বাসে তুলে দিয়ে ছেলে ও ছেলের বউ বলেছে, 'আর কোনোদিন বাসায় আসবে না'

বাসে তুলে দিয়ে ছেলে ও ছেলের বউ বলেছে, 'আর কোনোদিন বাসায় আসবে না'
বাসে তুলে দিয়ে ছেলে ও ছেলের বউ বলেছে, 'আর কোনোদিন বাসায় আসবে না'

হিলি প্রতিনিধি।।

বৃদ্ধা শাকিলা বেগম। বয়স আনুমানিক ৮০ বছর। গত এক সপ্তাহ ধরে তাকে দেখা যাচ্ছে দিনাজপুরের হাকিমপুর হিলি স্থলবন্দর এলাকার সিপি মোড়ে এক বাড়ির নিচে। তেমন কথা বলেন না কারও সঙ্গে। উদাস দৃষ্টিতে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকেন। কেবল ঢাকায় যেতে চান। কোথা থেকে এসেছেন জিজ্ঞেস করলেই কেঁদে ফেলেন। বারবার বলেন, বাসায় যাব। তাকে দেখে ওই বাড়ির নিচ তলার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম সুইটের মায়া হয়। গিয়ে কথা বলেন। কিন্তু বৃদ্ধা শাকিলা জানেন না তার ঠিকানা। এক পর্যায়ে জানান- তাকে বাসে তুলে দিয়ে ছেলে ও ছেলের বউ বলেছে, ‘আর কোনোদিন বাসায় আসবে না।’ ছেলের ফোন নাম্বারও জানেন না।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, চার ছেলেমেয়ে তার। মেয়েদের সবার বিয়ে হয়ে গেছে। থাকতেন ছেলের কাছে। ছেলের নাম জামিল হোসেন। ঢাকায় তার বাসা। কয়েক দিন আগে তার ছেলে আর ছেলের বউ একটি কাপড়ের ব্যাগ দিয়ে বাসে উঠিয়ে বলেছে যেন বাড়ি না ফেরেন তিনি। শাকিলাকে দেখে বাসের লোকেরা তার ছেলের নাম্বার চাইলেও দেওয়া হয়নি সেটি। শাকিলা জানেন না তার গন্তব্য কোথায়। উপায় না দেখে বাসের ড্রাইভার তাকে হিলির সিপি মোড়ে নামিয়ে দিলে সেখানেই বসে থাকেন তিনি।

সিপি মোড়ে হিলি-বিরামপুর রোডে সিএনজিচালক শাহিনুর ইসলাম বলেন, কয়েক দিন থেকে বৃদ্ধা মহিলাকে এই বিল্ডিংয়ের বারান্দায় থাকতে দেখছি। কখনো বসে থাকেন, আবার কখনো দাঁড়িয়ে থেকে শুধু রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকেন। কিছু বললে শুধু কান্নাকাটি করে বলেন ছেলের বাড়িতে যামু। কেউ কিছু দিলে সেটি খান।

সরেজমিন শনিবার দুপুরে রবিউল ইসলাম সুইটের বারান্দার এক কোণে বসে থাকতে দেখা যায় শাকিলাকে। সুইট বলেন, আমি গত সাত দিন ধরে আমার বাসার বারান্দায় এই বৃদ্ধাকে থাকতে দেখছি। এক পর্যায়ে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি নাম ছাড়া কিছুই বলতে পারছেন না। আমি মাঝে মাঝে তাকে খাবারও কিনে দিয়েছি। তার বয়স প্রায় ৮০ বছর হবে। শুক্রবার আমি তার ছবিসহ ফেসবুকে পোস্ট দেই। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত রায় ফোনে আমাকে বলেছেন উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে তারা। এরপর সমাজসেবা অফিস থেকে একজনের সঙ্গে কথা হয়। কিন্তু দুপুর ২টা পর্যন্ত কেউ আসেনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত রায় বলেন, আমি বৃদ্ধ মহিলার বিষয়ে জানতে পেরেছি। ইতিমধ্যে আমাদের উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে বিষয়টি জানিয়েছি। খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;