চট্টগ্রাম-৪ আসনে আওয়ামীলীগের একাধিক প্রার্থী, মাঠে আছে অন্য দলের প্রার্থীরাও

চট্টগ্রাম-৪ আসনে আওয়ামীলীগের একাধিক প্রার্থী, মাঠে আছে অন্য দলের প্রার্থীরাও
চট্টগ্রাম-৪ আসনে আওয়ামীলীগের একাধিক প্রার্থী, মাঠে আছে অন্য দলের প্রার্থীরাও

মেজবাহ উদ্দীন খালেদ ।।

চট্টগ্রাম-৪ আসনে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন একাধিক দলীয় রাজনীতিক। আর একক প্রার্থিতা মোটামুটিভাবে নিশ্চিত হওয়ায় মাঠে পুরোদমে সক্রিয় রয়েছেন বিএনপি-জামায়াত আর জাপা নেতারা।

নির্বাচনের কাউন্ট-ডাউন শুরু হয়ে গেছে। স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক দলগুলো নিচ্ছে নির্বাচনি প্রস্তুতি। ভোটাররাও ব্যস্ত বিগত দিনে তাদের চাওয়ার-পাওয়ার হিসাব মেলাতে। সব মিলিয়ে চারদিকে জোরেশোরেই বইছে নির্বাচনকেন্দ্রিক হাওয়া।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ৫ মাস। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জোরেশোরে শুরু হয়েছে প্রচারণা ও মনোনয়নের লড়াই। সম্ভাব্য প্রার্থীরা গণসংযোগের পাশাপাশি করছেন শোডাউন এবং সভা-সমাবেশ। এ প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। যদিও জাতীয় সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও বসে নেই।

গত কয়েক মাস ধরেই ক্ষমতাসীন দল থেকে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক নেতারা বিভিন্ন জাতীয় দিবসে মিছিল ও শোডাউন চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনের আগে বড় শোডাউন করার সুযোগ মিলেছে। দলীয় যেকোনো আলোচনা সভার আগ মুহূর্তে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বিশাল মিছিল করছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।

তবে আগামী সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সীতাকু-ে একাধিক নেতা প্রার্থী হওয়ার লড়াইয়ে থাকলেও বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পাটির একক প্রার্থিতা নিশ্চিত করা করেছে। চট্টগ্রাম-৪ সংসদীয় আসন চট্টগ্রামের সীতাকু- উপজেলা এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ৯ এবং ১০ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হন দিদারুল আলম। এবারও তিনি দলের মনোনয়ন চাইবেন। তার পাশাপাশি মনোনয়ন দৌড়ে আছেন সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়া, সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম আবুল কাশেম মাস্টারের ছেলে বর্তমান সীতাকুণ্ড উপজেলা চেয়ারম্যান ও সীতাকু- উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আল মামুন। তা ছাড়াও মনোনয়ন পেতে মাঠের লড়াইয়ে আছেন সীতাকু- উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহ-সভাপতি মোস্তফা কামাল চৌধুরীও।

এ ছাড়া মাঠে নেমেছেন একসময়ের জাতীয় পার্টির মনোনীত উপজেলা চেয়ারম্যান শিল্পপতি ইমতিয়াজ ইকরামের ছোট ভাই মোহাম্মদ ইমরান। তিনিও সরকারি দলের হয়ে মনোনয়ন চাচ্ছেন। তিনি ছাড়াও মাঠে আছেন শিল্পপতি পারভেজ উদ্দীন চৌধুরী সান্টুও।

অন্যদিকে বিএনপির হয়ে মনোনয়ন পেতে পারেন দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব কারাবন্দি আসলাম চৌধুরী। তার বাইরে কেউ প্রার্থিতার ঘোষণা দেননি। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন জামায়াতের সীতাকুণ্ড দক্ষিণের আমির আনোয়ার সিদ্দিক চৌধুরী।

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব দিদারুল কবির দিদার গত নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন। এবারও তিনি প্রার্থিতার জন্য লড়বেন। তবে সীতাকু-ে তেমন থাকেন না তিনি। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও অতটা সরব নন।

