আজও থাকছে শীতের তীব্রতা, রোগীর ভিড় হাসপাতালে

আজও থাকছে শীতের তীব্রতা, রোগীর ভিড় হাসপাতালে
আজও থাকছে শীতের তীব্রতা, রোগীর ভিড় হাসপাতালে

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শৈত্যপ্রবাহ অন্তত আরও দুয়েকদিন চলবে বলে। উত্তরী হিমেল হাওয়ার দাপটে রাজধানীসহ দেশের মধ্যাঞ্চলেও রয়েছে শীতের তীব্রতা।

এদিকে চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানানো হয়েছে ১৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া শৈত্যপ্রবাহ ২১ ডিসেম্বর (আজ) পর্যন্ত চলবে। গতকাল শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল চট্টগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সীতাকুণ্ডে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি পালের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা বাংলানিউজের খবরে বলা হয়, চট্টগ্রামে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার গতিতে বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। বাতাসের কারণে শীত বেশি অনুভব হচ্ছে। উত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসা বাতাসের কারণে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। দেশজুড়ে চলমান মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে ঘন কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। দীর্ঘ সময় কুয়াশা থাকার ফলে সূর্যের আলো কম পড়ছে। এর প্রভাব পড়ছে রাতে। এতে রাতের বেলায় শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে।

উজ্জ্বল কান্তি পাল বলেন, শনিবার (আজ) পর্যন্ত শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে, এরপর তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে। জানুয়ারি মাসের শুরুতে আবারও শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সেইসঙ্গে মধ্য রাত থেকে সকাল পর্যন্ত নদী অববাহিকা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

বিডিনিউজের এক খবরে বলা হয়, শৈত্য প্রবাহের মধ্যে দেশের হাসপাতালগুলোতে তিন দিনে প্রায় ছয় হাজার ডায়রিয়ার রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পাঁচ হাজার ৯০৫ জন হাসপাতালে গিয়েছেন, যার মধ্যে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় চিকিৎসা নেন দুই হাজার ৭ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, এর মধ্যে চট্টগ্রামে ডায়রিয়ায় ৪৩৮ জন, শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে ১৪৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে জানানো হয়, চলতি ডিসেম্বরের শেষদিকে এবং ২০২০ সালের জানুয়ারি (পৌষ-মাঘ) মাসে দেশের ওপর দিয়ে দুই থেকে তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি এবং দু’টি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

জানুয়ারি দেশের শীতলতম মাস। শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হবে জানুয়ারি মাসেই। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি গিয়ে শেষ হবে বাংলা বর্ষপঞ্জির মাঘ মাস। তবে এবার তুলনামূলকভাবে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহের স্থায়িত্বকাল বেশি হতে পারে। যাতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদ ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কিছু কম-বেশি হতে পারে বলে আবহাওয়াবিদরা ধারণা করছেন।

এদিকে আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক গতকাল সকালে বিডিনিউজকে বলেন, তাপমাত্রা বৃহস্পতিবারের থেকে সামান্য বাড়লেও শৈত্যপ্রবাহের পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বিরাজমান এই আবহাওয়া আরও অন্তত দুয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের উপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। শৈত্যপ্রবাহের বিস্তার আরও বাড়বে। মেঘাচ্ছন্ন ও কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার আভাস তুলে ধরে সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করেছে হাইওয়ে পুলিশ।

হাইওয়ে পুলিশের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ঘন কুয়াশার কারণে দৃষ্টি সীমা অনেকাংশে কমে আসছে। এর কারণে সামনের পথচারী ও বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় না। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। এ অবস্থায় বাস্ট্যান্ডে অবস্থানরত ও মহাসড়কে চলাচলরত যানবাহনের চালকদের কুয়াশাচ্ছন্ন রাস্তায় ফগলাইট ব্যবহার ও গতিসীমা সীমিত রেখে বেশি সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

কুয়াশার কারণে রাতে নদী পারাপারে ফেরী চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সাত ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায়। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা কম থাকলে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলে ধরা হয়। থার্মোমিটারের পারদ ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে। আর পারদ ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ চলছে বলে ধরা হয়।

পৌষের শুরুতে কুয়াশার চাদর ও শৈত্যপ্রবাহকে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তারা বলছে, উচ্চ চাপ বলয় ও উত্তর-পশ্চিমা শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহ (জেড বায়ু) বেশি সক্রিয় থাকায় এবং কুয়াশা ও জলীয় বাষ্পে আর্দ্রতা বেশি হওয়ায় শীতও তীব্র অনুভূত হচ্ছে। এ সময় কুয়াশাস্তর নিচে নেমে আসায় মেঘলা আবহাওয়াও বিরাজ করছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, পৌষ মাসে এমন আবহাওয়া খুবই স্বাভাবিক বিষয়। ডিসেম্বরের শেষভাগে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ থাকবে।