জামাতুল আনসারের সাথে কেএনএফের চুক্তি, চলছে পাহাড়ে প্রশিক্ষণ - অর্থায়নকারী শনাক্ত

জামাতুল আনসারের সাথে কেএনএফের চুক্তি, চলছে পাহাড়ে প্রশিক্ষণ - অর্থায়নকারী শনাক্ত
জামাতুল আনসারের সাথে কেএনএফের চুক্তি, চলছে পাহাড়ে প্রশিক্ষণ - অর্থায়নকারী শনাক্ত

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

সম্প্রতি দেশজুড়ে আলোচিত নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার সাথে পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সস্ত্রাসী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয় সেখানে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়া সাত তরুণ ও তিন প্রশিক্ষণ দাতাসহ ১০ জনকে আটক করেছে র‌্যাব। যদিও জঙ্গিবাদের বিচরণ ক্ষেত্র হিসেবে দেশে ইতোপূর্বে পার্বত্য অঞ্চলের কথা কখনও আলোচনায় আসেনি।

র‌্যাব জানায়, ২০২১ সালেই পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সস্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফের প্রতিষ্ঠাতা নাথাং বমের সাথে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার আমিরের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের দুজনের মধ্যে চুক্তি হয়, কেএনএফ পাহাড়ে তাদের আস্তানায় ২০২৩ সাল পর্যন্ত ধাপে ধাপে জঙ্গি সংগঠনটির সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেবে। চুক্তি অনুযায়ী জঙ্গি সংগঠনটির পক্ষ থেকে প্রতি মাসে কেএনএফকে ৩ লাখ টাকা এবং কেএনএফের সকল সদস্যের খাবার খরচ বহন করবে জঙ্গি সংগঠনটির অর্থদাতারা। জঙ্গিদের অর্থায়নকারী বেশ কয়েকজনের নামও পাওয়া গেছে। খুব শীঘ্রই তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

র‌্যাব গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সমপ্রতি জঙ্গিবাদে জড়িয়ে নতুন করে কথিত হিজরতের নামে ঘরছাড়া তরুণরা জামাতুল আনসারের হয়ে বিভিন্ন জেলায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। প্রশিক্ষণের বিভিন্ন পর্যায় আছে। এক প্রশিক্ষণে যারা ফেল করে, তাদের পরবর্তী প্রশিক্ষণে নেওয়া হয়নি। এভাবে বিভিন্ন জনকে বিভিন্ন জায়গায় রেখে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বিভিন্ন সংগঠন থেকে লোক চলে আসে। তারা প্রথমত একসঙ্গে কাজ শুরু করে। তাদের মানসিকভাবে সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন করে উগ্রবাদের দীক্ষা দেওয়া হয়। ভারি অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় পাহাড়ি এলাকার আস্তানায়। উত্তরবঙ্গে বিশেষ করে ভোলা, পটুয়াখালীতে কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কোনো জায়গায় আত্মগোপনে থেকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যেন জীবিকা অর্জন করতে পারে এ জন্য তাদের ইলেকট্রিক কাজ, রাজমিস্ত্রীর কাজ শেখানো হয়।

তিনি বলেন, নিখোঁজ কিছু তরুণের খোঁজে গিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামে নতুন দলটির সন্ধান মেলে। আনসার আল ইসলামের কাজের ধরণ যে রকম ছিল, নতুন সংগঠনটিও তেমনি ‘টার্গেট বেসিসে’ দলে সদস্য ভেড়াচ্ছে। এখন পর্যন্ত আমরা যাদেরকে পেয়েছি, তাদেরকে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নেওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী তাদের ৫০ জনের অধিক সদস্য দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে প্রশিক্ষণ নিয়েছে ও কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তাদের শারীরিকভাবে ফিট করা হয়েছে। তাদের খাপ খাওয়ানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সংগঠন সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, পুরনো যে জঙ্গি সংগঠনগুলো জেএমবি, হিযবুত, আনসার- এরা তাদের সদস্য ধরা পড়লে ঠিকমতো খোঁজ-খবর নেয়নি। তবে নতুন সংগঠন তেমনটা নয়, কেউ গ্রেপ্তার হলে তাদের পরিবার ও আদালতে খোঁজ রাখা হবে।

ইতোপূর্বে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তারকৃত এ সংগঠনের অন্যতম সংগঠক পটুয়াখালীর একটি মাদ্রাসার শিক্ষক হোসাইন আহম্মদ জানিয়েছিলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি, আনসার আল ইসলাম এবং হুজির সাবেক কিছু সদস্য ২০১৭ সালে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনটির কার্যক্রম শুরু করেন। পরবর্তীকালে ২০১৯ সালে সংগঠনটি ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ (হিন্দুস্থানের পূর্বাঞ্চলীয় জামাতুল আনসার) নাম নেয়।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;