এ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ দিদারুল আলম বলেন, আমি আজীবন মানুষের সঙ্গে থাকতে চাই। মানুষের জন্য কাজ করে, মানুষের জন্য মরতে চাই। আমি চট্টগ্রাম-৪ থেকে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সীতাকুণ্ডের উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছি। সারা দেশের মতো সীতাকু-েও ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সীতাকুণ্ডের আনাচে-কানাচে আমি একজন সেবক হিসেবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাচ্ছি। আমাকে যদি প্রধানমন্ত্রী আবারও সীতাকু-ের মানুষের সেবা করার সুযোগ দেন তা হলে উন্নয়নের যাত্রা অব্যাহত থাকবে।

আর সীতাকুণ্ড উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আল মামুন বলেন, আমি আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দেবেন। তবে প্রধানমন্ত্রী যাকেই মনোনয়ন দেবেন সবাই মিলে তার জন্য আমরা জয় ছিনিয়ে আনব।

সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কৃষক লীগ নেতা মোস্তফা কামাল চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে চট্টগ্রাম-৪ আসনে সঠিক প্রার্থী নির্বাচিত করবেন এ নিয়ে সন্দেহ নেই। আমিও সুযোগ পেলে সর্বোচ্চ উদ্যমে নির্বাচনি এলাকায় কাজ করে যাব।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক লায়ন আলহাজ মোহাম্মদ ইমরান বলেন, দলের নীতি ও আদর্শকে সামনে রেখে জনগণের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচারে সীতাকুণ্ডের সব ইউনিয়ন চষে বেড়িয়েছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন সে স্বপ্নের সহযাত্রী হতে চাই।

আর শিল্পপতি পারভেজ উদ্দীন চৌধুরী সান্টু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একবার সীতাকু-বাসীর সেবা করার সুযোগ চাই। যদি দল মনোনয়ন দেয় তা হলে সীতাকুণ্ডে আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী করতে পারব।

এই আসনে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন কারাবন্দি লায়ন আসলাম চৌধুরী এফসিএ। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব। তবে আসলাম চৌধুরী সীতাকুণ্ডে বিএনপির একক প্রার্থী হওয়া নিয়ে শঙ্কিত নেতাকর্মীরা। কারণ তিনি দীর্ঘদিন ধরেই কারাগারে রয়েছেন।

বিএনপি প্রার্থী লায়ন আসলাম চৌধুরীর পক্ষে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জহুরুল আলম জহুর বলেন, সীতাকুণ্ড উপজেলা বিএনপিতে দলীয় কোনো কোন্দল নেই। আসলাম চৌধুরী সীতাকুণ্ডে বিএনপির একমাত্র প্রার্থী। সীতাকু- আসনে লায়ন আসলাম চৌধুরী এফসিএ বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন-এতে কোনো সন্দেহ নেই।

অন্যদিকে প্রচারণায় নেমেছেন জাতীয় পাটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আলহাজ দিদারুল কবির দিদার। তিনি প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি এলাকার বিভিন্ন উন্নয়ন কার্মকাণ্ডেও ভূমিকা রাখছেন। তিনি মহাজোট থেকে চট্টগ্রাম-৪ আসনে প্রার্থী হওয়ার আশা প্রকাশ করছেন।

দিদারুল কবির দিদার বলেন, চট্টগ্রাম-৪ আসন থেকে আমি নির্বাচন করছি এটা নিশ্চিত। তবে সেটা কীভাবে করছি বা কীভাবে করব সেটা আরও কিছু সময় গেলে জানবেন। মহাজোট থেকে না হলেও আমি জাতীয় পার্টি থেকে একক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করব।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী মাঠ গোছাতে ব্যস্ত। জামায়াত এককভাবে আসনটি পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সেখানে তাদের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন সাবেক শিবির নেতা আনোয়ার সিদ্দিকী চৌধুরী।

সৌন্দর্য আর অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ এই আসন রাজনৈতিকভাবেও অন্য এলাকার চেয়ে আলোচনায় স্থান পায় বেশি। কারণ ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় ১৯৭০ সাল থেকে সর্বশেষ ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই উপজেলা থেকে যে দলের প্রার্থী জয়লাভ করেছেন সেই দলই সরকার গঠন করেছে।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;