সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের ১৫ সমিতির নিবন্ধন বাতিল, প্রশাসনকে আটকাতে প্রবেশ পথে গর্ত

সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের ১৫ সমিতির নিবন্ধন বাতিল, প্রশাসনকে আটকাতে প্রবেশ পথে গর্ত
সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের ১৫ সমিতির নিবন্ধন বাতিল, প্রশাসনকে আটকাতে প্রবেশ পথে গর্ত

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের ১৫টি সমবায় সমিতির নিবন্ধন বাতিল করেছে জেলা সমবায় সমিতি। অন্যদিকে আলীনগরে প্রশাসনের এই তৎপরতা ঠেকাতে ইতিমধ্যে আলীনগরে প্রবেশের প্রত্যেকটিতে গর্ত করে দেয়া হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে জড়িত থাকায় জেলা আইনশৃঙ্খখলা কমিটির সভার সিদ্ধান্তে সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের ১৫ সমিতির নিবন্ধন বাতিল করা হয়। গত ৩১ জুলাই জেলা সমবায় কার্যালয় থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি ইস্যু হয়।

নিবন্ধন হারানো ১৫ সমিতি হলো— জঙ্গল সলিমপুর ভূমিহীন সমবায় সমিতি, আলীনগর বহুমুখী সমবায় সমিতি লি., জঙ্গল সলিমপুর ছিন্নমুল বাস্তুহারা বহুমূখী সমবায় সমিতি, নুরনবী শাহ জনকল্যাণ সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লি., গোলপাহাড় ভূমিহীন সমবায় সমিতি লি., বি-বেঙ্গল সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লি., বৃহত্তর ছিন্নমূল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমবায় সমিতি, আশার আলো শ্রমজীবী সমবায় সমিতি লি., কাঁঠালতলা মানব কল্যাণ কর্মজীবী সমবায় সমিতি লি., মায়ের দোয়া কর্মজীবী সমবায় সমিতি লি., চেতনা জনকল্যাণ কর্মজীবী সমবায় সমিতি লি., জঙ্গল সলিমপুর জনকল্যাণ কর্মজীবী সমবায় সমিতি লি., মায়ের আঁচল শ্রমজীবী কল্যাণ সমবায় সমিতি লি.।

এদিকে প্রশাসনকে আটকাতে সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের স্বঘোষিত রাজা আলীনগরে প্রবেশের সড়ক কেটে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে ইয়াসিনের সহযোগীরা। সড়কের অন্তত ৬টি পয়েন্টে ৩ ফুট গভীর ও ৮ ফুট প্রশস্ত করে কাটা হয়েছে। গত ২ আগষ্ট জেলা প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযানের পর এখানে প্রবেশের কয়েকটি সড়ক কেটে গর্ত করা হয়েছে, যাতে সরকারি কর্মকর্তারা সেখানে যেতে না পারেন।

তবে আগেও ‘আলীনগর’ বাংলাদেশ থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন ছিল। দেশের কোন আইনই সেখানে কার্যকর ছিলনা। সেখানকার অধিবাসীরা চলত তাদের রাজা ইয়াসিন ও ফারুকের নিজস্ব আইনে। আলীনগরের প্রবেশের যেসব পথ ছিল সব পথেই সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করতেন তার নিজস্ব সিকিউরিটির সদস্যরা। বাইরের কোন লোক ভেতরে প্রবেশ করতে পারতেননা। ভেতর থেকেও কেউ বাইরে যেতে পারতেন না। বসবাসকারীদের কোন অতিথি আসলে তাদের ভোটার আাইডি কার্ড অথবা জন্ম নিবন্ধন কার্ড নিয়ন্ত্রণ কক্ষে জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। জমা দিতে হত সাথে আনা এন্ড্রয়েড ফোন। এখানে বসবাসকারীদেরও কেউ এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারতেন না। আর যারা এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা অর্থাৎ যারা জায়গা কিনে বসবাস করছেন তাদের ইয়াসিনের স্বাক্ষর করা বিশেষ পাস দেওয়া হত। পাস দেখিয়ে তারা ভেতর থেকে বাইরে ও বাইরে থেকে ভেতরে আসতেন। এখানের কেউ কখনো থানা বা অন্য কোথাও কোন অভিযোগ নিয়ে যেতে পারতেন না। সেটা যত বড় অপরাধ হোকনা কেন বিচার হত ইয়াসিন ও ফারুকের ‘আদালতে’।

