কর্ণফুলী গ্যাসে নিয়োগ কেলেঙ্কারি , ৩৮ কর্মকর্তার ৩২ জনই ভুয়া

জসীম চৌধুরী সবুজ ।।

কর্ণফুলী গ্যাসে নিয়োগ কেলেঙ্কারি , ৩৮ কর্মকর্তার ৩২ জনই ভুয়া
কর্ণফুলী গ্যাসে নিয়োগ কেলেঙ্কারি , ৩৮ কর্মকর্তার ৩২ জনই ভুয়া

কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে (কেজিডিসিএল) ৩৮ জন কর্মকর্তা নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির প্রমাণ পেয়েছে দুদক। আট বছর আগে ২০ জন কর্মকর্তার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ৩৮ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগের সময় অনেকে স্নাতক পাস না করলেও জাল সনদ নিয়ে চাকরি পেয়েছেন। জাল-জালিয়াতি ঢাকা দিতে গায়েব করে ফেলা হয়েছে নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র। দীর্ঘ তদন্ত শেষে দুদক চট্টগ্রাম কার্যালয় থেকে একটি প্রতিবেদন সম্প্রতি প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। যেখানে তুলে ধরা হয়েছে নিয়োগ কেলেঙ্কারির এই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
দুদক সূত্র জানায়, ২০১০ সালের ডিসেম্বরে সংবাদপত্রে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষ। এতে সিভিল, মেকানিক্যাল, কেমিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল ও অটোমোবাইল শাখায় সহকারী প্রকৌশলী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী, সাধারণ ও অর্থ বিভাগে সহকারী ব্যবস্থাপক ও সহকারী কর্মকর্তার ২০টি শূন্য পদে নিয়োগের কথা বলা হলেও তড়িঘড়ি করে ২০১১ সালের প্রথমদিকে ৩৮ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগকৃতদের মধ্যে মাত্র ছয়জন লিখিত পরীক্ষায় পাস করে। বাকি ৩২ জন লিখিত বা মৌখিক কোনো পরীক্ষায় পাস না করেও নিয়োগ পেয়েছেন স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে। এদের অনেকের সে সময় আবেদন করার মতো যোগ্যতাও ছিল না। স্নাতক পাস না করেও জাল সনদ দিয়ে তারা আবেদন করে সহজেই চাকরি পেয়ে যান কর্মকর্তা পদে। এদের একজন মহিউদ্দীন চৌধুরী তখন ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে অনার্সের শিক্ষার্থী ছিলেন। কিন্তু অনার্স পাস বলে সনদ জমা দিয়েছিলেন। দুদক টিম এই সনদকে জাল বলে চিহ্নিত করেছেন। উল্লেখ্য, নিয়োগপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তার পিতা আইয়ুব খান চৌধুরী তখন ছিলেন কর্ণফুলী গ্যাসের (কেজিডিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক। যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের ৩২ জনই নিয়োগের অযোগ্য ছিলেন। এমনকি আবেদন করার যোগ্যতা না থাকা সত্তে¡ও নিয়োগ পেয়েছেন দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে। নিয়োগপ্রাপ্তদের অধিকাংশই নওগাঁ, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও রাঙ্গুনিয়ার।
দুদক টিম এ নিয়ে তদন্তকালে এ সংক্রান্ত নিয়োগের কোনো নথিপত্র এবং লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার খাতা-নম্বরশিট কিছুই খুঁজে পায়নি। এমনকি নিয়োগ কমিটিতে কারা ছিলেন সেই তালিকাও পাওয়া যায়নি। তদারকি সংস্থা পেট্রোবাংলাও এ ব্যাপারে কোনো তথ্য-উপাত্ত জানাতে পারেনি। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট (বিআইএম)-এর কাছে লিখিত পরীক্ষার বিস্তারিত রিপোর্ট চাওয়া হলে তারাও তা দিতে পারেনি। জাল-জালিয়াতি ধামাচাপা দিতেই পরিকল্পিতভাবে এসব নথিপত্র গায়েব করে ফেলা হয়েছে।
কেজিডিএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খায়েজ আহমদ মজুমদার জানান, ৩৮ জন কর্মকর্তার নিয়োগ নিয়ে দুদকের তদন্ত চলছে। রিপোর্টের সুপারিশ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দুদক চট্টগ্রামের উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন জানান, চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে নির্দেশনা পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। - সময়ের আলো ।