে? এর উদ্দেশ্যটা কী? এর অর্থ গণতান্ত্রিক ধারাকে ধ্বংস করা। কোনো অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কোনো সুযোগ নেই। উচ্চ আদালতের একটি রায় আছে যে, একজন নির্বাচিত সরকারপ্রধানের স্থলাভিষিক্ত হবেন অন্য নির্বাচিত সরকারপ্রধান এবং সেই অনুযায়ী সংবিধানও সংশোধন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত সাড়ে ১৪ বছর ধরে চলমান গণতান্ত্রিক ধারা ও আর্থসামাজিক অগ্রগতিকে ধ্বংস করে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করাই এদের উদ্দেশ্য। এখন এটা দেশের জনগণের ওপর নির্ভর করছে তারা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণ চায় নাকি বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে বাংলাদেশ যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল আবার তা চায়। বিএনপিসহ আরও কয়েকটি দল রাজপথে নেমেছে। তাদের সমস্যা কী ও তাদের অর্থের উৎস কোথায়? সংবিধান ও নির্বাচনি আইন অনুযায়ী আগামী সাধারণ নির্বাচন যথাসময়েই অনুষ্ঠিত হবে। কারণ আমরা অনেক সংগ্রাম ও রক্তের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রেখেছি। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকায় দেশ অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে। আপনারা কি চান না এই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকুক?

আমি কি ভোট চুরি করতে যাব

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর রক্তের যেন কেউ ক্ষমতায় আসতে না পারে, এটা ছিল খুনি ও তাদের সহযোগীদের উদ্দেশ্য। এ জন্য শিশু রাসেলকেও হত্যা করা হয়। সেখানে আমি এ দেশের ক্ষমতায় এসেছি চার চার বার। ক্ষমতায় এসে ভোগ করিনি, দেশের মানুষের সার্বিক উন্নতি করেছি। আমি দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছি। মানুষের যদি পছন্দ হয় ভোট দেবে, না হয় না দেবে। না দিলে আমি নাই, থাকব না। আমি কি ভোট চুরি করতে যাব? আজ দুর্ভাগ্য হলো, আমরা ভোটের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করলাম, আর আমাদের যারা ভোট চোর বলে, তারা হলো ভোট ডাকাত। যাদের উত্থানটাই হয়েছে ডাকাতি করে, খুন করে, হত্যা করে।

এ সরকারের সময়ে নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু হয়েছে কি না, সেটি আপনারাই বলেন-সাংবাদিকদের কাছে এ প্রশ্ন রেখে সরকারপ্রধান বলেন, প্রতিটি নির্বাচন কমিশন যেভাবে চেয়েছে, ঠিক সেভাবেই হয়েছে। নির্বাচন কমিশন আইন করে দিয়েছি, আইন অনুযায়ী কমিশন গঠন হয়েছে। বিএনপি এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটারের লিস্ট করেছিল। এখন সেই সুযোগ নেই, ছবিসহ ভোটার তালিকা করেছি। লোহার বাক্স ছিল, সিল মেরে বাক্স ভরত। এখন স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, সিল মেরে বাক্স ভরার সুযোগ নেই। ইভিএমেও ভোট হয়েছে। তারপরও নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, কারা তুলছে? যারা দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনটা পছন্দ করছে না, তারা প্রশ্ন তুলছে। নির্বাচন যখন হবে, নির্বাচন কমিশন ঘোষণা দেবে, তখন নির্বাচন হবে। জনগণ ভোট দেবে। যদি আমাকে ভোট দেয় আমি আছি, না দিলে নাই।

এক কানে শুনি, আরেক কান খালেদা জিয়া গ্রেনেড দিয়ে শেষ করে দিছে

এক সাংবাদিকের কথা স্পষ্ট শুনতে না পেয়ে মাইকে প্রশ্ন করার কথা বলে শেখ হাসিনা বলেন, মাইকে মাইকে। আমি এক কানে শুনি ভাই, আরেক কান তো খালেদা জিয়া গ্রেনেড হামলা করে দিছে শেষ করে দিছে । খুনির দল; সে একটা খুনি, তার স্বামী একটা খুনি, তার একটা ছেলেও খুনি।

যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করে বলা হচ্ছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে আওয়ামী লীগ সেকুলারিজমে বিশ্বাস করে; যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে, সেই নীতিতে বিশ্বাস করে। ২০০১-এর পর সংখ্যালঘুদের ওপর যে নির্যাতন, যে বীভৎস ঘটনা ঘটেছে, সেদিন তো হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলমান কেউ রেহাই পায়নি। মানুষ হত্যা করেছে, মসজিদ ভেঙেছে, মন্দির ভেঙেছে, কোনটা না করেছে তারা? বিএনপি-জামায়াত সে সময় এক ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ, অত্যাচার-নির্যাতন করেছে। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুঁড়া গুঁড়া করেও মানুষ হত্যা করেছে। শুধু তা-ই নয়, সেনাবাহিনীর অফিসারদের চাকরি থেকে বিদায় দিয়ে দেওয়া, কারও সাত-আট বছর হয়েছে, তাদের বিদায় দিয়ে দেওয়া, প্রশাসন থেকে ভালো ভালো অফিসারদের বিদায় দেওয়া, একই দিনে একযোগে ১৩ জনকে ওএসডি করে দেয়। ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রথম দিনেই এটা করেছে তারা। এভাবে অত্যাচার করেছে।

বিদ্যুতের সমস্যা আস্তে আস্তে কেটে যাবে

খুব সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে, ঠান্ডা বাতাস পাওয়া যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হ্যাঁ, একটু বিদ্যুতের সমস্যা ছিল। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছিলাম। সেই সমস্যাটাও আস্তে আস্তে কেটে যাবে। একটু তো সহনশীল হতে হবে। ১৭ কোটি মানুষের সবার ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। যেখানে মাত্র ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ছিল, সেখানে ২৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করেছি।

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, তেলের দাম বাড়ল, এলএমজির দাম বাড়ল, সব কিছুর দাম বাড়ল। কয়লার দাম বেড়ে গেল। পাওয়া যাচ্ছে না। যেখানে হাত দিই, সব কেনা হয়ে গেছে। কাতারের সঙ্গে আমার আবার নতুন করে চুক্তি করতে হলো। তাদের গ্যাসের অন্যান্য দেশে বিরাট চাহিদা। তারপরও আমি কাতারের আমিরকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা যেভাবে চেয়েছি, ঠিক সেভাবে দিয়েছে। আমরা একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করতে পেরেছি। কিন্তু এই বিলগুলো দিতে তো হবে আমাদের। বিশ্ব ব্যাপী এই মন্দার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে।

১ কোটি মানুষকে বিনা পয়সায় খাবার দেব

করোনার সময় প্রণোদনা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সে সময় ব্যবসায়ীদের জন্য সব ধরনের প্রণোদনা দিয়েছি। গ্রামের মানুষ যাতে কষ্ট না পায়, সেটা দেখেছি। এখন ঈদ উপলক্ষে ১ কোটি মানুষকে বিনা পয়সায় খাবার দেব, এটা আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বর্ষাকালে আমাদের মানুষের একটু কষ্ট হয়। সেই সময় যাতে কষ্ট না হয়, সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। টিসিবি থেকে আমরা কার্ড দিচ্ছি। এখন আমরা সবাইকে ডিজিটাল কার্ড দিয়ে দেব। সেই কার্ড দিয়ে যেন তারা টাকা তুলতে পারে।

নির্বাচন যত কাছে আসবে, অপপ্রচার তত বাড়বে

মার্কিন কয়েকজন কংগ্রেসম্যানের লেখা চিঠিতে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমাদের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন এটার প্রতিবাদ করেছে। তারা বলেছে, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভুয়া তথ্য। সেভাবে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। নির্বাচন যত কাছে আসবে আরও বেশি করে এ ধরনের প্রচারণা চালাবে তারা। আমি জানি, এটা চালাবে। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখেই চলছে। এটা নিয়ে এক ধরনের অপপ্রচার শুরু হয়েছে। শুধু এটা নয়, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে দেশের মানুষকে সচেতন হতে হবে। তাদের অপপ্রচারে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না।

কথা যদি টুইস্ট করা হয় তা হলে তো কিছু বলার নেই

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। তিনি সেখানে বাংলাদেশের পক্ষ হয়ে কিছু বলবেন কি না এ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে গুঞ্জন চলছে। ভারতীয় পত্রিকা দ্য হিন্দুস্তান টাইমসে খবর প্রকাশিত হয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন ভারতকে অনুরোধ করেছেন বাংলাদেশের হয়ে কথা বলার জন্য। অথচ তিনি দেশে সাংবাদিকদের বলেছেন, এ বিষয়ে ভারতের কাছে ‘ওকালতি’ করার প্রয়োজন দেখছেন না। এ বিষয়টি স্পষ্ট করার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কথা যদি টুইস্ট করা হয় তা হলে তো কিছু বলার নেই। আপনারা একটা বিষয় একটু ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ভারত যথেষ্ট পরিপক্ক। তারা জানে কী বলতে হবে। তারা কী বলবে সে ব্যাপারে তাদের কাছে আমাদের ওকালতি করার দরকার নেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এটা বলেছেন। সেটাকে ভুলভাবে শিরোনাম করা হয়েছে। কথা যদি টুইস্ট করা হয় তা হলে তো কিছু বলার নেই। নিন পরিষ্কার করে দিলাম।