আলীনগরের সাবেক এক বাসিন্দা জানান, ইয়াসিন নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সন্দ্বীপ, বাশঁখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের এনে এখানে আশ্রয় দেন। তাদের নিয়ে গড়ে তুলেন নিজস্ব বাহিনী। তাদের কয়েকটা দলে ভাগ করা হয়। তবে প্রত্যেক দলের কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন ইয়াসিনের ঘনিষ্ট আত্মীয়রা। ইয়াসিনের ভাই ফারুক, বোনের স্বামী মোখলেস, চার ভাগিনা আনোয়ার, হাসান, সোহেল ও আল আমিন ছিলেন এক একটা দলের কমান্ডার। এছাড়া দুই বছর আগে এখানে আনা হয় বেশ কিছু রোহিঙ্গাকেও। প্রায় ৩০জনের মতো রোহিঙ্গাকে রাখা হয়েছে আলীনগরের নিরাপত্তায়।

সম্প্রতি সরকার জঙ্গল সলিমপুরের খাস জমিতে বৃহৎ পরিকল্পনা করে। সেই অনুযায়ী তথ্যমন্ত্রীসহ কয়েকজন এমপি, সিটি মেয়র ও বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা একাধিকবার এই এলাকা পরিদর্শন করেন। তাতে ক্ষেপে গিয়ে গত ১৫ জুলাই সরকারি কর্মকর্তাদের সামনে স্থানীয় এক ইউপি সদস্যকে বুকে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে মারধর করে ইয়াসিন বাহিনী। এরপর আলোচনায় আসে ইয়াসিন ও তার ছোট ভাই ফারুক। এই ঘটনায় মামলা দায়ের হলে ১৮ জুলাই ইয়াসিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর দুই দফায় আলীনগরে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। প্রথম দিনের অভিযানে তিনটি মাটি কাটার স্ক্যাভেটর, ৬টি ড্রাম ট্রাক ও ১টি বড় ট্রাক জব্দ করে প্রশাসন। পরবর্তী অভিযানে ১৭৫টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয় এবং ৪’শ স্থাপনার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় ।

সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল আলম জানান, আমরা যেন আলীনগরের ভেতরে যেতে না পারি এ জন্য ইয়াছিন বাহিনী সেখানে প্রতিটি রাস্তায় ৬ ফুট গভীর করে গর্ত করে রেখেছে। ফলে আমরা ঐ গর্তের সামনে পর্যন্ত গাড়ি নিয়ে যাই। পরে হেঁটে সেখানে পরিদর্শন করি। সেখানে গিয়ে আমরা কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ পুরো আলীনগরের অবৈধ আনুমানিক ৪’শ স্থাপনার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিই। এছাড়া সেখানে আলীনগর ও ছিন্নমূল এলাকার সংযোগ স্থলে দুটি স্থান নির্ধারণ করি প্রশাসনের নিরাপত্তা চৌকি স্থাপনের লক্ষ্যে। শীঘ্রই সেখানে চৌকি স্থাপন হবে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষী কোন একটি বাহিনীর দ্বারা চৌকিটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এই চৌকি থেকে সেখানে সরকারি খাস জায়গা দখলসহ অন্যান্য অপরাধ ঠেকাতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া আলীনগরে এদিন আমরা ৪’শ একরের মতো খাস পাহাড়ি ভূমি চিহ্নিত করে সেখানে লাল পতাকা টাঙিয়েছি।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;