চার শতাধিক কনফেকশনারি বিপাকে,বেকারিশিল্পে আর্থিক ক্ষতি শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে

চার শতাধিক কনফেকশনারি বিপাকে,বেকারিশিল্পে আর্থিক ক্ষতি শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে

নাজিম মুহাম্মদ।।

রমজানকে ঘিরে নানা পদের খাদ্যপণ্য সামগ্রী তৈরি করে থাকে অভিজাত মিষ্টি বিপণী বনফুল। নগরী ও নগরীর বাইরের আউটলেটগুলোকে সাজানো হয় বাহারি সাজে। গ্রাহকের কথা বিবেচনা করে তৈরি করা হয় হালিম কিংবা ফিরনির মতো বাড়তি মুখরোচক খাবার। তবে ৩০ বছরের ব্যবসায় এ প্রথম রমজানকে ঘিরে তাদের নেই কোন বাড়তি আয়োজন। করোনায় সবকিছুই যেন বদলে গেলো।

বেকার সময় কাটছে বনফুলের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ১৬ হাজার কর্মী। শুধুই বনফুল নয়। একই অবস্থা ওয়েল ফুড, ফুলকলি, মধুবন, হাইওয়ে, সিজল,লাক্সারী, ফ্লেভারসসহ ছোটবড় প্রায় চার শতাধিক কনফেকশনারি, মিষ্টি ও মিষ্টিজাত তৈরি প্রতিষ্ঠানের। বেকারি শিল্প ব্যবসার ওৎপ্রোতভাবে জড়িত দুগ্ধ শিল্প। তাই স্বনামধন্য বেকারির মালিকরা নিজেদের ব্যবসা নিয়ে যতই না বেশি চিন্তিত তার চেয়ে বেশি চিন্তিত দুগ্ধ শিল্পে জড়িত খামারিদের নিয়ে। কারণ দুধের খামার বন্ধ হয়ে গেলে করোনার প্রভাব কেটে যাবার পর চরম বিপাকে পড়বে বেকারি শিল্প। এ অবস্থায় দুগ্ধ ও পোল্ট্রি শিল্প বাঁচিয়ে রাখা খুবই জরুরি বলে মনে করছেন মিষ্টি ও মিষ্টিজাত পণ্য বিপণন তৈরির সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, বেকারি বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রীর সাথে পোল্ট্রি ও দুগ্ধ শিল্প ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। এ শিল্প টিকে না থাকলে করোনা পরবর্তী বেকারি শিল্প মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে।

করোনায় চরম বিপাকে পড়েছে বেকারি শিল্প। টানা অঘোষিত ‘লকডাউনে’ কারখানা বন্ধ থাকলেও এখনো কর্মচারিদের বেতন ভাতা বন্ধ করেনি কোন প্রতিষ্ঠান। অনেক কর্মচারি বাড়িতে আবার অনেকে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করছেন। করোনার টানা বন্ধে বেকারিশিল্পে আর্থিক ক্ষতি ছাড়িয়ে যাবে শত কোটি টাকা।

বনফুল এন্ড কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আমান উল্লাহ জানান, চট্টগ্রাম ছাড়াও ঢাকা, সিলেট, ফেনী, ও খুলনায় পাঁচটি অঞ্চলে স্বতন্ত্র কারখানায় উৎপাদিত মিষ্টি ও কনফেকশনারি সামগ্রী বিক্রি করছে বনফুল ও একই গ্রুপের আরেক প্রতিষ্টান কিষোয়ান। প্রায় ৮০ ধরনের মিষ্টি তৈরির এ প্রতিষ্ঠান বনফুল ও কিষোয়ান দেশের সীমানা ছাড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের ২৫ টি দেশে খাদ্যপণ্য রপ্তানী করছে।