মজুদদারদের খবর দেন, ব্যবস্থা নেব

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে কিছু লোক তো থাকে সুযোগসন্ধানী। তারা সবসময় সুযোগ নিতে চেষ্টা করে। বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে পণ্য থাকার পরও যখন দাম বাড়ে, তার মানে কিছু লোক মজুদদারি করে। তারা ইচ্ছে করে মজুদদারি করে দাম বাড়ায়। তখন আমাদের কিছু বিকল্প পদক্ষেপ নিতে হয়। যেমন পেঁয়াজ আছে বাজারে, কিন্তু ছাড়ছে না, নিয়ে বসে আছে। মানে পেঁয়াজ পচাবে, ফেলে দেবে, তাও বেশি দামে বেচার জন্য বসে থাকবে। যখন ৫ লাখ মেট্রিকটন পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নিলাম, ১০ থেকে ১২ হাজার মেট্রিকটন আসতে না আসতেই পেঁয়াজের দাম কমে গেল। এ রকম যারা হোল্ডিং করে, মজুদদারি ও কালোবাজারি করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। আপনারাও সাংবাদিকরা তাদের বের করে দিন। কোথায় কে কী গুঁজে রাখল, আমরা খুঁজে খুঁজে তাদের বের করব। মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, সে ব্যবস্থা নেব। করোনা মহামারির পরে যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বাধে, তখন থেকে বলা শুরু করেছি, সবাইকে আহ্বান করেছি যেন এক ইঞ্চি মাটিও খালি না থাকে। কারণ বিশ্বব্যাপী ব্যাপক হারে খাদ্যমন্দা দেখা দেবে। ইউক্রেন, রাশিয়া, বেলারুশ-এসব রাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি খাদ্য উৎপাদন হয়। এসব দেশ সারা বিশ্বের খাদ্য চাহিদা মেটায়। কিন্তু মন্দা শুরু হলে আমরা কানাডা থেকে ২০০ ডলারের গম ৬০০ ডলারে কিনেছি। ৮০০ ডলারের জাহাজ ভাড়া ৪০০০ হাজার ডলার দিয়েছি। তবে সেসব দেশ মূল্যস্ফীতি কমাতে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তাদের ফলো করে আমরা ধীরে ধীরে একটা একটা পদক্ষেপ নিচ্ছি।

শত ফুল ফুটতে দিন, সবচেয়ে সুন্দরটি বেছে নেব

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, শত ফুল ফুটতে দিন। যে ফুলটি সবচেয়ে সুন্দর সেটি আমি বেছে নেব। আমাদের দেশে গণতন্ত্র আছে, গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা আছে। এ কারণেই দেশটার উন্নতি হয়েছে। মানুষের মধ্যে আস্থা-বিশ্বাস ফিরে এসেছে, দারিদ্র্য দূর হয়েছে। এ অবস্থায় প্রার্থী হওয়ার জন্য অনেকেরই আগ্রহ থাকবে এতে তো কোনো সন্দেহ নেই। কাকে প্রার্থী করা হবে কাকে হবে না-এ ব্যাপারে আমাদের দলেরও একটা লক্ষ্য থাকে। একটা অবাধ নিরপেক্ষ স্বচ্ছ নির্বাচন হবে, এটা আমাদেরও দাবি। অনেকেই তো প্রার্থী হতে পারে। প্রার্থী যদি হয়, শত ফুল ফুটতে দিন। যে ফুলটি সবচেয়ে সুন্দর সেটি আমি বেছে নেব।

