করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সতর্কতা

করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সতর্কতা

ডা. শামীম আহমেদ।।

কোনো ব্যক্তির জ্বর যদি ১০০ ফারেনহাইট বা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকে এবং এর সঙ্গে কাশি, সর্দি, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি থাকে তিনি বিগত ১৪ দিনের মধ্যে চীন বা অন্য কোনো আক্রান্ত দেশ সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ইতালি, ইরান ইত্যাদি ভ্রমণ করে থাকেন। অথবা ওই সময়সীমার মধ্যে নিশ্চিত বা সম্ভাব্য আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এসে থাকেন, তবে ওই ব্যক্তি করোনাভাইরাস আক্রান্ত ‘সন্দেহজনক রোগী’ হিসেবে বিবেচিত হবেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে এমন সন্দেহজনক রোগীকে হাসপাতালে পৃথক করে চিকিৎসা ও মনিটরিং হওয়া উচিত। বিভিন্ন কারণে হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থা যদি অপ্রতুল হয় অথবা রোগী যদি হাসপাতালে থাকতে রাজি না হয় সেসব রোগীকে বাড়িতে স্বাস্থ্যসেবা বা পরিচর্যার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।

এক্ষেত্রে রোগীর যদি মৃদু সংক্রমণ থাকে। অর্থাৎ অল্প জ্বর, কাশি, গায়ে ব্যথা, সর্দি, গলাব্যথা এবং কোনো বিপদ চিহ্ন শ্বাসকষ্ট, অতিরিক্ত কফ, কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া, ডায়রিয়া এবং বমি, বমি বমি ভাব, মানসিক অবস্থার পরিবর্তন নিস্তেজ ভাব ইত্যাদি না থাকে এবং অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা, যেমন- শ্বাসতন্ত্র বা হৃদরোগের সমস্যা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে এমন অসুস্থতা না থাকে, তবে তারা বাড়িতে স্বাস্থ্যসেবা বা পরিচর্যা পেতে পারেন। স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিদিন ফোনে অথবা সম্ভব হলে, বাড়িতে গিয়ে তাদের বর্তমান শারীরিক অবস্থা ও উপসর্গের অবনতি হচ্ছে কি না খোঁজখবর নেবেন।

রোগীর জন্য নির্দেশনা :
* জ্বর থাকলে নিয়মিত তাপমাত্রা পরিমাপ করুন।
* যদি নতুন উপসর্গ দেখা দেয় বা আগের উপসর্গের অবনতি হয় (যেমন শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়), তবে অতিদ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
নতুন উপসর্গ দেখা দেয় বা আগের উপসর্গের অবনতি হয় তা হলে চিকিৎসকের বা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর কাছে যাওয়ার আগে তাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করুন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহভাজন রোগী তা জানান। আগেই জানালে অন্য সুস্থ ব্যক্তিরা যেন আক্রান্ত না হয় বা সংস্পর্শে না আসে এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর পক্ষে সাবধানতা অবলম্বন করা সম্ভব হবে।
* ভ্রমণের সময় এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রবেশের আগে মুখে মাস্ক ব্যবহার করুন।
* গণপরিবহন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন এবং সম্ভব হলে অ্যাম্বুলেন্স বা নিজস্ব পরিবহন ব্যবহার করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাবেন এবং যাত্রাকালে পরিবহনের জানালা খোলা রাখুন।
* সর্বদা শ্বাসতন্ত্রের স্বাস্থ্যবিধি (বিশেষ করে, কাশি শিষ্টাচার) মেনে চলুন, হাত ওপরের নিয়মে পরিচ্ছন্ন রাখুন এবং চলাচলের সময় ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অবস্থানকালে অন্যদের থেকে ১ মিটার (৩ ফিট) দূরত্ব বজায় রাখুন।
* শ্বাসতন্ত্র বা অন্য কোনো প্রদাহের (সর্দি, থুতু, কাশি, বমি ইত্যাদি) কারণে যদি যানবাহনের কোনো অংশ নোংরা হয়, তবে নিয়মানুযায়ী জীবাণুমুক্ত করুন।

চিকিৎসাসেবা নেওয়া ছাড়া নিজ বাড়িতে থাকুন
* হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নেওয়া ছাড়া বাড়ির বাইরে যাবেন না।
* বাড়ির বাইরে কাজে, স্কুল, কলেজ অথবা জনসমাগমে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
* গণপরিবহন ব্যবহার, অন্যদের সঙ্গে একই যানবাহন অথবা ট্যাক্সি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।

বাড়ির অন্য সদস্যদের থেকে আলাদা থাকুন
* আলো-বাতাসের সুব্যবস্থা সম্পন্ন আলাদা ঘরে থাকুন এবং অন্য সদস্যদের থেকে আলাদাভাবে থাকুন। তা সম্ভব না হলে অন্যদের থেকে অন্তত ১ মিটার (৩ ফুট) দূরে থাকুন (ঘুমানোর জন্য পৃথক বিছানা ব্যবহার করুন)।
* যদি সম্ভব হয় তা হলে আলাদা গোসলখানা এবং টয়লেট ব্যবহার করুন। সম্ভব না হলে, অন্যদের সঙ্গে ব্যবহার করতে হয় এমন স্থানের সংখ্যা কমান ও ওই স্থানগুলোতে জানালা খুলে রেখে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করুন।
* বুকের দুধ খাওয়ান এমন মা, বুকের দুধ খাওয়াবেন। শিশুর কাছে যাওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করুন এবং ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন।

মাস্ক ব্যবহার করুন
* জনসমাগমে (ঘরে অথবা যানবাহনে) এবং কোনো স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে প্রবেশ করার আগে মাস্ক ব্যবহার করুন।
* রোগীর মুখে মাস্ক পরা সম্ভব না হলে (যদি মাস্কের কারণে শ্বাসকষ্ট হয়), বাড়ির অন্য সদস্যরা রোগীর সংস্পর্শে এলে বা তার ঘরে ঢুকলে, রোগীর ঘরে প্রবেশের আগে মুখে মাস্ক পরবেন।
* মাস্ক পরে থাকাকালে এটি হাত দিয়ে ধরা থেকে বিরত থাকুন।
* মাস্ক ব্যবহারের সময় প্রদাহের (সর্দি, থুতু, কাশি, বমি ইত্যাদি) সংস্পর্শে এলে সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক খুলে ফেলুন এবং নতুন মাস্ক ব্যবহার করুন।
* মাস্ক ব্যবহারের পর ঢাকনাযুক্ত ময়লার পাত্রে ফেলুন এবং সাবান-পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন।
হাত ধোয়া
* হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে অথবা সাবান ও পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোবেন (বিশেষ করে যদি হাত দেখতে নোংরা লাগে সাবান-পানি ব্যবহার করুন)।
* অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করবেন না।
* সাবান-পানি ব্যবহারের পর টিস্যু দিয়ে হাত শুকনো করে ফেলুন। টিস্যু না থাকলে শুধু হাত মোছার জন্য নির্দিষ্ট তোয়ালে বা গামছা ব্যবহার করুন এবং ভিজে গেলে বদলে ফেলুন।

মুখ ঢেকে হাঁচি-কাশি দিন
* হাঁচি-কাশির সময় টিস্যুপেপার/মেডিকেল মাস্ক/কাপড়ের মাস্ক/বাহুর ভাঁজে মুখ ও নাক ঢেকে রাখুন এবং নিয়মানুযায়ী হাত পরিষ্কার করুন।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক (বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)