সীতাকুণ্ডে জঙ্গল সলিমপুরের বাসিন্দারা বিদ্যুৎ ও পানির দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ

সীতাকুণ্ডে জঙ্গল সলিমপুরের বাসিন্দারা বিদ্যুৎ ও পানির দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ
সীতাকুণ্ডে জঙ্গল সলিমপুরের বাসিন্দারা বিদ্যুৎ ও পানির দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

সীতাকুণ্ডের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছে সলিমপুরের জঙ্গল সলিমপুরের বাসিন্দারা প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ ও পানির দাবিতে বিক্ষোভ করছেন । অবরোধ চলায় মহাসড়কের উভয় দিকে অন্তত ১০ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে ।

আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ওই গ্রামের দুই শতাধিক বাসিন্দা ফৌজদারহাট–বায়েজিদ সংযোগ সড়কের মাথায় ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন।

বিকাল তিনটা পর্যন্ত অবরোধ অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে অবরোধ চলায় মহাসড়কের উভয় দিকে অন্তত ১০ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। অত্যন্ত গরমে যানজটে আটকে দুর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার যাত্রী।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সলিমপুর ইউনিয়নের জঙ্গল সলিমপুরে একাধিক টিলা কেটে অবৈধ বসতি গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি অবৈধ বসতি উচ্ছেদ করে সেখানে সরকারি স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। এসব অবৈধ বসতি উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসন সলিমপুরের বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় বলে অভিযোগ করেছেন গ্রামের বাসিন্দারা।

জঙ্গল সলিমপুরের বাসিন্দা মো. আলমগির জানান, এক মাস আগে জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগর এলাকায় প্রশাসন বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। অন্যান্য এলাকায় বিদ্যুৎ–সংযোগ থাকলেও প্রায় সারা দিন লোডশেডিং চলে। মানুষ সারা দিন পরিশ্রম করে রাতে একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারে না। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে পানিও তুলতে পারছেন না তাঁরা। ফলে তাঁদের জীবনধারণ কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। এখন তাঁদের অন্য কোথাও জমি কিনে বসতি গড়ার মতো সামর্থ্য নেই। এ জন্য বাধ্য হয়ে তাঁরা আন্দোলনে নেমেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম বলেন, জঙ্গল সলিমপুরে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়নি। সারা দেশের মতো এখানেও বিদ্যুতের সরবরাহ কম। তাই ওই গ্রামে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে আন্দোলনরত গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন, সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আজিজ, সীতাকুণ্ড সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল করিম ঘটনাস্থলে গেছেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল করিম বলেন, বিদ্যুৎ ও পানির দাবিতে জঙ্গল সলিমপুরের বাসিন্দারা প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। বিষয়টি সমাধানে কর্তৃপক্ষ ও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। যদিও এখনো আন্দোলনকারীরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছেন তবে তারা যদি বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে তখন ‘বল প্রয়োগ’ করা হবে বলে জানান তিনি ।

উল্লেখ্য, প্রায় দুই দশক আগে নোয়াখালী থেকে এসে সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরে আসেন ইয়াসিন নামের এক সন্ত্রাসী। পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে দাগি আসামি ও সন্ত্রাসীদের এনে গহীন পাহাড়ে গড়ে তোলে তার নিজস্ব বাহিনী। একের পর এক পাহাড় কেটে প্লট বিক্রি করে রাতারাতি কোটিপতি বনে যায় দুই ভাই ইয়াসিন ও ফারুক। সম্প্রতি সরকার জঙ্গল সলিমপুরের খাস জমিতে কয়েকটা বৃহৎ কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করে।

সেই অনুযায়ী তথ্যমন্ত্রীসহ কয়েকজন এমপি, সিটি মেয়র ও বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা একাধিকবার ওই এলাকা পরিদর্শন করেন। তাতে ক্ষেপে গিয়ে গত ১৫ জুলাই স্থানীয় সরকার চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক বদিউল আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাজমুল আহসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মাসুদ কামাল, সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হোসেন, রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) মং মারমা ও সীতাকুণ্ড উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম ও সলিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আজিজের গাড়ি বহর থেকে নামিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যকে বুকে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে মারধর করে ইয়াসিন বাহিনী।

সরকারী কর্মকর্তাদের সামনে ইউপি মেম্বারকে মারধরের ঘটনা হতবাক করে দেশবাসীকে। এ ঘটনায় ইউপি মেম্বারের ছোট ভাই বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করলে ১৮ জুলাই ইয়াসিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;