সীতাকুণ্ডের সব দোকানেই মিলছে গ্যাস সিলিন্ডার, দুর্ঘটনার আশঙ্কা

সীতাকুণ্ডের সব দোকানেই মিলছে গ্যাস সিলিন্ডার, দুর্ঘটনার আশঙ্কা
সব দোকানেই মিলছে গ্যাস সিলিন্ডার, দুর্ঘটনার আশঙ্কা

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি ।।

আইনের তোয়াক্কা না করেই সীতাকুণ্ডের যত্রতত্র চলছে ঝুকিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা। বিস্ফোরক অধিদপ্তরের সনদ ছাড়াই এ ব্যবসা ছড়িয়ে পড়েছে পুরো সীতাকুণ্ডে। আইন কানুন না মেনে শুধু মাত্র ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এ জ্বালানির ব্যবসা এখন অহরহ।

এসব দোকানে নেই আগুন নির্বাপক যন্ত্র। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে নেই প্রতিকারের ব্যবস্থা। জনবহুল কিংবা আবাসিক এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ এ ব্যবসার কারণে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। অনেক সময় প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সীতাকুণ্ডের ইদিলপুর, বায়তুশ শরফ, শেখপাড়া, পন্থিছিলা, বটতল, শিবপুর, শুকলাল হাট, বাড়বকুণ্ড, কুমিরা, ফৌজদারহাট,খুচরা এলপি গ্যাস বিক্রেতারা সংশ্লিষ্ট আইন না মেনেই ব্যবসাটি চালিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে ঝুঁকিপূর্ণ এ গ্যাস সিলিন্ডারের যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে না। আবার বিস্ফোরক অধিদপ্তরের সনদ সংগ্রহেরও তোয়াক্কা করছেন না।

এলপি গ্যাস প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর ডিলাররা বিস্ফোরক অধিদপ্তরের সনদ নিলেও খুচরা ব্যবসায়ীরা সিলিন্ডার মজুদে আইন অনুসরণ করছেন না। ব্যবসা পরিচালনার সাধারণ ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করলেও ১০টির বেশি সিলিন্ডারে আবশ্যকীয় সনদ তাদের নেই।

খুচরা এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের বেশির ভাগই আইনগত বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে অবগত। তার পরও তদারকির অভাবে ঝূঁকি জেনেও তারা সনদ ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছাড়াই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে লাইসেন্সপ্রাপ্তির দীর্ঘসূত্রতা এড়াতে এবং বিভিন্ন কোম্পানির ডিলারদের বিপণন কৌশলে প্ররোচিত হয়েও তারা আইন অনুসরণ থেকে পিছিয়ে আসছেন।

বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিস্ফোরক অধিদপ্তরের সনদ ছাড়াই স্থানভেদে ৩০ থেকে শুরু করে শতাধিক এলপি গ্যাস সিলিন্ডার দোকানে মজুদ করেছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। এসব দোকানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এলপি গ্যাসবোঝাই সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে।

দেখা গেছে, কোথাও কোথাও ব্যবসায়ীরা বিস্ফোরক অধিদপ্তরের সনদের আবেদন করলেও সেটি পাওয়ার অপেক্ষা না করেই দোকান ভাড়া নিয়ে সিলিন্ডার বেচাকেনা শুরু করেছেন। বিভিন্ন স্থানে চা দোকান, মুদি দোকান, কুলিং কর্ণার, হার্ডওয়্যার-সামগ্রী বিক্রেতা, এমনকি সিমেন্ট ও মনিহারি-সামগ্রীর দোকানেও এলপি গ্যাস বিক্রি চলছে।

দেশে সাধারণত উৎপাদনকারীর কারখানা থেকে ডিলার হয়ে খুচরা ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সরাসরি ভোক্তাদের কাছে এলপি গ্যাসপূর্ণ সিলিন্ডার পৌঁছায়। এক্ষেত্রে উৎপাদনকারীরা ডিলারদের কাছে সিলিন্ডার সরবরাহের ক্ষেত্রে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের সনদের বিষয়টি যাচাই করে থাকেন। কিন্তু সরবরাহ চেইনে সাধারণত এর পর আর তদারকি হয় না। যদিও আইন অনুযায়ী ১০টির বেশি এলপি গ্যাসপূর্ণ সিলিন্ডার বা গ্যাসাধার রাখলে যেকোনো ব্যবসায়ীর বিস্ফোরক অধিদপ্তরের সনদ নেয়া বাধ্যতামূলক। বিস্ফোরক আইন ১৮৮৪-এর ‘দ্য এলপি গ্যাস রুলস ২০০৪’-এর ৬৯ ধারার ২ বিধিতে ‘লাইসেন্স ব্যতীত কোনো ক্ষেত্রে এলপিজি মজুদ করা যাবে’ তা উল্লেখ আছে। বিধি অনুযায়ী, ‘১০ (দশটি) গ্যাসপূর্ণ সিলিন্ডার মজুদকরণে লাইসেন্সের প্রয়োজন নেই’। অর্থাৎ ১০টির বেশি গ্যাসপূর্ণ সিলিন্ডার মজুদের ক্ষেত্রে লাইসেন্স নিতে হবে। একই বিধির ৭১ নং ধারায় বলা আছে,আগুন নিভানোর জন্য স্থাপনা বা মজুদাগারে যথেষ্ট পরিমাণে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জাম মজুদ রাখিতে হইবে। ’

উল্লেখ্য ১০টির বেশি এলপি গ্যাসপূর্ণ গ্যাসাধার রাখলে যেকোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলকভাবে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের সনদ নিতে হবে। সনদ ছাড়া ব্যবসা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং দেশের অনেকেই তা মানছে না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া জরুরী।

ব্যবসায়ীদের আইন অবমাননার ঝুঁকি প্রসঙ্গে সীতাকুণ্ডের একজন আইনজীবী বলেন, এলপি গ্যাস এক ধরনের দাহ্য পদার্থ। এ ধরনের পণ্য সংরক্ষণের জন্য বিশেষ গুদামঘরের প্রয়োজন হয়। তা না হলে সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বের হয়ে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। এ আইন অমান্য করলে যেকোনো ব্যবসায়ী অনুন্য দুই বছর এবং অনধিক পাঁচ বছরের জেল এবং অনধিক ৫০ হাজার টাকায় দন্ডিত হবেন এবং অর্থ অনাদায়ী থাকলে অতিরিক্ত আরো ছয় মাস পর্যন্ত কারাদন্ডের বিধান রয়েছে।