জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেয়া সময় শেষ, সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর ছাড়েনি ১১০০ পরিবার

জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেয়া সময় শেষ, সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর ছাড়েনি ১১০০ পরিবার
জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেয়া সময় শেষ, সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর ছাড়েনি ১১০০ পরিবার

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগর পাহাড় থেকে অবৈধ বাসিন্দাদের সরে যাবার জন্য জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেয়া সময় তৃতীয় দফা (১১ সেপ্টেম্বর) পেরিয়ে গেলেও এখনো পাহাড়ে অবস্থান করছে প্রায় ১১০০ পরিবার।

অবশ্য এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে আজ (সোমবার) প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তবে এ বৈঠকের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে পড়েছে দখলদাররা। শনিবার গভীর রাতে দুটি বাসযোগে তারা জাতীয় প্রেসক্লাব অভিমুখে যাবার সময় পুলিশের হাতে আটক হলে এসব তথ্য জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়নের আলীনগর এলাকার ৩১০০ একর পাহাড় দখল করে বিগত প্রায় তিন দশক ধরে সেখানে প্লট বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে একটি দুষ্কৃতিকারী চক্র। ঐ চক্রের সদস্যরা সরকারি পাহাড় কেটে সেখানে এক হাজারেরও বেশি প্লট তৈরি করে বিক্রি করেছে। এতে পাহাড়ি এলাকাটি এখন ঘনবসতি পূর্ণ হয়ে উঠায় প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র ধংস হচ্ছে।

এদিকে দীর্ঘকাল ধরে ঐ পাহাড়ে দখলের রাজত্ব কায়েম করা ভূমিদস্যুদের উচ্ছেদে সম্প্রতি সরকার নানান উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি এলাকাটিতে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নাইট সাফারি পার্ক, কেন্দ্রীয় কারাগার, পাহাড় ব্যবস্থাপনা কার্যালয়সহ নানান সরকারি স্থাপনা করারও ঘোষণা দেয়া হয়। যা বাস্তবায়নে কাজও শুরু হয়েছে।

সরকারের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নে পাহাড় অবৈধ দখলমুক্ত করতে গত ২ আগস্ট চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক নিজে আলীনগরে যৌথবাহিনী নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে প্রায় ২’শ স্থাপনা সরিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। এছাড়া ঐ এলাকার অন্তত ৪’শ পরিবারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। সেসময় জেলা প্রশাসক প্রথম দফায় এলাকাবাসীকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে এই সময়ের মধ্যে এলাকা ত্যাগ করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু এরপর আরো সক্রিয় হয়ে উঠে দখলকারী চক্রের সদস্যরা। এর প্রতিবাদে ভূমিদস্যুরা স্থানীয় অসহায় মানুষদের ব্যবহার করে পরদিন অর্থাৎ ৩ আগস্ট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে। দীর্ঘ ৫ ঘণ্টার যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন হাজার হাজার মানুষ।

এরপর এলাকাটি পরিদর্শন করে স্থানীয়দের পাহাড় ছাড়ার জন্য ৩০ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন চট্টগ্রাম-৪ সীতাকুণ্ড আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ দিদারুল আলম। এতেও কাজ না হলে সর্বশেষ গত ৯-১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরো তিন দিন সময় বেঁধে দিয়ে আলীনগর পাহাড় ছাড়তে এলাকাবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ঘোষণা দেয় জেলা প্রশাসন। সে সময়ও গতকাল পেরিয়ে গেছে। কিন্তু তিন দফা এসব আল্টিমেটামে সব মিলিয়ে ৫০-৬০টির মতো পরিবার বসতঘর নিয়ে গেলেও এখনো সেখানে প্রায় ১১০০ ঘর রয়ে গেছে বলে জানা যায়।

সীতাকুণ্ড থানার ওসি মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, আলীনগরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরুর পর থেকে সেখানকার দুষ্কৃতিরা সরকারি কাজে বাধা, হামলা, সড়কে ভাঙচুর-অবরোধসহ যেসব কর্মকাণ্ড করেছেন সেসব ঘটনায় দেড় মাসে মোট ১৫টি মামলা দায়ের হয়েছে। এরমধ্যে দুটি করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর, চারটি করেছে স্থানীয় ভুক্তভোগী মানুষ, একটি করেছে উপজেলা প্রশাসন এবং অপর আটটি করেছে পুলিশ। এসব মামলায় ১৪ আসামিকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ। এছাড়া শনিবার রাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে ঢাকায় যাবার পথে আটককৃত ২২ জনকে কোর্ট হাজতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, আলীনগরে অনেক অসহায় মানুষ আছে যাদেরকে পুনর্বাসন করা হবে বলেও সরকার আশ্বাস দিয়েছে। তবুও পাহাড় দখলদারদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবার আশংকায় তারা নিরীহ এলাকাবাসীকে জিম্মি করে সেখান থেকে যেতে দিচ্ছে না। বরং তাদেরকে ভুল বুঝিয়ে বিপদের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এসব বিষয়ে সোমবার (আজ) প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান তিনি।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;