ব্রিকসে আমরা যোগ দেব

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যে অর্থনৈতিক সংকট চলছে, ব্রিকসে যোগদান তা কতটুকু প্রশমিত করবে? পাশাপাশি আন্তর্জাতিক কোনো মুদ্রা চালু করার সিদ্ধান্ত আছে কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে হাস্যরসে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাই, আদার বেপারি জাহাজের খবর নিতে বলছেন? এটা বড় ও ধনী দেশ, উন্নত দেশ তারাই করে। তবে ব্রিকসে আমরা যোগ দেব। কারণ প্রথম যখন ব্রিকস প্রস্তুতি নেয় তখন থেকে এর সঙ্গে ছিলাম, আছি। আমরা একদম ফাউন্ডার মেম্বার হতে পারিনি। এখন চেয়েছি সেটার সদস্য হতে। আমরা চাচ্ছি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো একটার উপরে যেন নির্ভরশীলতা না হয়। অন্যান্য দেশের সঙ্গে যেন আমাদের অর্থ বিনিময়ের সুযোগ থাকে। আমাদের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো যেন সহজে ক্রয় করতে পারি, দেশের মানুষের কষ্ট লাঘব করতে পারি। এসব বিবেচনা করেই ব্রিকসে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিকল্প কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা অর্থ ব্যবহারের ব্যবস্থা কেউ যদি নেয় আমরা তার সঙ্গে আছি। ইতিমধ্যে কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা করছি, আমাদের নিজস্ব অর্থের বিনিময়ে যেন ক্রয়-বিক্রয় করতে পারি। ইতিমধ্যে সেই পদক্ষেপ নিয়েছি। শুধু ডলারের ওপর নির্ভরশীল নয়, নিজেদের অর্থে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিনিময়টা করতে পারি, কেনাবেচা করতে পারি, এ বিষয়ে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া আছে।

এ সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।

রিজার্ভে স্বস্তি ফেরার সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে

সরকার অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিরুৎসাহিত এবং প্রবাস আয় উৎসাহিত করার মতো বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে ইতিমধ্যে। ফলে আগামীতে রিজার্ভে স্বস্তি ফিরে আসার সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে। বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের লিখিত জবাবে সংসদকে এ কথা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রশ্নোত্তর পর্ব টেবিলে উত্থাপিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩২ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। মূল্যস্ফীতির চাপ এবং কোভিড-পরবর্তীকালে চাহিদা বৃদ্ধির কারণে ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের বাণিজ্য ভারসাম্যের ওপর কিছুটা চাপ তৈরি হয়েছে। এ চাপ মোকাবিলা করতে গিয়ে পরে তা কমতে শুরু করে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধরে রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবহার শুরু করলে রিজার্ভের পরিমাণ কমে যাওয়ার হার আরও বৃদ্ধি পায়। সর্বশেষ গত ৩১ মের হিসাব অনুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ ২৯ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার। যার সাহায্যে চার মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

সরকারি দলের সংসদ সদস্য নুর উদ্দীন চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, আওয়ামী লীগ সরকার যোগাযোগ খাতের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে যে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে, তা এখন সর্বমহলে স্বীকৃত ও প্রশংসিত। দেশের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে সেতু বিভাগ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েছে। সরকারি দলের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, পতিত জমি চাষাবাদের উদ্যোগ নেওয়ার ফলে ইতিমধ্যে প্রায় ৫৫ হাজার হেক্টর পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় এসেছে। কৃষি খাতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে ধান, ভুট্টা, আলু, সবজি ও ফলসহ অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বে চাল উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়া ২২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে রয়েছে। করোনার অভিঘাত মোকাবিলায় দেশের কৃষি খাত অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। বর্তমান সংকট মোকাবিলায় কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সরকার সচেষ্ট রয়েছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ৮৮ দশমিক ৬০ শতাংশ : খালেদা খানমের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার ৮৮ দশমিক ৬০ শতাংশ। তবে এ হার আরও বাড়াতে কার্যক্রম চলছে। এ কার্যক্রমে ১০ লাখ শিশু-কিশোর বিদ্যালয়বহির্ভূত রয়েছে। ইতিমধ্যে এই কার্যক্রমে এক লাখ শিশু-কিশোরকে মৌলিক শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। বাকি ৯ লাখ শিশু-কিশোরকে এই কার্যক্রমের আওতায় আনার কাজ চলছে। তিনি আরও জানান, আউট অব স্কুল চিলড্রেন কার্যক্রম (২০১৮-২০২৩) : চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪)-এর আওতায় ৮-১৪ বছর বয়সি ১০ লাখ বিদ্যালয়বহির্ভূত শিশু-কিশোরকে মৌলিক শিক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ১ লাখ শিশুর মৌলিক শিক্ষা শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট ৯ লাখ শিশুর শিক্ষা কার্যক্রম চলছে।

একই প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার ৪৭ দশমিক ২০ শতাংশ থেকে বর্তমানে ১৪ দশমিক ১৫ শতাংশে নেমে এসেছে। এ ছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার ৭৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮৮ দশমিক ৬০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী শিশুদের ভর্তির হার ৮৭ দশমিক ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ হয়েছে। তিনি জানান, প্রাথমিক শিক্ষাচক্র সমাপ্তির হার ৫২ দশমিক ৮০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯৫ দশমিক ৫০ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন ও সচ্ছলতা বেড়েছে এবং স্বাক্ষরতার হার ৫৩ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

খালেদ / পোস্টকার্ড;