সিবিএ নেতাদের সহযোগিতায় কর্ণফুলী গ্যাসের অবৈধ সংযোগ

সিবিএ নেতাদের সহযোগিতায় কর্ণফুলী গ্যাসের অবৈধ সংযোগ
সিবিএ নেতাদের সহযোগিতায় কর্ণফুলী গ্যাসের অবৈধ সংযোগ

নজরুল ইসলাম ।।

সম্প্রতি কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের কথিত সিবিএ নেতা ও গ্যাস শ্রমিক লীগের নাম ব্যবহার করে জড়িয়ে পড়ছে অবৈধ কর্মকান্ডে। সিবিএ ও শ্রমিক লীগের কথিত নেতারা গ্যাস কোম্পানিতে চাকুরী করলে আবার কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ছেন উক্ত প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারী ব্যবসায়, এমনকি জড়িয়ে যান ইয়াবা ব্যবসার সাথেও। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে এমডির উপর চাপ প্রয়োগ করে হাতিয়ে নেয় বিভিন্ন কাজ। তারা অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে মাসোহারা আদায়, টাকার বিনিময়ে সংযোগ দেয়া, ঠিকাদারী ব্যবসা, গ্যাসের বিল কমিয়ে দেয়াসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালককেও বদলীয় করার মত ক্ষমতা তারা রাখেন। সম্প্রতি কর্ণফুলী গ্যাস শ্রমিক লীগের সভাপতি খালেদ ছায়েফ উল্লাহ টিপু ইয়াবাসহ গ্রেফতার হওয়ার পর সিবিএ নেতাদের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। টিপুসহ কর্মচারীদের শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট মাদক, ইয়াবা অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়ার কাজে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। অনেকে গড়ে তোলেছে গাড়ি, বাড়ি, জমি-জমা বহু সম্পদের পাহাড়। কারো কারো বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ থাকায় দুদকের মামলা থাকলেও তারা দুর্নীতিতে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে।

সম্প্রতি সিবিএ নেতাদের সহযোগিতায় দেয়া অবৈধ গ্যাস লাইন ও রাইজারের ত্রুটি পরীক্ষায় মাঠে নেমে দেড় মাসে এক হাজার ৩০০টির মত অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। সাথে ২২ কোটি ৯৬ লাখ ৫১ হাজার ৮১৩ টাকা আদায় করা হয়। করোনাকালে সাড়ে পাঁচ মাস অভিযান বন্ধ থাকার পর গত ৬ সেপ্টেম্বর থেকে মাঠে নামে কেজিডিসিএল। কোম্পানির আওতাধীন ১২টি জোনে চারটি বিশেষ টিম গ্যাস লাইন ও রাইজারের ত্রুটি সরেজমিন পরীক্ষা করে। গত ৬  সেপ্টেম্বর থেকে ২৫ অক্টোবর কেজিডিসিএলের বিশেষ টিম ২০৪টি অভিযান পরিচালনা করে। আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প/ক্যাপটিভ, সিএনজি/ক্যাপটিভে ৭ হাজার ১২৯টি সংযোগ পরিদর্শন করে অবৈধ ১হাজার ২২৭টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এরমধ্যে আবাসিকে ১ হাজার ১৬৭টি, বাণিজ্যিকে ৪৮টি, শিল্প এলাকায় ১১টি ও সিএনজি  স্টেশনে একটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এই সব কাজে জড়িত রয়েছে কোম্পালি গ্যাস কোম্পানির বিক্রয় বিভাগের অসাধু কিছু কর্মচারী সিন্ডিকেট তারা হলেন ইয়াবাসহ গ্রেফতারকৃত ও কর্ণফুলী গ্যাস শ্রমিক লীগের সভাপতি খালেদ ছায়েফ উল্লাহ টিপু, কর্ণফুলী গ্যাস শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু জাবের খতিব, কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ সেলিম, কর্মচারী মোহাম্মদ শরীফ জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। কর্ণফুলী গ্যাস শ্রমিক লীগের নাম ব্যবহার করে মাদক, ইয়াবা, অনিয়ম দুর্নীতির ধান্ধাবাজির সাথে জড়িত থাকার ঘটনায় চট্টগ্রাম মহানগর শ্রমিক নেতা কমিশনার জাঙ্গাহীর আলম তাদের কর্মকান্ডে বিব্রত এবং তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ জানান। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি বখতিয়ার উদ্দীন খান বলেন, কর্ণফুলী গ্যাস শ্রমিক লীগের সভাপতি টিপু ইয়াবাসহ গ্রেফতার হওয়ার পর আমরা কমিটির কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলেছি। মূলত তারা শ্রমিক লীগের নাম বিক্রি করে প্রতিষ্ঠান থেকে বাড়তি ফায়দা নেয়ার জন্য করেছে কোনদিন কোন মিটিং মিছিলে আমরা তাদেরকে দেখিনি। কর্ণফুলী গ্যাস শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু জবের খতিব বলেন, গ্যাসের সংযোগ দেয়ার নামে টাকা আদায় করাসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে টিপু জড়িত রয়েছে বলে দাবি করেন, উনি এই সবে নাই বলে জানান।

এ বিষয়ে কর্ণফুলী গ্যাসের কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ সেলিম এ বিষয়ে কথা বলা অফিসের নিষেধ রয়েছে বলে জানান, আমি গোপন বিষয় নিয়ে কথা বলতে গেলে আমাকে বরখাস্ত করে দেয়ার সম্ভাবনা কথাও জানান।  এ বিষয়ে কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির প্রশাসন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক ফিরোজ খান, বলেন কিছু কর্মচারী অপরাধের সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে বিভিন্ন সময় আমাদের কাছে অভিযোগ আসে, অনেক সময় দেখা যায় তারা উপরের দিক থেকে মিমাংসা করে ফেলে আমাদের হাত পর্যন্ত আসে না।

কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির সচিব মো. নুরুল আবছার সিকদার জানান, অফিসের কোন কর্মচারী অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগ আসলে প্রথমে বিষয়টি প্রশাসন বিভাগ দেখে এরপর আমাদের কাছে আসে বলে তিনি জানান।