ঘুরে আসুন চাঁদপুর থেকে

ঘুরে আসুন চাঁদপুর থেকে

সবারই জানা , ইলিশের জন্য যে চাঁদপুর বিখ্যাত । লঞ্চ ভ্রমণ করতে চাইলে কিংবা একদিনের ট্যুর করার ইচ্ছে থাকলে সেক্ষেত্রেও এটি দারুণ একটি স্থান। বন্ধু কিংবা পরিবারের মানুষদের নিয়ে একদিনের ট্যুরে ঘুরে আসতে পারেন চাঁদপুর। 

যেভাবে দিনে দিনে ঘুরে আসবেন- 

সকাল সাড়ে আটটার লঞ্চে উঠবেন সদরঘাট থেকে। বোগদাদীয়া-৭ ছাড়ে তখন। ফার্স্ট ক্লাস সিট ৩০০ টাকা করে। বন্ধুবান্ধব মিলে গেলে ১০০ টাকা দরে টিকেট কিনে ছাদে চলে যেতে পারেন। পুরো সময় আড্ডা দিতে দিতে কেটে যাবে। সাড়ে তিন ঘণ্টার ভেতরেই পৌঁছে যাবেন চাঁদপুর ঘাটে।

১২টায় পৌঁছে সেখানে হালকা নাস্তা করে নিতে পারেন। সিঙ্গারা/পুরি পাওয়া যায় গরম গরম।

সেখান থেকে অটোতে চলে যেতে পারেন কালিবাড়ি। অটো রিজার্ভ নিলে ১০০ টাকা নেবে। কালিবাড়ির সাধনা ফার্মেসির পাশে আছে "ওয়ান মিনিট আইসক্রিম"। চল্লিশ টাকা দরের আইসক্রিম আহামরি কিছু না হলেও ছোটোবেলার ভ্যানিলার ফ্লেভারে নস্টালজিক হতে পারেন। 

সেখান থেকে বের হয়ে কালিবাড়ি ব্রিজের গোড়ায় হেঁটে যাবেন (২ মিনিট লাগবে)। ব্রীজের গোড়া থেকে অটো ভাড়া করবেন বিখ্যাত শাহাবুদ্দীন স্কুল এন্ড কলেজ পর্যন্ত। রিজার্ভ নিলে ১৪০/১৫০ টাকা নেবে। যদি আপ ডাউনের জন্য রিজার্ভ করেন তাহলে ৩০০ টাকার বাইরেও একটু বেশি টাকা দেওয়া লাগবে ওয়েটিং চার্জ হিসেবে। শুক্রবার গেলে সেখানেই নামাজটা পড়ে নিতে পারবেন। মসজিদটা চমৎকার৷

চাঁদপুরঘাটের চিত্র; (ছবি- লেখক) 

সেখানে ঘোরার মতো তেমন কিছু নেই। ছবি তোলার জন্যই মূলত যায় সবাই। আমরাও ছবি তুলে বাই বাই বলে চলে এসেছি। সেখানে ঘুরে চলে আসবেন চাঁদপুর বড় স্টেশনে। বড় স্টেশনেই ভালো হোটেল আছে যেখানে পেট পুরে ভাত-ভর্তা-ইলিশ খেতে পারবেন। ডিমসহ ইলিশ খেতে চাইলে নিজেই গিয়ে ইলিশের পিস সিলেক্ট করে দিবেন।

সেখানে ভরপেট খেয়ে পাশেই চলে যাবেন বড় স্টেশন পার্কে। সেখানে একটা ইলিশের ভাস্কর্য আছে। ওটার সামনে পিছে দাঁড়ায়ে ছবি তুলে চলে যাবেন পার্কের শেষ মাথায়। সেখান থেকে তিন নদীর মোহনা দেখা যায়। আর এই মাথায় আসতে আসতে দেখবেন অদ্ভুত আকৃতির রক্তের ফোঁটার একটা ভাস্কর্য আছে। 

ওখানে কিছুক্ষণ বাতাস খেয়ে বোট ভাড়া করে ঘুরে আসবেন চর থেকে। চরে আসতে-যেতে বাতাস খেতে ভালো লাগবে। কিন্তু আগে থেকে প্রিপারেশন নেওয়া না থাকলে চরে নামতে পারবেন না। ওখানে বোট ভিড়ানোরই জায়গা নাই। নামতে হবে পানিতেই! তবে আসা-যাওয়ার পথে প্রকৃতির সজীবতা ভালো লেগেছে। ওখানে যাওয়া আসা আর আধা ঘণ্টা থাকার জন্য বোট ভাড়া করতে ৫০০ টাকা দিতে হয়। 

আমরা চরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলাম প্রায় ৪টায়। আমাদের ফিরতি লঞ্চ ছিল ৫টায়। তাই ওখানে দেরি না করে পটাপট কয়েকটা ছবি তুলে চাঁদপুর লঞ্চঘাটের দিকে রওনা দিয়ে দিয়েছি। যখন বোট লঞ্চঘাটে পৌঁছায় তখন বোগদাদীয়া-৭ অলরেডি ঘাট ছেড়ে মুভ করা শুরু করেছে। তাই আমরা বোট নিয়ে লঞ্চের গায়ে ঠেকিয়ে লাফ দিয়ে লঞ্চে উঠেছি। 

এরপর প্রায় চার ঘণ্টা লঞ্চের ছাদে বসে আকাশের চাঁদ-তারা দেখে গান গাইতে গাইতে ফিরে এসেছি ঢাকা। পথিমধ্যে সবচেয়ে মনোরম দৃশ্য ছিল সূর্যাস্ত। বেহেশতী একটা দৃশ্য ছিল ওটা।

যাইহোক, দিনশেষে বলতে পারি সবচেয়ে কম এফোর্টে এবং সবচেয়ে কম খরচে বন্ধু বান্ধব মিলে দারুণ একটা দিন কাটাতে চাইলে এভাবে ট্যুর প্ল্যান করতে পারেন। পুরো দিনের সব খরচ মিলিয়ে ৫ জনের টিমের খরচ হয়েছে জনপ্রতি ৭০০ টাকা করে।

জার্নিটাকে নিজেদের মতো করে উপভোগ করতে জানলে চাঁদপুরের ডে-ট্যুরটা বেশ উপভোগ্য। তবে আর কী, এই ইলিশের মৌসুমেই একদিন ঘুরে আসুন চাঁদপুর।