সবজির উৎপাদন বেড়েছে সীতাকুণ্ডে , কৃষকেরা পাচ্ছে না ন্যায্য দাম

সবজির উৎপাদন বেড়েছে সীতাকুণ্ডে ,  কৃষকেরা পাচ্ছে না ন্যায্য দাম
সবজির উৎপাদন বেড়েছে সীতাকুণ্ডে , কৃষকেরা পাচ্ছে না ন্যায্য দাম

লিটন কুমার চৌধুরী, সীতাকুণ্ড ।।

এবার সীতাকুণ্ডে সবজির বাম্পার ফলন হলেও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারনে ন্যায্য দাম পাচ্ছে না কৃষকেরা। সীতাকুণ্ডে ৫টি পাইকারী বাজারে এবার দূর-দূরান্ত থেকে সবজি নিয়ে আসা কৃষকেরা লোকসান দিয়ে সবজি বিক্রি করেছেন। তবে উপজেলা কৃষি অফিসের মতে সবজির বাজারমূল্য সহনশীল পর্যায়ে থাকায় কৃষকরা কিছুটা হলেও স্বস্তিতে আছে।
উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে ভাটিয়ারী, কুমিরা বাজার, বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের শুকলাল হাট, পৌরসদরের মোহন্তের হাট ও বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের বড়দারোগার হাট পাইকারি সবজি বাজার। বাজারগুলোতে সপ্তাহে তিনদিন করে হাট বসে। উপজেলার বিভিন্নস্থান থেকে কৃষকরা পাইকারি বিক্রি করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সবজি নিয়ে আসে হাটগুলোতে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পাইকাররা উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে পাইকারি হিসেবে সবজি কিনে ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে নিজের এলাকায় নিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা এলাকায় দুই হাজার সাত শত হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। উৎপন্ন হয়েছে বেগুন, মুলা, টমেটো, বরবটি, শসা, লাউ, কুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ক্ষীরাসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় ৪০হাজার মেট্রিক টন সবজি। এছাড়া প্রায় দুই হাজার আট শত হেক্টর জমিতে শিমের চাষ করা হয়।
সরেজমিনে বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের শুকলাল হাটে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় অর্ধশতাধিক ভ্যান আর ১০টির মত ভটভটি গাড়ী করে চাল কুমড়া, বরবটি, মিষ্টিকুমড়া, বেগুন, শসা, ফুলকপি, বাধাকপি, লাউ, সীম, টমেটো, পালংশাক, লালশাকসহ বিভিন্ন শাকসবজি নিয়ে কৃষকেরা শুকলাল হাট পাইকারি বাজারে ভিড় করছেন। পাইকারি ক্রেতারা ক্রয় করে মহাসড়কে দাঁড়ানো ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে উঠানোর কাজ করছেন। ওই সময় চট্টগ্রাম নগরীর রেয়াজউদ্দিন বাজারের পাইকারি ক্রেতা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘ন্যায্যমূল্য দিয়ে সবজি কিনে নিয়ে যাই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবহনসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় করে বাজারে বিক্রির সময় আমাদের বেশি লাভ থাকে না।’ একই কথা বলেন, নুরুল ইসলাম, দিদারুল আলম সহ কয়েকজন পাইকারি ক্রেতা।
গত শুক্রবার সীতাকুণ্ড পৌরসভার মোহন্তহাটের সবজির পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, সবজি নিয়ে বিক্রির জন্য অপেক্ষা করছেন কৃষকেরা। পাইকারদের কাছে বিক্রির জন্য উপজেলার বিভিন্নস্থান থেকে ভ্যানে করে এখানে সবজি নিয়ে আসেন কৃষকেরা। ব্যবসায়ীরা তাদের কাছ থেকে সবজি কিনে ট্রাক ও মিনিট্রাকে করে চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারগুলোতে নিয়ে আসেন।
বাজারে আসা বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের সবজিচাষি জাহাঙ্গীর আলম জানান, ‘এক বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছি। দু’শ ফুলকপি প্রতিটি দশ টাকা দরে বিক্রি করেছি। বেশি দামে সার ও কীটনাশক কিনেছি। সেচ দিতেও খরচ হয়েছে অনেক টাকা। ফুলকপি উৎপাদন করতে যে টাকা খরচ হয়েছে, তার অর্ধেক দামে বিক্রি করতে পারছিনা। বাজারে আসলে সবাই একদাম কয়।’ একই ধরনের কথা বলেন পার্শ্ববর্তী মিরসরাই উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের কৃষক সামসুল আলম, ইদ্রিস মিয়াসহ আরও কয়েকজন চাষি।
এই বাজারে আসা সৈয়দপুরের শেখেরহাট এলাকার কৃষক প্রদীপ দাশ জানান, তিনি ৪০ শতক জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। এতে খরচ হয় ৭০হাজার টাকা। তবে এ পর্যন্ত মাত্র ৩০ হাজার টাকা বেগুন বিক্রি করতে পেরেছেন। এমন চলতে থাকলে তাঁর উৎপাদন খরচও উঠবে না।
জামাল উদ্দিন আরও জানান, গত দুই সপ্তাহ আগে ৩০কেজি ওজনের এক ভাড় বেগুন বিক্রি হয়েছিল ৬০০ টাকায়। আর এখন বিক্রি হচ্ছে ৪/৫’শ টাকায়।
জামালের মতো মাথায় হাত পড়েছে মুরাদপুর ইউনিয়নের গোলাবাড়িয়া এলাকার কৃষক আবদুর শুক্কুরেরও। তিনি জানান, ৫০শতক জমিতে বাঁধাকপি ও ফুলকপি চাষ করেছেন। চাষ করতে ৪০হাজার টাকা খরচ হলেও এ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ২০ হাজার টাকার সবজি।
বাজারে আসা কৃষকেরা জানান, ভালো ফলন হলেও উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় ন্যায্য মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে না তারা। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে এক ভাড় বাঁধাকপি এক হাজার থেকে এক হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। তেমনি গত সপ্তাহে এক ভাড় মুলা বিক্রি হয়েছিল ৪’শ টাকায়, আর এখন দাম কমে দাঁড়িয়েছে তিন’শ টাকায়।চট্টগ্রাম শহর থেকে পাইকারি ক্রেতা মো. তোহিদুল আলম বলেন, সীতাকুণ্ডের সবজি দেশের অন্য জায়গা থেকে অনেক ভালো। এখানকার বরবটি ঢাকার কাওরান বাজারেও বিক্রি করা হয়।সবজি সরবরাহ বেশি পরিমাণে থাকায় সীতাকুণ্ডে শাকসবজির দাম দিন দিন কমতে শুরু করেছে।
বারৈয়াঢালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেহান উদ্দিন রেহান আজাদীকে জানান, সীতাকুণ্ডে এবার ভাল সবজি চাষ হয়েছে। কিন্তু উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা তাঁদের উৎপাদিত সবজির ন্যায্য মূল্য পায়নি।
সীতাকুণ্ড উপজেলা উদ্ভিদ ও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র নাথ জানান বলেন, প্রতিকূল আবহাওয়া মধ্যেও এবার সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে বাজারমূল্য সহনশীল পর্যায়ে থাকায় কৃষকরা কিছুটা হলেও স্বস্তিতে আছে।