ব্যবসায়ীরা আবারও শেখ হাসিনাকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান

ব্যবসায়ীরা আবারও শেখ হাসিনাকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান
ব্যবসায়ীরা আবারও শেখ হাসিনাকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান

বিশেষ প্রতিবেদক, ঢাকা ।।

ব্যবসায়ীরা আবারও শেখ হাসিনাকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান। বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। তাঁরা মনে করেন, জ্বালাও-পোড়াও আর হরতাল-অবরোধের যুগে ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারও ফিরিয়ে আনার কারণ নেই।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শনিবার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত ব্যবসায়ী সম্মেলনে এসব কথা বলেন দেশের বিভিন্ন খাতের শীর্ষ ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীরা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিসহ সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনার সূচনা থেকে শেষ পর্যন্ত আমদানি, রপ্তানি, উৎপাদন এবং সেবা খাতের শীর্ষ ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী নেতারা নিজ নিজ খাতের উন্নয়ন নিয়ে কথা বলেন। তাঁরা গত ১৪ বছরে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যেতে সরকারের সহযোগিতার জন্য ঘুরেফিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন। তাঁরা যেকোনো মূল্যে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তাঁর নেতৃত্বের সরকারকে সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তাঁদের অনেকে যেকোনো ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরোধিতা করেন।

সূচনা বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আপনি (প্রধানমন্ত্রী) যেভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং আমাদের (ব্যবসায়ীদের) যে অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে, সেটিকে ধরে রাখার জন্য আপনাকে (প্রধানমন্ত্রীকে) প্রয়োজন।’ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘সুতরাং আমরা মনে করি, আপনাকে আমাদের প্রয়োজন। আপনাকে আবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকতে হবে। আমাদের জন্য, ব্যবসায়ীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী থাকতে হবে।’

শুভেচ্ছা বক্তব্যে এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, ‘দেশীয় শিল্পের বিকাশ, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিদেশি বিনিয়োগ

আকর্ষণ, অবকাঠামো উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী মেগা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। বিশ্ব র‍্যাংকিংয়ে নিজেদের অবস্থান আরও উন্নত হবে। সে জন্য শেখ হাসিনার সরকার, বারবার দরকার।’

ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের (আইসিসি) সভাপতি ও বয়োজেষ্ঠ ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়েছেন। কিন্তু জ্বালানির অভাবে এখন উৎপাদন করা যাচ্ছে না। বিদ্যুতের দিকটা অগ্রাধিকার দিতে হবে।’

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘আজ আরেকটা কথা আমার বলতে হয়, এখানে যাঁরা আছেন তাঁরা অনেকেই ওয়ান-ইলেভেনে জেলে গেছেন, অত্যাচারিত হয়েছেন। আমার সৌভাগ্য আমি বাংলাদেশে ছিলাম না। তবু আমার কর্মচারীদের জেলে নিয়ে গেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানে আবার সেই এক-এগারোর সরকার। এই স্বপ্ন যদি কেউ দেখে, আমার মনে হয় আমাদের এই ব্যবসায়ীরা যথেষ্ট, এটাকে কীভাবে প্রতিহত করতে হবে। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্বপ্ন দেখে আর কারও কোনো লাভ নাই।’

আহমেদ আকবর সোবহান আরও বলেন, ‘ষড়যন্ত্র হচ্ছে, আবার তত্ত্বাবধায়কের নামে এক-এগারোর সরকার নিয়ে আসবে এবং যত বিত্তশালী, ১৫ বছর, ২০ বছর, ৫০ বছর ধরে যাঁরা আজ সমাজে একটা প্রতিষ্ঠিত অবস্থানে গেছেন তাঁদের ওপর একটা জুলুম-অত্যাচার হবে।’

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সব ধরনের ব্যবসা করেন মন্তব্য করে ব্যাংকমালিকদের সংগঠন বিএবির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, ‘তাঁর নেতৃত্বে গাড়ি, চালের ব্যবসা, গার্মেন্টস, ইলেকট্রনিক খাতসহ সব ব্যবসায়ী একত্র হয়েছি। সব সময় বলি, শেখ হাসিনার সরকার, আজীবন দরকার।’

নজরুল ইসলাম মজুমদার আরও বলেন, ‘আমরা তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ বুঝি না, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। আমরা আমাদের আপাকে আবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই। তিন মাস পরে আবার এমন একটা আয়োজন হবে।’