আমান জানান, নগরীর নাসিরবাদে বনফুলের মিষ্টি ও কনফেকশনারি, পটিয়াতে ড্রাই ফুড তৈরি ও কিষোয়ান স্ম্যাকস এবং ষোলশহরে কিষোয়ান এগ্রো প্রোডাক্টসের কারখানা রয়েছে। কুমিল্লার সোয়াগাজিতে রয়েছে বেভারেজ প্ল্যান্ট। গত ২৬ মার্চের পর থেকে সব কারখানা টানা বন্ধ রয়েছে। কারখানায় কোন কাজ না থাকলেও শ্রমিকদের বেতন ভাতা এখনো ঠিকমতো দিয়ে যাচ্ছেন বনফুল গ্রুপ। তবে কতদিন দিতে পারবেন তা নিশ্চিত করে বললে পারেননি। আমান বলেন, করোনার সময়কালে বনফুলের চট্টগ্রাম এলাকাতেই মাসিক আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা।

করোনার প্রাদুর্ভাবে নগরীর ২৩টি বিক্রয় কেন্দ্র বন্ধ অভিজাত বেকারি ওয়েল ফুডের। তবে তারা সীমিত পরিসরে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পাঁচটি বিক্রয় কেন্দ্র খোলা রেখেছে সকাল নয়টা থেকে বিকের পাঁচটা পর্যন্ত। জানতে চাইলে ওয়েলফুডের পরিচালক সৈয়দ আসিফ হাসান জানান, করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে যা নিয়ম রয়েছে তা বজায় রেখে গ্রাহকের কথা মাথায় রেখে আমরা পাঁচটি বিক্রয়কেন্দ্র নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খোলা রেখেছি। তবে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নয়। গ্রাহকের কথা বিবেচনায় রেখে পাঁচটি বিক্রয় কেন্দ্র খোলা রাখা হলেও স্বাভাবিক সময়ে যেসব খাদ্যপণ্য সামগ্রী তৈরি করা হতো তার দশ ভাগের একভাগ তৈরি করা হচ্ছে এখন। অনেকটা ভুর্তুকি দিয়ে গ্রাহকের বিষয়টি মাথায় রেখে এ কাজটি আমরা করে যাচ্ছি।

আসিফ জানান, রমজানকে কেন্দ্র করে আমাদের বিশেষ কিছু আইটেম থাকে। কিন্তু এ বছর তা করা হচ্ছে না। কারণ ক্রেতা না থাকলে পণ্য তৈরি করে বিক্রি করবো কোথায় যেমন-ওয়েলফুডের আট ধরনের ঝাল নাস্তা রয়েছে। বর্তমানে তৈরি হচ্ছে তিন ধরনের। একইভাবে ১৩ ধরনের রুটির মধ্যে দুই রকমের, আট রকমের নানরুটির মধ্যে এক রকমের নান তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া পণ্য তৈরির উপাদান, প্যাকেট তৈরির সাথে যারা জড়িত প্রতিষ্টানগুলোও বন্ধ। সৈয়দ আসিফ জানান, ওয়েলফুডের বিভিন্ন খাদ্যপণ্য সামগ্রী তৈরির সাথে জড়িত রয়েছে প্রায় ৬’শ কর্মচারী। কারখানা বন্ধ থাকলেও সব কর্মচারির বেতন ভাতা দিতে হচ্ছে। করোনার এ দুর্দিনে তারাই বা যাবে কোথায়।

সিজলের পরিচালক শহীদুল্লাহ কোরাইশি জানান,বেকারি-ফাস্টফুড ও মিষ্টিজাত পণ্য তৈরি করে থাকে সিজল। কারখানায় ও বিক্রয়কেন্দ্র মিলে সিজলের কর্মরত রয়েছে প্রায় এক হাজার কর্মচারী। সীমিত পরিসরে কাজ চলছে। যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ২৫ শতাংশ। কারখানা বন্ধ থাকলেও কাউকে এ মুহূর্তে বিদায় করা সম্ভব নয়। তাছাড়া বেকারি শিল্পে কর্মরত কারিগররা একেকজন একেক বিষয়ে অভিজ্ঞ। অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কারিগর সব সময় পাওয়া যায় না।কারখানা পুরোপুরি বন্ধ থাকলেও এপ্রিল মাস থেকে কর্মচারিদের ৫০ শতাংশ বেতন দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সিজল কর্তৃপক্ষের।