সাধ্যমতো চেষ্টা করছি আমরা , দুর্যোগ থেকে উত্তরণে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন : ডা. সেখ ফজলে রাব্বি

সাধ্যমতো চেষ্টা করছি আমরা , দুর্যোগ থেকে উত্তরণে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন : ডা. সেখ ফজলে রাব্বি
সাধ্যমতো চেষ্টা করছি আমরা , দুর্যোগ থেকে উত্তরণে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।  : ডা. সেখ ফজলে রাব্বি

রতন বড়ুয়া ।।

করোনা চিকিৎসার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেছেন, আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি। নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার সুবিধার বিষয়ে তিনি বলেন, আগে থেকেই তিনটি হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা ছিল। সমপ্রতি সিটি কর্পোরেশন ও বেসরকারি একটি উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতায় শহরে বেশ কয়েকটি নমুনা সংগ্রহ বুথ স্থাপন করা হয়েছে। বুথগুলোতে নমুনা সংগ্রহ কার্যক্রম চালু হয়েছে। এর মাধ্যমে নমুনা সংগ্রহ ও প্রদানের পরিসর অনেকটা বেড়েছে। প্রয়োজনে বুথের সংখ্যা আরো বাড়ানোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নমুনা পরীক্ষার সুবিধার বিষয়ে তিনি বলেন, পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে আমরা কাজ করছি। বালুচরার বিসিএসআইআর পরিদর্শন করে এসেছি। কিন্তু ওখানে পরীক্ষা চালু করতে গেলে নতুন করে ল্যাব করতে হবে। আবার জনবলও দিতে হবে। এই মুহূর্তে জনবলই আমাদের জন্য বিশেষ মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও টেকনোলজিস্ট নিয়োগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

উল্ল্লেখ্য, বিদ্যমান তিনটি ল্যাবে জনবল হিসেবে কেবল কিছু সংখ্যক টেকনোলজিস্ট দেয়া হলে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা আরো বাড়ানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন ল্যাব সংশ্ল্লিষ্টরা।

বিআইটিআইডি ল্যাবের ইনচার্জ ডা. শাকিল আহমেদ জানিয়েছেন, কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই জনবল বাড়ানোর বিষয়টি সংশ্ল্লিষ্টদের বলে আসছেন তিনি। জনবল পেলে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা আরো বাড়ানো যেত। চট্টগ্রামে বর্তমানে যে সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে, তা দশ গুণ বাড়ানো প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকারি-বেসরকারি যেসব প্রতিষ্ঠানে পিসিআর ল্যাব চালু সম্ভব, প্রয়োজনে সবখানেই এই পরীক্ষা চালু করতে হবে। অন্যথা চট্টগ্রামের পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হবে।

একইভাবে চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. শামীম হাসানও জনবল পেলে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা আরো বাড়ানো সম্ভব বলে জানান। ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে একটি মেশিনে পরীক্ষা কার্যক্রম চললেও আরো একটি মেশিন ল্যাবে আছে। কিন্তু স্বাস্থ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কিছু বলা হয়নি। অথচ, জনবল পেলে অতিরিক্ত মেশিনটিও চালু করতে সক্ষম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, সিভিল সার্জন জনবল সংকটের কথা বললেও ৪২ জন টেকনোলজিস্ট রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের। এর মধ্যে ১০ জন টেকনোলজিস্টকে প্রশিক্ষণও দিয়ে রাখে কর্পোরেশন। কিন্তু ল্যাবের জনবল সংকট নিরসনে বা নমুনা পরীক্ষার সুবিধা বাড়াতে সিটি কর্পোরেশনের কাছে জনবল চাওয়া হয়েছে বলে এ পর্যন্ত জানা যায়নি। সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরীও এমনটি জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমরা ১০ জন টেকনোলজিস্টকে ট্রেনিং দিয়ে রেখেছি। এখন স্থাপন করা ৬টি নমুনা বুথে ৬ জনকে নিয়োজিত করা হয়েছে। তবে ল্যাবগুলোতে কাজে লাগানোর জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ আমাদের কাছ থেকে টেকনোলজিস্ট চেয়েছে বলে আমার নলেজে নেই।

বিষয়টি নিয়ে সংশ্ল্লিষ্টদের সাথে আলাপ-আলোচনা করার কথা জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর পদক্ষেপ হিসেবে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব চালু হলেও সেখানে পদ্ধতিগত ক্রটি দেখা দিয়েছে। ক্রটি সারানোর কাজ চলছে। ওখানে দৈনিক ৫০০ পরীক্ষা করা যাবে বলে আশা করছি। ১০ জুন থেকে বেসরকারি ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের ল্যাবও চালু হচ্ছে। মা ও শিশু হাসপাতাল এবং সেভরণের ল্যাবও চালুর প্রক্রিয়ায় আছে। আশা করছি, কিছুদিনের মধ্যেই নমুনা পরীক্ষার সুবিধা আরো বাড়ানো যাবে। তবে নমুনা পরীক্ষার ওপর নির্ভরশীল না থেকে উপসর্গ দেখা দিলে নিজ থেকেই আইসোলেশনে (সম্পূর্ণ আলাদা) থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

চিকিৎসা সুবিধা বাড়ানোর পদক্ষেপের বিষয়ে সিভিল সার্জন জানান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের একশ শয্যার সাথে আরো ৫০ শয্যা যুক্ত হয়েছে। সেখানে ৫টির স্থলে ১০টি ভেন্টিলেটরসহ আইসিইউ শয্যা চালু হচ্ছে। করোনায় আক্রান্ত কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস সেবা চালু হচ্ছে।

তিনি বলেন, জেনারেল হাসপাতালেও আরো ৬০টি শয্যা যুক্ত হচ্ছে। হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে সোমবার ১৭ জন রোগী ভর্তি হন। হাসপাতালটির বেশ কয়টি আইসিইউ চালু হয়েছে। রেলওয়ে হাসপাতালও চালু হয়েছে। সেখানেও রোগী ভর্তি আছে। ২০ শয্যা নিয়ে বেসরকারি মা ও শিশু হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালু হয়েছে। মঙ্গলবার একশো শয্যার ইউএসটিসির বঙ্গবন্ধু হাসপাতাল চালু হচ্ছে। আড়াইশ আইসোলেশন শয্যার সিটি কনভেনশন হল আগামী ১৫ জুন চালু করা যাবে বলে আমরা আশা করছি। প্রয়োজন হলে পরবর্তীতে বন্দর হাসপাতালটিও প্রস্তুতের পরিকল্পনা রয়েছে। সব মিলিয়ে বলতে চাই, আমাদের সাধ্যমতো আমরা চেষ্টা করছি। এ দুর্যোগ থেকে উত্তরণে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।

তবে আগামীর পরিস্থিতি মোকাবেলায় অন্তত কয়েক হাজার শয্যার আইসোলেশন সেন্টার প্রস্তুত করা প্রয়োজন জানিয়ে জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান ও সদস্য সচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেছেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে অধিগ্রহণ করে করোনা রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হবে। আইসিইউ সুবিধা বাড়াতে হবে। আর জরুরি ভিত্তিতে কয়েক হাজার শয্যার আইসোলেশন সেন্টার গড়ে তুলতে হবে। নয়ত পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হবে।- আজাদী