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী স্বপ্ন দেখান, আমাদের দিয়ে তা বাস্তবায়ন করান। এখন আমরা স্বপ্ন দেখাব, প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশে ইলেকট্রিক গাড়ি আসবে। যে গাড়ি মেইড ইন বাংলাদেশের হবে, ড্রাইভার লাগবে না।’

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন বলেন, ‘পৃথিবীতে কোনো দেশে প্রধানমন্ত্রী বসে ৫ ঘণ্টা মানুষের কথা শোনেন? মানুষকে ভালোবাসেন বলেই তিনি আমাদের সঙ্গে আছেন।’

প্রধানমন্ত্রীর সাহসিকতায় পদ্মা সেতু হয়েছে মন্তব্য করে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, ‘গত ১৪ বছরে প্রধানমন্ত্রী যে উন্নয়ন করেছেন, ইতিহাসে কোনো দেশে তাড়াতাড়ি এত উন্নয়ন হয়েছে কি না জানি না। অনাগত দিনে আপনার নেতৃত্ব বাংলাদেশকে আরও উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যাবে।’

শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী আছেন বলেই ব্যবসায়ীরা নিরাপদে ব্যবসা করতে পারছেন বলে মন্তব্য করেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ। তিনি বলেন, ‘তাই শেখ হাসিনার সরকার, বারবার দরকার। কবীর সুমনের ভাষায়, প্রথমত আমি তোমাকে চাই, শেষ পর্যন্ত আমি তোমাকে চাই, ভীষণ অসম্ভবেও আমি তোমাকে চাই।’

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তিনি ১৫ বছর ধরে ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক করেছেন। আমরা যদি আগামী দিনে সমর্থন করি, তাহলেই স্মার্ট বাংলাদেশ হবে।’

ডিসিসিআই সভাপতি সামির সাত্তার বলেন, ‘২০২৬ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হতে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন তাঁর অবর্তমানে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। আশা করি আগামীতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করতে পারব।’

দেশের তিন থেকে চার কোটি ব্যবসায়ী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থাকবেন বলে জানান বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম।

প্রধানমন্ত্রীকে নিজেদের মনোবল অভিহিত করে বিকেএমইএর সভাপতি সেলিম ওসমান বলেন, ‘গ্যাসের দাম বাড়ে, আমরা সহ্য করি; বিদ্যুতের দাম বাড়ে, আমরা সহ্য করি। কারণ, আমরা জানি, আপনি আমাদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন, আগামীতে আমরা আবার জেগে উঠব। অসমাপ্ত কাজ করার জন্য আপাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পেতে চাই।’

বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘বিজিএমইএর সভাপতি হিসেবে আশ্বস্ত করছি, আপনার নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে পোশাকশিল্প অর্থনৈতিক সেনা হিসেবে আপনার পাশে থাকবে।’

আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য শেখ হাসিনাকে আবার প্রধানমন্ত্রী দেখতে চান বিটিএমএর প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী খোকন।

ওষুধ শিল্প সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল মুক্তাদির বলেন, ‘গত ১৫ বছরে প্রধানমন্ত্রী দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছেন। আশা করি এই ধারাবাহিকতা সামনেও অব্যাহত থাকবে।’

এমসিসিআই সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দেশকে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই। আমরা আপনার ও আপনার সরকারের সঙ্গে রয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টি ও স্মার্ট পরিকল্পনায় পদ্মা সেতু হয়েছে জানিয়ে এইচএসবিসি বাংলাদেশের সিইও মাহবুবুর রহমান বলেন, এই সেতু ব্যবসা-বাণিজ্য, সামাজিক ও পারিবারিকভাবে অনেক প্রভাব রেখেছে। ২০৩০ সালে বাংলাদেশ ২৬তম অর্থনীতি এবং ৯ম বৃহৎ ভোক্তাবাজার হবে। এ দুটিকে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশের ধারাবাহিকতা দরকার।

উইমেন চেম্বারের সভাপতি সেলিমা আহমাদ এমপি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কাজ করছেন স্মার্ট বাংলাদেশের। তাই শেখ হাসিনার সরকার, বারবার দরকার।’

চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বারের সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণ ও স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে বর্তমান সরকারের কোনো বিকল্প নেই। আগামী নির্বাচনে বর্তমান সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর জয় হবেই হবে।’

প্রায় ৬ ঘণ্টাব্যাপী ওই সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন মেট্রোপলিটন চেম্বারের সাবেক সভাপতি নিহাদ কবির, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ, দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন আহমেদ, ইউনিটেক্স বাংলাদেশের সিইও জাবিয়ার কার্লোস, জাপান বাংলাদেশ চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মাইয়ং হো লি প্রমুখ ।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;